শিশুদের পরীক্ষামূলক টিকাদান শুরু আগামীকাল
১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের করোনাভাইরাসের টিকাদানের আওতায় নিয়ে আসতে সরকারের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জে ১০০ স্কুল শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হবে।
বুধবার বিকেলে এক ভিডিও বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশিদ আলম।
তিনি বলেন, "আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুদের টিকা দেওয়া হবে। আমরা যেকোনো টিকা দেওয়ার আগে একটা টেস্ট রান করি। তারপর কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করে ফাইনাল রান শুরু করি। এবার আমরা মানিকগঞ্জকে বেছে নিয়েছি। সেটি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা। সেখান থেকে শুরু করছি।"
অধ্যাপক খুরশীদ আরও বলেন, "প্রাথমিকভাবে দুটি সরকারি স্কুলের ১২-১৭ বছর বয়সী শিশুদের বেছে নিয়েছি, যাদের ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা দেওয়া হবে। এই টিকা দেওয়ার পর ১০-১৪ দিন পর্যবেক্ষেণ করবো যে শিশুদের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না। তারপর ঢাকায় বড় আকারে শিশুদের টিকা কার্যক্রম শুরু হবে।"
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক অনুষ্ঠান শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম জানান, সারা দেশের ২১টি জেলায় যেখানে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফাইজারের ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সুযোগ আছে, এমন সব কেন্দ্রে চলবে স্কুল শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন প্রদান।
তিনি বলেন, "শিশুদের ভ্যাকসিন যারা দিবে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, সেন্টারে ভ্যাকসিন পৌঁছানো থেকে শুরু করে প্রস্তুতির অনেক বিষয় রয়েছে। আমাদের কিছু কিছু প্রস্তুতি শেষ হয়েছে, আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে।"
শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন কীভাবে হবে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, "শিশুদের আপাতত স্কুলের মাধ্যমে নিবন্ধন করানো হবে। আমরা যে স্কুলের বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দেব সেই স্কুল কর্তৃপক্ষ তালিকা দেবে, পরে তা সুরক্ষা ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হবে। শিশুদের টিকাকেন্দ্র আলাদা হবে।"
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক শাহান আরা বেগম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত ২০-২৫ দিন আগে থানা শিক্ষা অফিস আমাদের কাছ থেকে ষষ্ঠ-দশম শ্রেণি ও কলেজের শিক্ষার্থীদের তালিকা নিয়েছে। এরপর আর কিছু জানায়নি। পূজার ছুটির পর হয়তো ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে জানাবে।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, "আমরা যেকোন ভ্যাকসিন দেয়ার আগে টেস্ট রান করি। প্রথমে ৫০-১০০ শিশুকে ভ্যাকসিন দিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ করবো। পরে বড় পরিসরে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।"
ভ্যাকসিন প্রদান কেন্দ্র হিসেবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টারকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিবেচনায় রেখেছে বলে জানান তিনি।
যেসব জেলায় ফাইজার ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সক্ষমতা নেই সেসব জেলার শিশুরা কীভাবে ভ্যাকসিন পাবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, "আপাতত এটি মেনে নিতে হবে। পরে প্রয়োজনে পাশের জেলায় শিশুদের নিয়ে গিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বা জেলাগুলোর ভ্যাকসিন সংরক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানো হবে।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি আরও ১৯ জেলায় দেওয়া হবে ফাইজারের টিকা। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার থেকে ১৯ জেলায় টিকা পাঠানো শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
প্রাথমিকভাবে যেসব জেলায় ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে সেগুলো হলো বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, গাজীপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, যশোর, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও হবিগঞ্জ।
এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৪ টি, চাঁদপুরের দুটি, নোয়াখালীর দুটি, নরসিংদীর তিনটি, ময়মনসিংহের দুটি এবং রাজশাহীর আটটি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। এগুলো ছাড়াও ঢাকা উত্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আটটি কেন্দ্র থাকবে।
ভবিষ্যতে মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ আরও ২৬ জেলায় ফাইজারের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ওইসব জেলার টিকাদান সম্পৃক্তদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
এর আগে রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, শিগগিরই শিশুদের কোভিডের টিকা দেওয়া শুরু হবে।
মন্ত্রী সেদিন বলেন, "সুইজারল্যান্ড সফরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক এবং গ্যাভির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা শিশুদের টিকা দেওয়ার ব্যাপারে সায় দিয়েছেন। তারা আমাদের বলেছেন, 'আপনারা সংক্রমণ রোধে টিকা দিতে পারেন।' গ্যাভিও আমাদের ফাইজার ও মডার্নার টিকা বেশি করে দেবে বলে আশ্বস্ত করেছে।"
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "সরকারের হাতে এখন ৬০ লাখ ডোজ ফাইজারের টিকা রয়েছে। এর থেকে অর্ধেক টিকা শিশুদের দেওয়া হবে। টিকার জন্য শিশুদের নিবন্ধন হবে জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়া হবে।"
করোনায় আরও ১৭ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৫১৮ জন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসটি গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে দেশের আরও ৫১৮ জনের দেহে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ হাজার ১৫৪টি কোভিড পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে শতকরা ২ দশমিক ৩৪ জনের মধ্যে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে পুরুষ ৮ জন ও নারী ৯ জন।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা নারীদের প্রায় দ্বিগুণ।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০৫ জন কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট ১৫ লাখ ২৫ হাজার ৬৭৩ জন সেরে উঠলেন প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে।