কারাজীবনের ২ বছর: খালেদাকে মুক্ত করতে ব্যর্থ বিএনপি
দুই বছরেও দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আইনি প্রক্রিয়া বা রাজনৈতিক চাপে কারাগার থেকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। এমন অবস্থায় নেতাকর্মীদের হতাশার মধ্যেই শনিবার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে দলীয় প্রধানের কারাবাসের দ্বিতীয় বার্ষিকী পালন করছে তারা।
দলের সিনিয়র নেতারা ও খালেদার আইনজীবীরা বলছেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা অথবা রাজপথে শক্ত আন্দোলন ছাড়া আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তাকে মানবিক কারণে মুক্তি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কারণ তারা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে, কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার সামর্থ্য বিএনপির নেই। তবে তারা এখনও এমন কোনো আবেদন করেননি।
বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, খালেদার মুক্তির দাবিতে কার্যকর কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেনি তাদের দল।
তারা মনে করেন, দলটির নীতিনির্ধারকদের উচিত খালেদার কারামুক্তির জন্য হয় একটি শক্তিশালী আন্দোলন করা, নয়তো সরকারের সাথে বোঝাপড়া করা।
এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিএনপিকে তাদের তৃণমূলকে পুনর্গঠিত করার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে সুপরিকল্পিত কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
পরবর্তী সময়ে গত বছরের ৩০ অক্টোবর নিম্ন আদালতের দেওয়া রায় চ্যালেঞ্জ করে করা আপিল আবেদনের রায়ে খালেদার শাস্তি না কমে আরও পাঁচ বছর বৃদ্ধি পায়।
এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির অপর একটি মামলাতেও খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গত বছরের ২৯ অক্টোবর তাকে সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন বিশেষ আদালত।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ খালেদার জিয়ার নামে বর্তমানে অন্তত ৩৬টি মামলা ঝুলছে।
খালেদার মুক্তির দাবিতে ‘আন্দোলন গতিশীলের পরিকল্পনা’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে দুই বছর কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। এমনকি আইনি প্রকি্রয়ায় যা তার সাংবিধানিক অধিকার সেই জামিনও তাকে দেওয়া হয়নি। আমরা বারবার আদালতে গিয়েছি, কিন্তু সেখানে কী হয় তা সবাই জানেন।
‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন, জনগণের অধিকার না থাকায় দেশ এখন গুরুতর সংকটে চলছে’, যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, গণতন্ত্রকে ‘পুনরুদ্ধার’ করা এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে তীব্র করা কঠিন কাজ। তাই আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তারপর আমাদের আন্দোলনকে আরও তীব্র করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো।
বিএনপির ‘কৌশলী ও কার্যকর কর্মসূচি’ প্রয়োজন
জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান বলেন, খালেদার কারামুক্তির ব্যাপারে সরকারকে চাপে ফেলতে দলটি পুনর্গঠিত করে তার তৃণমূলের কর্মীদের মনোবল বাড়িয়ে কোনো রাজনিতক কর্মসূচি বা কর্মপরিকল্পনা কার্যকর করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের এখন দলকে পুনর্গঠন করে রাজনীতিতে ফিরে আসার জন্য কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত। জনবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনীতিতে ফিরে আসার জন্য বিএনপির উচিত একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশল গঠন করা।’
রাজনীতি বিশ্লেষক ড. তারেক আরও বলেন, দলকে সংগঠিত করতে এবং রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের তৃণমূলে যেতে হবে এবং তৃণমূল কর্মীদের মতামত নিতে হবে।
এদিকে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, দলীয় নীতিনির্ধারকরা স্বতন্ত্রভাবে কর্মসূচি প্রণয়ন করতে না পারায় কার্যকর কর্মসূচি দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বিএনপি ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপিপন্থী এ বুদ্ধিজীবী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উচিত এখন রাজনীতি থেকে দূরে না থেকে খালেদার মুক্তির জন্য দলের আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে স্থায়ী কমিটিকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা।
‘খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে সিনিয়র নেতাদের অবশ্যই দলীয় পদমর্যাদায় উৎসাহিত করতে সাহস নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে এবং তাদের অনুসরণ করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।