সিনহা হত্যা মামলা: ২১তম সাক্ষীর জবানবন্দিতে চলছে পঞ্চম ধাপের সাক্ষ্যগ্রহণ
মেরিন ড্রাইভে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার নির্ধারিত পঞ্চম ধাপের প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
রোববার (১০ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাঈলের আদালতে ২১তম সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় বিচারিক কার্যক্রম। এর আগে সাড়ে ৯টার দিকে আদালতে হাজির করা হয় ওসি প্রদীপসহ মামলার ১৫ আসামিকে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, ২১তম সাক্ষীর মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগের একজনের জেরা বাকি রয়েছে। সেটাও আজ শেষ করা হবে। রবিবার ১০ জন সাক্ষীর হাজিরা দেয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর চতুর্থ দফার শেষ দিনের সাক্ষ্য সকাল সোয়া ১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাঈলের আদালতে শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
২৮-২৯ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য নেওয়া হয় ছেনুয়ারা বেগম, আলী আহমদ, হাম জালাল, ফরিদুল মোস্তফা, সালেহ আহমদ ও বেবি বেগমের। এ নিয়ে চতুর্থ দফা পর্যন্ত এ মামলায় ২০ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে ২০, ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর তিন দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন।
তৃতীয় ধাপের প্রথম দিন সাক্ষ্য দেন আব্দুল হামিদ, মোহাম্মদ ফিরোজ ও শওকত আলী নামে তিনজন। দ্বিতীয় দিন সাক্ষ্য দেন মারিষবুনিয়া মসজিদের ইমাম হাফেজ জহিরুল ইসলাম ও ডা. রণবীর দেবনাথ। সকল সাক্ষীকে ১৫ আসামির আইনজীবী জেরা করে।
এর আগে দ্বিতীয় ধাপের চার দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় গত ৮ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় ধাপের চতুর্থ দিনে সাক্ষ্য দেন ৬ নম্বর সাক্ষী শামলাপুর বায়তুর নুর জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শহিদুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ আটক করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে এই দুজন জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায় ও একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচদিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের ৯ সদস্য। তারা হলেন- বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন- আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।