অবৈধভাবে কিডনি বেচা-কেনা চক্রের মূল হোতাসহ ৫ সদস্য গ্রেপ্তার
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনি কেনা-বেচার সংঘবদ্ধ চক্রের অন্যতম হোতা ও ফেসবুক পেজ অ্যাডমিন মোঃ শাহরিয়ার ইমরানসহ পাচঁ সদস্য'কে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব সাইবার মনিটরিং সেল ভার্চুয়াল জগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধ কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। সিন্ডিকেট সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাদের চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। চক্রের সদস্যরা ৩টি দলে ভাগ হয়ে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করে। চক্রের প্রথম গ্রুপটি ঢাকায় অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে।
চক্রের দ্বিতীয় দলটি প্রথম দলের চাহিদা অনুযায়ী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর, তৃতীয় অন্য একটি গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন রোগীর সাথে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষা করায়।
ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে, ওই ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভূক্তভোগী ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে। এই চক্রের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ/অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।
গ্রেপ্তারকৃতরা এই চক্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগীদের থেকে ১৫ হতে ২০ লাখ টাকা নিত। বিপরীতে ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস অর্জনে জন্য তারা কিডনি ডোনারকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে অগ্রীম ২ লাখ টাকা দিত। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর পর প্রলোভনের শিকার কিডনি দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো।
চক্রের মূল হোতা ইমরান প্রতিটি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন বাবদ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং মান্নান ও তাজুল প্রতি কিডনি দাতা সংগ্রহ বাবদ যথাক্রমে ৫ লাখ এবং ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করত। আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য এই চক্রটি কোন প্রকার রিসিট, পাসপোর্ট বা অন্যান্য প্রমান ভুক্তভোগী ডোনারকে সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকতো। চুক্তি অনুযায়ী কিছু অর্থ ও ভয় ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমদের চুপ রাখার চেষ্টা করা হত।
বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, চক্রের মূলহোতা ও অন্যতম আসামী শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা হতে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতেন। ইমরান ফেসবুকে "বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিৎসা সেবা" এবং "কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা" নামক দুইটি পেজের এডমিন এবং এ পর্যন্ত তিনি কিডনি বিক্রয়ের জন্য প্রায় শতাধিক মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃত চক্রের অন্যতম আসামী মোঃ আব্দুল মান্নান মূলত ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এই অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করেন এবং ইতোপূর্বেও এই অপরাধের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট গ্রেপ্তার হোন। তার বিরুদ্ধে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ছয়টির বেশি মামলা রয়েছে।
গতকাল মধ্যরাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত র্যাব-৫, র্যাব-২ ও র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এর যৌথ অভিযানে জয়পুরহাট এবং রাজধানীর নদ্দা থেকে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা মোঃ শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ (৩৬) ও তার সহযোগী মোঃ মেহেদী হাসান (২৪), মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৮), মোঃ আব্দুল মান্নান (৪৫), এবং (৫) মোঃ তাজুল ইসলাম তাজুকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে।। এই অভিযানে ভুক্তভোগী কিডনি দাতাদের ৪টি পাসপোর্ট, মেডিকেল চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট এবং ভিসা সম্পর্কিত বেশকিছু কাগজপত্র, পাঁচটি মোবাইল এবং দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।