সরকারি দপ্তরে ছাত্রলীগের হামলা-ভাঙচুর
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুরের পর তালাবদ্ধ করে রাখা হয় অফিস সহকারী শামসুজ্জামান খানকে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাধবী রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে তালা ভেঙ্গে শামসুজ্জামানকে উদ্ধার করেন।
সরকারিভাবে জনশুমারির জন্য ছাত্রলীগ নেতাদের সুপারিশ করা ব্যক্তিদের না নেওয়ায় এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারী) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ভবনের নিচতলায় পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কক্ষে এ হামলা- ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা টানিয়ে দেয়ার পর ওই কার্যালয়ের সামনে যান উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডাকুয়া। এসময় সহ সভাপতি আলকাস হোসেন, দেলোয়ার হোসেন ও ছাত্রলীগ কর্মী মো. সোহেল সহ ১০ থেকে ১৫ জন সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ছিলেন। এক পর্যায়ে সাইফুল ইসলাম ডাকুয়া ও সহযোগীরা নোটিশ বোর্ডে টানানো নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা ছিড়ে ফেলেন এবং অফিস কক্ষের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। পরে অফিস সহকারী শামসুজ্জামানকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জনশুমারীর জন্য বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন এবং পৌর শহরের গণনাকারী ও সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নিয়োগপ্রাপ্ত ৩০০ জনের তালিকা টানিয়ে দেয়া হয় পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে। ৪ দিনের জনশুমারীর জন্য গণনাকারী ও সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়ার জন্য ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তাদের পছন্দমত বেশ কয়েকজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করেছিলেন। তবে নিয়োগ তালিকায় তাদের নাম না দেখে এ হামলা ও ভাঙচুর চালান তারা।
অফিস সহকারী শামসুজ্জামান জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অফিসে ঢুকে কর্মকর্তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এসময় বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা বরিশাল সদর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা অফিসে ছিলেন না। তাকে না পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। পরে তারা অফিসের বাইরে তালা দিয়ে চলে যান।
তিনি আরও জানান, পরে ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ভাঙচুর করে কয়েকজন বেরিয়ে যাচ্ছেন। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডাকুয়া, সহ সভাপতি আলকাস হোসেন, দেলোয়ার হোসেন ও ছাত্রলীগ কর্মী মো. সোহেলসহ আরো কয়েকজনের নাম জানা গেছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইউএনও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে না জানিয়ে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন নিয়োগ দিয়েছেন। যা মেনে নেয়া যায়না। এ কারণে হয়তো নিয়োগ বঞ্চিতরা এ হামলা-ভাঙচুর করেছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডাকুয়া বলেন, তিনি ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন। সে কারণেই হয়তো সিসিটিভি ফুটেজে তাকে দেখা গেছে। তবে হামলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি তার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাধবী রায় বলেন, স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার দোহাই দিয়ে কয়েকজন যুবক ভাঙচুর শেষে এক কর্মচারীকে আটকে রেখেছিল। আমি গিয়ে তাকে উদ্ধার করি। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বিএনপি-জামায়াতের লোকজন নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা হাস্যকর অভিযোগ। তারা ভাঙচুরের ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে এটা রটাচ্ছে।
বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি আবুল কালাম জানান, নিয়োগ নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।