পানশির থেকে পালিয়ে আসা আফগানদের ভাষ্য: ‘যে কোনো সময় সবকিছু বদলে যেতে পারে’
আফগানিস্তানের উত্তরপশ্চিমে অবস্থিত পানশির প্রদেশ দখল নেওয়ার পর থেকেই সেখানে তালেবানের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ উঠছে। চলতি মাসের শুরুতে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাজারো উপত্যকাবাসী পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
ইসলামপন্থী তালেবানের বিরুদ্ধে শেষ প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল, এ পানশির প্রদেশ থেকেই।
ছয়দিন আগে উপত্যকা ছেড়ে পালাতে সফল হওয়া সাবেক আফগান সরকারের এক কর্মকর্তা বলেছেন, 'সেখানে পাশের গ্রামে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সেটাও মানুষ জানতে পারছে না।' তালেবানের প্রতিহিংসার ভয়ে ওই কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে একথা বলেছেন। আল জাজিরা প্রতিবেদককে সাক্ষাতকার দেওয়া অন্যরাও নিজ পরিচয় গোপন রাখার শর্ত দেন।
প্রায় এক মাস হলো পানশিরের দুর্গম পাহাড় ও বিস্তৃত উপত্যকা অঞ্চলে কী হচ্ছে, তাঁর কিছু জানতে পারছে না বহির্বিশ্ব। তার আগে আফগানিস্তানের ক্ষুদ্রতম এ প্রদেশ অধিকারে প্রচণ্ড সংঘাতে জড়ায় তালেবান ও আহমেদ মাসুদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল রেজিস্টেন্স ফোর্স- এনআরএফ।
এখনও সেখানে লড়াই চলছে।
দেশ ছেড়ে পালানো হাজার হাজার আফগান এখান থেকে গড়ে ওঠা প্রতিরোধে আস্থা রেখেছিলেন। তবে পানশিরের এক লাখ বাসিন্দা তাদের জনপদ্গুলো কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল- তা কাউকে বলার সুযোগ পাননি।
আগস্টের শেষে পানশিরে হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ওই অঞ্চলের সব মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তালেবান। এতে কার্যত পুরো বিশ্বের পাশাপাশি, একে-অপর থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন দুর্গম অঞ্চলটির বাসিন্দারা।
এরপর প্রায় এক সপ্তাহকাল প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ৬ সেপ্টেম্বর পানসির দখলের ঘোষণা দেয় তালেবান। তবে এরপরও লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় এনআরএফ।
এনআরএফ নেতা আহমেদ মাসুদ প্রখ্যাত মুজাহেদিন কমান্ডার আহমেদ শাহ মাসুদের ছেলে। এনআরএফ-এর প্রতি রয়েছে উপত্যকাবাসীর একান্ত সমর্থন। পিতা-পুত্র দুজনকেই তারা ভালোবাসেন। কিন্তু, তালেবান বিরোধী লড়াই চলাকালে তাদের প্রদেশটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নিত্যপণ্যের জন্য বহিঃউৎস থেকে পরিবহন ও আয়ের জন্য কাবুল থেকে আসা পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল পানশিরের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়।
লড়াইয়ের চরম পর্যায়ে তালেবান পানশিরের প্রবেশ পথগুলোয় শিপিং কন্টেইনার দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নেয়। তালেবানের অনুমতি ছাড়া সেখানে কারো প্রবেশ বা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।
'যেকোনো মুহূর্তে সবকিছু বদলে যেতে পারে'
তালেবান ও এনআরএফ- এর মধ্যে এখনও প্রচণ্ড সংঘাত চলমান রয়েছে বলে উল্লেখ করে ওই সরকারি কর্মকর্তা জানান, 'যেকোনো মুহূর্তে সবকিছু বদলে যেতে পারে।' এর মাধ্যমে তালেবান নিয়ন্ত্রণ হারানোর প্রতিই ইঙ্গিত দেন তিনি।
তাঁর মতে, পানশির দুর্গম পাহাড়, গিরিখাঁদের কারণে মূল আফগানিস্তান থেকে ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন। তাঁর ওপর প্রযুক্তিগত সংযোগহীনতার কারণে স্থানীয় মানুষ যুদ্ধেলিপ্ত দুই পক্ষের শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারছেন না।
কিন্তু, এনআরএফ বলছে, সারাদেশ থেকে আসা হাজার হাজার তালেবান বিরোধী যোদ্ধা তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। এর আগে তারা প্রায় দেড় হাজার তালেবান সদস্যকে বন্দী করার দাবিও করেছে।
পালিয়ে আসা স্থায়ীয় বাসিন্দাদের অনেকে আল জাজিরাকে বলেন, পুরো দেশ থেকে ঠিক কতজন তালেবান যোদ্ধা পানশির অভিযানে এসেছে, সেটা তারা বুঝতে পারছেন না। সংযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে উভয় পক্ষের দাবীকৃত যোদ্ধা সংখ্যার সত্যাসত্য যাচাই করাও অসম্ভব।
সরকারি ওই কর্মকর্তা বলেন, 'পানশিরে যে কী হচ্ছে, কেউই তা সঠিকভাবে বলতে পারছে না।
এদিকে কাবুল ছেড়ে পালিয়ে এসে পানশিরে আশ্রয় নেওয়া সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহর বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকর ভূমি মাইন অপসারণে বাধ্য করার অভিযোগ তুলেছে তালেবান। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো তালেবানের বিরুদ্ধেও উপত্যকায় অকাতরে হত্যার অভিযোগ এনেছে।
তবে বরাবরের মতো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে তালেবান।
তালেবানের ভ্যানগার্ড বলে পরিচিত হাক্কানি নেটওয়ার্কের অন্যতম নেতা আনাস হাক্কানি বলেছেন, 'কিছু দেশ পানশিরে তালেবানের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ তুলেছে, যার কোন প্রমাণই নেই।'
- সূত্র: আল জাজিরা