বিশ্বের প্রথম কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাল জাপান
বিশ্বে প্রথমবারের মতো কাঠের প্যানেলওয়ালা একটি স্যাটেলাইট [উপগ্রহ] মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) জাপানের গবেষকদের তৈরি এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহ অভিযানে কাঠ ব্যবহারের উপযোগিতা পরীক্ষার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এটি পাঠানো হয়েছে।
কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয় এবং আবাসন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সুমিতোমো ফরেস্ট্রির (১৯১১.টি) তৈরি 'লিগনোস্যাট' নামের স্যাটেলাইটটি স্পেসএক্সের একটি মিশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠানো হবে।
পরবর্তীতে এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মাইল) উচ্চতায় কক্ষপথে ছেড়ে দেওয়া হবে।
স্যাটেলাইটটির নাম 'লিগনোস্যাট', যা লাতিন ভাষায় কাঠের জন্য ব্যবহৃত শব্দ। ভবিষ্যতে মহাকাশ অনুসন্ধানে ধাতুর বদলে নবায়নযোগ্য উপাদানগুলো ব্যবহার সম্ভব কি না- তা অনুসন্ধানে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
স্পেস শাটলে চড়ে কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষের মহাকাশ কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা করা নভোচারী তাকাও দোই বলেন, 'কাঠ দিয়ে আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করতে পারব, মহাকাশে চিরকাল বসবাস করতে পারব এবং অন্যান্য কাজও করতে পারব।'
চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহে গাছ লাগানো এবং কাঠের বাড়ি তৈরির ৫০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে; দোইয়ের দল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কাঠকে মহাকাশ-গ্রেড উপকরণ প্রমাণ করতে তারা একটি নাসা-সার্টিফাইড কাঠের স্যাটেলাইট তৈরি করবে।
কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট সায়েন্সের অধ্যাপক কোজি মুরাতা বলেন, '১৯০০ সালের শুরুর দিকে উড়োজাহাজগুলো কাঠের তৈরি হতো। তাই একটি কাঠের স্যাটেলাইটও সম্ভব।'
মুরাতা আরও বলেন, 'পৃথিবীর তুলনায় মহাকাশে কাঠ বেশি টেকসই হবে, কারণ সেখানে পানি বা অক্সিজেনের মতোএমন কোনো উপাদান নেই, যা কাঠকে নষ্ট বা দগ্ধ করতে পারে।'
গবেষকরা বলছেন, বাতিল হওয়ার পর কাঠের স্যাটেলাইট পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমাতে সহায়তা করবে।
দোই বলেছেন, মহাকাশে ধ্বংস হওয়া এড়াতে, বাতিল উপগ্রহগুলোকে অবশ্যই বায়ুমণ্ডলে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়। প্রচলিত ধাতুর তৈরি উপগ্রহগুলো পুনরায় বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড কণা তৈরি করে। তবে সেই তুলনায় কাঠের উপগ্রহগুলো ধ্বংসের সময় কম দূষণ হবে।
তিনি বলেন, 'ভবিষ্যতে ধাতুর তৈরি উপগ্রহ নিষিদ্ধ হতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি সফলভাবে আমাদের তৈরি প্রথম কাঠের স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করতে পারি, তবে আমরা এটি ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের সাহায্যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছাতে চাই।
কাঠের নামে তৈরি স্যাটেলাইট
'হোনোকি' নামের জাপানের এক ধরনের ম্যাগনোলিয়া গাছ তরবারির খাপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ১০ মাস পরীক্ষার পরে গবেষকরা দেখেছেন, মহাকাশযানের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত এই কাঠ।
স্ক্রু বা গাম ছাড়া ঐতিহ্যবাহী জাপানি কারুশিল্প কৌশল ব্যবহার করে হোনোকি দিয়ে 'লিগনোস্যাট' নির্মাণ করা হয়েছে। উৎক্ষেপণের পর লিগনোস্যাট ছয় মাস কক্ষপথে থাকবে।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি