যুক্তরাষ্ট্রে মোদি: কোয়াডে ভারতের কৌশলে যেভাবে সম্পৃক্ত থাকবে চীন
গত দেড় বছরের অধিকাংশ বৈঠকের মতো কোয়াডের প্রথম শীর্ষ সম্মেলনটিও ছিল ভার্চুয়াল।
এ বছর মার্চে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলনে কোয়াডের চার সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের নেতারা ২০২২ সালের মধ্যে এশিয়ার দেশগুলোতে ১০০ কোটি করোনার টিকা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলেন।
আজ (শুক্রবার ) প্রথমবারের মতো সামনাসামনি বৈঠতে বসতে যাচ্ছেন কোয়াড নেতারা। সম্প্রতি ঘোষিত এক নতুন বৈশ্বিক যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে চলমান বিতর্কের মাঝেই আজ ওয়াশিংটন ডিসিতে মিলিত হবেন এই চার রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানরা।
এদিকে, অকাস নামে নতুন এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া, এবং এর অধীনে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো পরমাণু চালিত সাবমেরিন তৈরিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে যুক্তরাষ্ট্র।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে অকাস কীভাবে কোয়াডকে প্রভাবিত করবে?
উভয় ফোরামের নেতারা কখনো সরাসরি চীনের কথা উল্লেখ না করলেও এটি বেশ ভালোভাবেই দৃশ্যমান যে, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবেলা করতেই গড়ে উঠেছে এ দুটি ফোরাম।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সহচর কোয়াড নেতাদের সঙ্গে দেখা করার সময় চীনের ব্যাপারে বিশেষভাবে সচেতন থাকবেন। এই ফোরামের মধ্যে ভারতই একমাত্র দেশ যাদের চীনের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এবং সীমান্তে এই দুই দেশের তিক্ততারও শেষ নেই। গত বছর এমন এক সময়ে ভারত-চীন সীমান্তে দুই দেশের সেনারা রক্তক্ষয়ী এক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সব ধরনের বহুপাক্ষিক ফোরামেই বেশ আগ্রহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করছে ভারত, যার কয়েকটিতে চীনও ছিল। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, অকাস ও কোয়াড- উভয় ফোরামের অস্তিত্ব থেকে সুফল লাভ করবে ভারত।
কন্ট্রোল রিস্ক কনসালটেন্সির দক্ষিণ এশিয়া অংশের পরিচালক প্রত্যুষ রাও বলেন, কোয়াডের বৈঠকে বাকি তিন অংশীদারদের সঙ্গে তাদের সম্মিলিত উদ্বেগগুলো নিয়ে একটি যৌথ বিশ্বদর্শন গড়ে তুলতে পারে দিল্লি।
রাও আরও জানান, অকাস ও কোয়াড- এই দুটি ফোরাম ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারে একে অপরের পরিপূরক হবে।
কোয়াড অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও ফাইভ-জি অবকাঠামোর মতো উদীয়মান প্রযুক্তিগুলো ভাগাভাগি করা নিয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করার ঘোষণা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টার থিংক-ট্যাঙ্কের উপ-পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, এই ফোরাম ইতোমধ্যেই দেখিয়েছে তারা কোভিডের টিকা তৈরি এবং বিতরণের জন্য একত্রিত হওয়ার মতো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারে। 'ভারত এই ধরনের পদক্ষেপে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে, কেননা এ ধরনের সিদ্ধান্ত চীনকে খুব একটা উত্তেজিত করবে না,' বলেন তিনি।
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, কোয়াডের কাঠামোর মধ্যে ভারতের জন্য কিছু গভীর সমস্যা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত মহাসাগরে ভারতের নিজস্ব চ্যালেঞ্জ এবং চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে চীনের বিনিয়োগ নিয়ে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই অস্বস্তিতে রয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে আফগানিস্তানে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও দিল্লিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
তাহলে ভারতের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোর ব্যাপারে কতটা কাজে আসবে কোয়াড?
সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক জিতেন্দ্র নাথ মিশ্র বলেন, ভারতের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত তাদের সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষা করা। 'ভারতকে কিছু কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে হবে। ভারতের বিস্তৃত সমুদ্র পাড়ায় চীন বহু বছর ধরে যেভাবে তাদের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে, সেখানে ভারতের স্বার্থ রক্ষায় এই ফোরাম কীভাবে সাহায্য করতে পারে সেটি জিজ্ঞেস করতে হবে,' বলেন তিনি।
কোয়াড সম্মেলনের বাইরে, শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বৈঠকের সুযোগ পাবেন মোদি। বৈঠকে পরস্পরকে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ পাবেন এই দুই নেতা।
মোদি ও বাইডেন- কেউই হয়তো চীন সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু বলবেন না। তবে তারা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এবং আফগানিস্তানে বেইজিংয়ের দৃঢ়তা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
তালেবানের সম্মতিতে জৈশ-ই-মহম্মদ ও লস্কর-ই-তাইয়িবার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা করতে যেন আফগানিস্তানকে ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আশ্বাস চাইবে ভারত। দুই দেশ অন্যান্য ক্ষেত্রেও নিজেদের সহযোগিতা চাইবে বলে মনে করছে রাও। যেমন গ্যাভি ও কোভ্যাক্স টিকা উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য মার্কিন টিকার মজুদ ও ভারতের উৎপাদন ক্ষমতার সমন্বয় করতে চাইবে দুই রাষ্ট্র।
'তারা নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিতে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ইস্যুতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আলোচনা করবেন,' যোগ করেন রাও।
-
সূত্র: বিবিসি