স্পেসএক্সের নভোযানে মহাকাশ ভ্রমণে যাচ্ছেন শখের নভোচারীরা
মহাকাশে পাড়ি জমাচ্ছেন চার 'শখের নভোচারী'। এর মাধ্যমে নতুন মাইলফলক ছুঁতে চলেছে মহাকাশ পর্যটন।
টাকা খরচ করে টিকিট কিনে মহাকাশে ঘুরতে যাবেন তারা। এ ভ্রমণের খরচ জুগিয়েছেন মার্কিন ধনকুবের ব্যবসায়ী জ্যারেড আইজ্যাকম্যান। তিনজন সঙ্গী নিয়ে মহাকাশে যাবেন তিনি।
আইজ্যাকম্যানের সঙ্গী হবেন একজন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, একজন বিজ্ঞান শিক্ষক ও একজন ডাটা অ্যানালিস্ট। তারা চারজন তিন দিন পৃথিবীকে ঘিরে চক্কর দেবেন।
শখের চার নভোচারী আশা করছেন, তাদের এই অভিযান থেকে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবেন। এই মহাকাশ সফরের পেছনে আরেকটি উদ্দেশ্য আছে আইজ্যাকম্যানের—শিশুদের ক্যান্সারের ওষুধ তৈরির জন্য তহবিল তোলা। এই মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে ইনস্পিরেশন৪।
চার মহাকাশ পর্যটক মহাশূন্য ভ্রমণে যাবেন ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের তৈরি নভোযান 'স্পেসএক্স ড্রাগন'-এ চেপে। ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় ফ্যালকন-৯ রকেটে করে মহাশূন্যে পাড়ি জমাবে ড্রাগন।
নভোযানটি ৫৭৫ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠবে। অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) থেকে ১৫০ কিলোমিটার ওপরে উঠবে ড্রাগন। সেখান থেকে নভোচারীরা বড় একটি গম্বুজাকৃতির কাচের জানালা দিয়ে পৃথিবী দেখবেন।
ড্রাগনের যে অংশ আইএসএসে নোঙর করে, সেখানে বসানো হয়েছে এই কাচের গম্বুজ। এই ভ্রমণে ওই অংশের দরকার পড়বে না।
স্পেসএক্স ড্রাগন স্প্ল্যাশডাউন, অর্থাৎ সমুদ্র-অবতরণ করবে আটলান্টিক মহাসাগরে।
ইনস্পিরেশন৪-এর চার নভোচারীর বিশ্বাস, মহাকাশ-পর্যটন পৃথিবীতে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
এ অভিযানের দলপতি, ৩৮ বছর বয়সি জ্যারেড আইজ্যাকম্যান শিফট৪ পেমেন্টস-এর প্রধান নির্বাহী। ক্রেডিট কার্ড ট্রানজেকশনের জন্য টিনেজ বয়সে এ কোম্পানি খুলেছিলেন তিনি।
এই সফরের মাধ্যমে টেনেসির সেইন্ট জুড চিল্ড্রেনস রিসার্চ হসপিটালের জন্য ২০ কোটি ডলারের তহবিল তুলতে চান আইজ্যাকম্যান। এ কারণে হাসপাতালটির চিকিৎসক হেইলে আর্সেনোকে ভ্রমণসঙ্গী করেছেন তিনি।
ইনস্পিরেশন৪-এর আরেক পর্যটক ৫১ বছর বয়সি ড. সিয়ান প্রক্টর। তিনি একজন ভূবিজ্ঞানী। ২০০৯ সালে নাসার নভোচারী হওয়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু বাছাইপর্বের একেবারে চূড়ান্ত রাউন্ডে বাদ পড়েন। শিল্পী ও উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের দক্ষতা দেখিয়ে তবেই এই ভ্রমণে আইজ্যাকম্যানের সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।
মার্কিন ধনকুবেরের তৃতীয় ও সর্বশেষ সফরসঙ্গী ৪২ বছর বয়সি ক্রিস সেমব্রস্কি। মার্কিন বিমান বাহিনীর সাবেক সদস্য সেমব্রস্কি এখন মহাকাশ কোম্পানি লকহিড মার্টিনে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। সেইন্ট জুডে অনুদান দিয়েছিলেন তিনি। সেই সুবাদেই লটারির মাধ্যমে তিনি ইনস্পিরেশন৪-এ জায়গা পান।
সেমব্রস্কি অবশ্য নিজে লটারি জেতেননি, তার এক বন্ধু জিতেছিলেন। সেই বন্ধু নিজে সরে দাঁড়িয়ে সেমব্রস্কিকে এই মিশনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেন।
স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে জ্বালানি হিসেবে অতি-পরিশোধিত কেরোসিন ব্যবহৃত হয়, যা গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন-ডাইঅক্সাইড উৎপাদন করে। এছাড়াও এ রকেট নাইট্রোজেন অক্সাইড নিঃসরণ করে, যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়াতে অবদান রাখে।
ছয় মাস আগে থেকে আইজ্যাকম্যান, আর্সেনো, প্রক্টর ও সেমব্রস্কি নভোচারী হওয়ার জন্য একটি ক্র্যাশ কোর্স করছেন। স্পেসএক্সের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক স্পেসএক্সের আরও অনেক পর্যটককে বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশভ্রমণে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের চেষ্টা অনেকাংশেই সফল। ইতিমধ্যে টেক্সাসের স্টার্ট-আপ অ্যাক্সিয়োম স্পেস আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পর্যটক নিয়ে যাওয়ার জন্য ড্রাগনের চারটি ফ্লাইটের বুকিং কিনে ফেলেছে।
- সূত্র: বিবিসি