বরফের যে ভাস্কর্যে বন্দি আড়াইশো বছরের পুরোনো বাতাস
দুই শতাব্দী প্রাচীন অ্যান্টার্কটিক বায়ু দিয়ে একটি ভাস্কর্য তৈরি করেছেন ওয়েন বিনিতিয়ে। '১৭৬৫-অ্যান্টার্কটিক এয়ার' নামক এ ভাস্কর্যটি জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কোপ-২৬ চলাকালীন সময়ে গ্লাসগোতে পোলার জিরো প্রদর্শনীতে দেখানো হবে।
রয়্যাল কলেজ অব আর্টের পিএইচডি প্রার্থী বিনিতিয়ে বলেন, ১৭৬৫ সালের পর থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কতটা পরিবর্তিত হয়েছে সেটি তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এ ভাস্কর্য তৈরি করেছেন তিনি।
১৭৬৫ সালে, স্টিম ইঞ্জিনের সংস্করণ নিয়ে কাজ করেন বিজ্ঞানী জেমস ওয়াট। ক্রমবর্ধমান শিল্পে ব্যবহারের লক্ষ্যে স্টিম ইঞ্জিনকে আরও দক্ষ করে তোলার জন্য এটি পুনরায় ডিজাইনের কাজ শুরু করেন তিনি। আবার, ১৭৬৫ সালকে অনেকেই শিল্প বিপ্লবের সূচনা বলে মনে করে থাকেন।
কিন্তু বিনিতিয়ে বলেন, সে বছর থেকেই মানুষ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মারাত্মক ক্ষতি করতে শুরু করে। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে-(বিএএস) এর সহযোগিতায় ১৭৬৫ এর তাৎপর্য তুলে ধরতে ভাস্কর্যটি তৈরি করেন তিনি।
তিনি বলেন, "কোপ-২৬ সম্মেলন চলায় এ ভাস্কর্য প্রদর্শনের জন্য গ্লাসগো সায়েন্স সেন্টারই উপযুক্ত। বরফ এবং বাতাসের সংস্পর্শে থাকলে যে অনুভূতি হয় তা বোঝাতে চেয়েছি আমরা।"
"ডিম্বাকৃতির কক্ষে প্রবেশ করলেই নলাকার কাচের ভাস্কর্যটি দেখা যাবে। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত লম্বা কালো স্টিলের ফ্রেমের মধ্যে রাখা সেটি। কাচের সিলিন্ডারে রাখা দৃশ্যমান তরল সিলিকনের লেয়ারের উপর রয়েছে ১৭৬৫ সালের মেরু বরফ থেকে নেওয়া সে বায়ু," যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, "কক্ষের অন্য পাশে রাখা আছে অ্যান্টার্কটিক বরফের আরও একটি সিলিন্ডার। সেটি অক্ষত থাকলেও সর্বদা বরফ গলতে দেখা যায় ওই সিলিন্ডারে।"
দর্শনার্থীরা এ ভাস্কর্য স্পর্শ করতে, এবং এর শব্দ শুনতে পারবেন। এমনকি, কেউ চাইলে দ্বিতীয় সিলিন্ডারে থাকা বরফের স্বাদও নিতে পারবে।
এ ভাস্কর্যে ব্যবহৃত বরফটি খনন করেছেন হিমশৈলবিদ ড. রবার্ট মুলভানি। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক জরিপের জন্য খনন করা হয়েছিল এটি। রবার্ট ২৫ বছর ধরে অ্যান্টার্কটিকা পরিদর্শন করছেন। ব্রিটিশ বেস স্টেশনে ফেরার আগে আইসকোর ড্রিল করার জন্য একটি তাঁবুতে ৮০ সপ্তাহ পর্যন্ত অবস্থান করেন তিনি।
ড. মুলভানি বলেন, "বছরের পর বছর ধরে অ্যান্টার্কটিকাতে তুষারপাত হওয়ায় সেগুলো কমপ্রেসড হয়ে জমাট বেঁধে থাকে। আমরা যত গভীরে ড্রিল করি, ততই আমরা অতীতের কাছাকাছি যেতে থাকি।"
"আমরা আমাদের ড্রিলের মাধ্যমে, একটি নির্দিষ্ট আগ্নেয়গিরি ঠিক কোন বছরে বিস্ফোরিত হয়েছে তার প্রমাণ পেতে পারি। একইভাবে বরফ তৈরির আসল বছরও জানা যায়," বলেন তিনি।
বিনিতিয়ের শিল্পকর্মের জন্য সরবরাহ করা বরফটি ১১০ মিটার নিচ থেকে খনন করা হয়েছিল। ড. মুলভানি গভীরতম ড্রিল করেছেন প্রায় ৩,২০০ মিটার পর্যন্ত।
বরফ খননের কাজে বিনিতিয়ের অংশগ্রহণের কথা থাকলেও কোভিড মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া, বিনিতিয়ে এবং ড. মুলভানিকে কিছু ব্যবহারিক কাজে সাহায্য করেছে আন্তর্জাতিক প্রকৌশল সংস্থা অরূপ।
অরূপের গ্রাহাম ডড জানান, ২৫৬ বছর বয়সী বায়ু কাচের মধ্যে আবদ্ধ করা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জের। তিনি বলেন, "অনেক চিন্তাভাবনার পর আমরা ভিতরে ফাঁকা স্থান রেখে একটি আবরণ তৈরির সিদ্ধান্ত নিলাম। পরবর্তীতে সে ফাঁকা জায়গা আমরা তরল দিয়ে পরিপুর্ণ করি। আমাদের এমন একটি উপায় খুঁজে বের করতে হয়েছিল যাতে রবার্ট ফাঁকা জায়গায় বরফ থেকে বের হওয়া বায়ু প্রবেশ করাতে পারেন।"
বিনিতিয়ে মনে করেন গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে চলমান কথোপকথন মাঝেমধ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও সমস্যাগুলো বেশ প্রবল। তিনি বলেন, "আমি আশা করি গ্লাসগোতে আমাদের এ প্রদর্শনী মানুষকে মেরু অঞ্চলের মূল্য বুঝতে সাহায্য করবে। রাজনৈতিক, তাত্ত্বিক বা অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে যেয়ে একটি কাব্যিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে চেয়েছি আমরা।"
কোপ-২৬ এ অংশগ্রহণকারী কয়েকজন ভিআইপি তার ইনস্টলেশন দেখতে আসবেন বলে আশা করছেন তিনি। "আমরা চাই '১৭৬৫- অ্যান্টার্কটিক আইস' এর মাধ্যমে তাদেরকে চমকে দিতে। আমি একটি যৌথ কথোপকথনকে উৎসাহিত করার জন্য কিছু করতে চাই। যদি আমরা সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাই তবে অনেক কিছু অর্জন করা যাবে," বলেন বিনিতিয়ে।
- সূত্র- বিবিসি