ঔপনিবেশিকতার প্রভাব ও শরণার্থীদের ভাগ্য নিয়ে লিখে সাহিত্যে নোবেল পেলেন আব্দুলরাজাক গুরনাহ
২০২১ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন ৭৩ বছর বয়সি আব্দুলরাজাক গুরনাহ।
ঔপনিবেশিকতার অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে তার আপসহীন সংগ্রাম এবং সংস্কৃতি ও মহাদেশীয় পরিসরে শরণার্থীদের দুর্ভোগের গল্প সাহসের সঙ্গে তুলে ধরার জন্য নোবেল পেলেন গুরনাহ।
আব্দুলরাজাক গুরনাহর জন্ম ১৯৪৮ সালে ভারত মহাসাগরের তানজানিয়ার জাঞ্জিবার দ্বীপে। বেড়ে ওঠাও সেখানেই। তবে ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে তিনি শরণার্থী হিসেবে ইংল্যান্ডে চলে আসেন। ১৯৬৩ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে তানজানিয়া স্বাধীনতালাভের পর জাঞ্জিবারে বিপ্লব সংঘটিত হয়। শাসনক্ষমতা দখল করে নেন আবিদ কারুমি। আরব বংশোদ্ভূতদের ওপর তিনি নির্মম অত্যাচার হত্যাযজ্ঞ চালান।
গুরনাহ আরব বংশোদ্ভূত হওয়ায় স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেই দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। তখন তার বয়স ছিল আঠারো। ১৯৮২ সালের আগে তিনি জাঞ্জিবারে ফিরতে পারেননি। এর কদিন পরই গুরনাহর বাবা মারা যান।
গুরনাহ ইংল্যান্ডের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টকলোনিয়াল লিটারেচার ও ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি অধ্যাপনা থেকে অবসর নিয়েছেন। তার আগ্রহের বিষয় প্রধানত ওল সোয়িঙ্কা, নুই ওয়া থিয়োঙ্গো ও সালমান রুশদির সাহিত্যকর্ম।
এখন পর্যন্ত গুরনাহর দশটি উপন্যাস ও বেশ কিছু ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। তার কাজের মূল বিষয় ভাগ্যাহত শরণার্থীদের জীবন।
ইংল্যান্ডে নির্বাসনকালে, ২১ বছর বয়সে গুরনাহ লেখালেখি শুরু করেন। তার মাতৃভাষা সোয়াহিলি হলেও তিনি লেখালেখি করেন ইংরেজিতে। জাঞ্জিবারে তিনি সোয়াহিলিতে কার্যত কোনো সাহিত্য পড়েননি। এছাড়া নিজের প্রথমদিকের লেখালেখিকে গুরনাহ সাহিত্যের মর্যাদা দিতে নারাজ।
প্রথম জীবনে গুরনাহর লেখালেখির অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিল 'আরব্য রজনী'। পবিত্র কোরআনের সূরাও তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তবে শেকস্পিয়ার থেকে ভি এস নাইপলসহ ইংরেজ লেখকরা তার ওপর বিশেষ প্রভাব ফেলেছেন।
গুরনাহর লেখালেখিতে স্মৃতি অন্যতম বড় প্রভাবক। সে ছাপ আছে তার প্রথম উপন্যাস 'মেমোরি অভ ডিপার্চার'-এ। তিনি সচেতনভাবেই প্রথাবিরুদ্ধ লেখালেখি করেন।
গুরনাহর বিখ্যাত ইংরেজি উপন্যাসের মধ্যে আছে 'বাই দ্য সি', 'ডিজার্শন', 'প্যারাডাইস'। তার সাম্প্রতিকতম উপন্যাস ২০২০ সালে প্রকাশিত 'আফটারলাইভস'।
গত প্রায় দুই দশকে প্রথম আফ্রিকান হিসেবে নোবেল জিতলেন গুরনাহ। তার আগে আফ্রিকা থেকে সাহিত্যে নোবেল জিতেছেন পাঁচজন লেখক—নাইজেরিয়ার ওল সোয়িঙ্কা (১৯৮৬), মিশরের নগিব মাহফুজ (১৯৮৮), এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নাদিন গর্ডিমার (১৯৯১) ও জন ম্যাক্সওয়েল কোয়েটজি (২০০৩)।
গত বছর সাহিত্যের নোবেল পেয়েছিলেন মার্কিন কবি অধ্যাপক লুইস গ্লাক।
সাহিত্যে এখন পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ১১৮ জন; তাদের মধ্যে নারী সাহিত্যিকের সংখ্যা মাত্র ১৬ জন।
গত সোমবার থেকে চিকিৎসা বিভাগের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শুরু হয়। মঙ্গলবার পদার্থে নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ বছর পদার্থে নোবেল পেয়েছেন তিনজন। তারা হলেন জাপানের স্যুকুরো মানাবে, জার্মানির ক্লাউস হাসেলমান ও ইতালির জর্জিও পারিসি।
বুধবার রসায়নে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। এ বছর রসায়নে যৌথভাবে নোবেল পেয়েছেন জার্মানির বেনিয়ামিন লিস্ত ও যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড ম্যাকমিলান।
আগামীকাল শুক্রবার শান্তিতে এবং আগামী ১১ অক্টোবর জানা যাবে এ বছর অর্থনীতিতে কে বা কারা নোবেল জিতছেন।
প্রতি বছর অক্টোবরে সুইডেন ও নরওয়ে বিজ্ঞান, সাহিত্য, অর্থনীতি ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করে থাকে। সব মিলিয়ে ছয়টি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
কারোনা মহামারির প্রভাব পড়েছে নোবেল পুরস্কার বিতরণীতেও। গত বছর মহামারির কারণে কয়েকটি অনুষ্ঠানকে সীমিত করা হয়েছিল। চলতি বছর ভার্চ্যুয়াল ও শারীরিক উপস্থিতি—উভয় পদ্ধতিতেই নোবেল বিতরণ অনুষ্ঠান করা হবে। নোবেলজয়ীরা নিজ নিজ দেশে থেকেই আগামী ডিসেম্বরে পুরস্কারের অর্থ ও মেডেল গ্রহণ করবেন।