আর মাত্র এক মাসের মধ্যেই পরমাণু বোমা তৈরির পথে ইরান
পশ্চিমা দেশসমুহ ও তাদের মিত্র ইসরায়েলের নাশকতা ও অন্তর্ঘাতমূলক হামলা থামাতে পারেনি ইরানের পারমাণবিক শক্তি গবেষণা। বরং এসবের ফলে আরও গতি পায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের চেষ্টা। এখন দেশটি পরমাণু বোমা তৈরির মতো যথেষ্ট ইউরেনিয়াম জ্বালানি উৎপাদনে, আর মাত্র এক মাসেরও কম সময় পিছিয়ে আছে।
তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ এ মাইলফলক অর্জনের ঘটনায় শঙ্কিত যুক্তরাষ্ট্র ও তার আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক মিত্ররা। পরিবর্তিত বাস্তবতায় ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত জেসিপিওএ চুক্তির শর্তাবলী পরিবর্তন করে, পুনরায় এ পরমাণু অস্ত্র সংবরণ চুক্তি করতে হবে বলে মনে করছে তারা।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী রাষ্ট্রটির পরমাণু কার্যক্রম মনিটরিংয়ে জড়িত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শক দল জানায়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বোমা তৈরির জন্য দরকারি মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে ইরান, ফলে আর মাত্র একমাস বা তার কম সময়ের মধ্যে একটি পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা জাতিসংঘের গোপনীয় এ আভাস সূচক প্রতিবেদনটি দেখেছেন। এনিয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। তবে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে আলোচনায় তারা স্বীকার করেন, তারা ভেবেছিলেন এমন সক্ষমতা অর্জনে ইরানের আরও কয়েক মাস লাগবে। অর্থাৎ, আইইএ প্রতিবেদন তাদের বিস্মিত করেছে।
২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব শক্তিগুলোর জেসিপিওএ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির শর্তানুসারে পরমাণু অস্ত্র গবেষণা থেকে বিরত থাকার শর্তে শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার উপযোগী পরমাণু শক্তি গবেষণার ছাড় পায় তেহরান। বিনিময়ে দেশটির ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে যুক্তরাষ্ট্র।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে স্বাক্ষরিত জেসিপিও'র আওতায় বাধ্য হয়েই নিজেদের সমৃদ্ধ করা ইউরেনিয়াম জ্বালানির ৯৭ শতাংশ দেশের বাইরে পাঠাতে বাধ্য হয় ইরান। ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেসময় বলেছিলেন, এরপর 'ব্রেকআউট' সক্ষমতা বা পরমাণু বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত ইউরেনিয়াম জ্বালানি সমৃদ্ধকরণে ইরানের অন্তত এক বছর সময় লাগবে।
ইরান চুক্তিটি মেনে চলায় দীর্ঘদিন অস্ত্র তৈরির মাত্রায় উৎপাদন শুরু করেনি। কিন্তু, ২০১৮ সালে ওবামার উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেসিপিও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন। তখন থেকেই ধীরে ধীরে পুনরায় বোমা তৈরির মতো জ্বালানি উৎপাদনে মনোনিবেশ করেন ইরানি বিজ্ঞানীরা। তাদের সে প্রচেষ্টা সফল হয়েছে বলেই প্রমাণ করে আইএইএ'র সাম্প্রতিক প্রতিবেদন।
জাতিসংঘের সংস্থাটির দেওয়া প্রতিবেদন বিশ্লেষণের বিশেষজ্ঞ বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি। গত সোমবার প্রকাশিত এক রিপোর্টে সংস্থাটি উপসংহার টানে যে, চলতি বছরের পুরো গ্রীষ্মকালের সময়টা ইরান ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যয় করেছে, যদিও এ পর্যায়ের ইউরেনিয়াম বোমা তৈরির জন্য দরকারি মাত্রার চেয়ে কমই ছিল; তবে এই মজুদ হাতে থাকায় ইরান চাইলে আর মাত্র এক মাসের মধ্যে প্রথম বোমা তৈরির জন্য দরকারি ৯০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধকরণ শেষ করতে পারবে। আর দ্বিতীয় বোমা তৈরির জন্য জ্বালানি উৎপাদনে তিন মাসের কম সময় লাগবে দেশটির।
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী হবেন বলে ধারণা করেছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। কিন্তু, রইসি উল্টো চাপ প্রয়োগের কৌশল বেঁছে নিয়েছেন বলে তারা এখন মন্তব্য করেছেন।
- সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস