বৈরী আবহাওয়া: স্থবির মোংলা বন্দর, সেন্টমার্টিনে আটকা ৩ শতাধিক পর্যটক
বায়ুচাপ পার্থক্যের অধিক্য বিরাজ করায় বঙ্গোপসাগর প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। এ কারণে চার সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর এবং নদী বন্দরগুলোতে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
টিবিএস মোংলা প্রতিনিধি জানান, গত দুদিন ধরেই মোংলা বন্দরসহ সুন্দরবন উপকূল অঞ্চলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। দিনের বেলায় সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ।
অন্যদিকে, হালকা ও ভারী বৃষ্টির ফলে বন্দরে অবস্থানরত সামুদ্রিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কাজ চলছে ধীরগতিতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সামুদ্রিক সতর্কবার্তার বুলেটিনে দেশের তিনটি সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের অধিক্য বিরাজ করছে।
মোংলা বন্দরে থেমে থেমে হালকা ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ও সাগরে নেমে জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না। এ ছাড়া সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহের আলীর চর, আলোরকোলসহ চরাঞ্চল এলাকায় সাগর থেকে আহরিত মাছ নিয়েও উঠে আসতে পারছেন না জেলেরা। এতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
এদিকে, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন জানান, বন্দরের পশুর চ্যানেলের বহিঃনোঙ্গর ও জেটিতে সার, চাল, ক্লিংকার, কয়লা ও মেশিরারীজ মালামাল-সহ ২২টি বাণিজ্যিক জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় অবস্থান করছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এসব জাহাজের পণ্য খালাস-বোঝাই ব্যহত হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া আর বৃষ্টির কারণে বন্দরের পণ্য খালাস-বোঝাইয়ের কাজে বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হলেও খাদ্য ও সারবাহী জাহাজের পণ্য খালাস কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
তবে বন্দরের জেটি এলাকায় কার্যক্রম রয়েছে স্বাভাবিক রয়েছে বলেও তিনি জানান।
সেন্টমার্টিনে আটকা পড়া পর্যটকরা ভালো আছেন
কক্সবাজারে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। উত্তাল রয়েছে সাগর। এ বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে সার্ভিস বোট চলাচল রোববার থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে কাঠের বোটে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে যাওয়া প্রায় তিন শতাধিক পর্যটক সেখানে আটকা পড়েছেন।
টিবিএস কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, সেন্ট মার্টিনে আটকা পড়া পর্যটকরা ভালো আছেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
সেন্টমার্টিনের সি প্রবাল রিসোর্টে উঠা পর্যটক সিলেটের হবিগঞ্জ এলাকার মো. আল-আমীন তালুকদার বলেন, 'গত ১৫ অক্টোবর (শুক্রবার) পরিবার নিয়ে সেন্টমার্টিন বেড়াতে এসেছি। সোমবার রাতের ট্রেনে সিলেট ফিরে যাবার টিকেট করা ছিল। কিন্তু রোববার থেকে দ্বীপের সার্ভিস বোট বন্ধ থাকায় দ্বীপেই আটকে আছি। ঠিক সময়ে ফিরতে না পারায় বাজেটের টাকায় টান পড়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন থাকা খাওয়ায় কোনো সমস্যা হবে না বলে অভয় দিয়েছে।'
এদিকে, গত শুক্রবার ৪ সহকর্মী নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া কিশোরগঞ্জের এনজিওকর্মী এনামুল হক বলেন, 'রোববারই আমাদের ফিরে যাবার কথা ছিল। কিন্তু বোট না চলায় ফিরতে পারিনি। আমাদের মতো বিভিন্ন হোটেলে প্রায় ৩ শতাধিক পর্যটক অবস্থান করছেন।'
সেন্টমার্টিনের সি প্রবাল রিসোর্টের মালিক আব্দুল মালেক বলেন, 'জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলেও পর্যটকরা নিজস্ব নিরাপত্তায় স্পিডবোট ও ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন এসেছেন। অনেকের রোববার, আবার কারও সোমবার ফেরত যাবার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া বৈরী হওয়ায় সেন্টমার্টিন থেকে কোনো ট্রলার বা স্পিডবোট ছেড়ে যেতে দেয়নি কোস্টগার্ড। রিসোর্টে অবস্থান করা পর্যটকরা নিরাপদে রয়েছেন।'
কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের সেন্টমার্টিন স্টেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'হোটেল ও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানতে পেরেছি, ২৫০ থেকে ৩৩০ জনের মতো পর্যটক এখন দ্বীপে অবস্থান করছেন। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের টেকনাফে পাঠানো হবে।'
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, 'মৌসুম না হলেও নিজস্ব নিরাপত্তায় কয়েক'শ পর্যটক সেন্টমার্টিন গেছেন বলে খবর পেয়েছি। আমরা পর্যটকদের খোঁজ-খবর নিয়েছি এবং নিরাপদে থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।'