কক্সবাজার সৈকতকে আরও পর্যটকবান্ধব করতে ৩,১৪০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্যোগ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য পর্যটকবান্ধব ও আন্তজার্তিক মানের সৈকতে রূপান্তরের লক্ষ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত উন্নয়নে ৩১৪০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ প্রকল্পের আওতায় কলাতলী থেকে নাজিরারটেক বিচ এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ও মাল্টিফাংশানাল সড়ক নির্মাণ হবে। এর ফলে পর্যটকের ঢেউ কলাতলী, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা সৈকতে আটকে না থেকে ছড়িয়ে যাবে নাজিরারটেক পর্যন্ত। এর ফলে নাজিরারটেকেও পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। এতে বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে শুরু করে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য ইতোমধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ছাড়াও নির্মাণ হবে ওয়াকওয়ে, থাকছে সাইকেল বে ও গাড়ি পার্কিং সুবিধা এবং সোলার লাইট স্থাপনের মাধ্যমে সমুদ্র সৈকতকের সৌন্দর্য বর্ধন করা হবে। এছাড়া শিশু পার্ক, ওয়াশরুমও, তথ্য কেন্দ্র , লকার রুম, বসার স্থান, প্রদর্শনী স্থান, উন্মুক্ত মঞ্চসহ পর্যটকবান্ধব বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে শুধুমাত্র কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী পয়েন্টে যথাযথ পর্যটন সুবিধা স্থাপনা রয়েছে। এ কারণে এসব পয়েন্টগুলোতে পর্যটন মৌসুমে দর্শানার্থীদের ভিড় বেশি হয়। সৈকতের অন্যান্য অংশে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা না থাকায় পর্যটকরা সৈকতের নির্দিষ্ট অংশেই ভিড় করে । যার ফলে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপযোগ করতে পারে না। দেশি বিদেশি পর্যটকদের জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পছন্দের হলেও বিদেশি পর্যটকদের ইদানিং দেখা যায় না। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আন্তর্জাতিক মানের মানসম্পন্ন সুযোগ সুবিধা ব্যাপক অভাবই এর প্রধান কারণ ।
পুরো সৈকতে টেকসই প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়নের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে, সমুদ্র সৈকতে উপভোগ্য সৈকতের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাবে। এতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় নাজিরারটেক সৈকতে দুই কিলোমিটার এলাকায় এবং লাবণী বিচ থেকে কলাতলী এলকায় ২.৪৯ কিলোমিটার মাল্টিফাংশনাল সড়ক কাম ডাইক নির্মাণ করা হবে। পার্কিংয়ের সুবিধাসহ ৩০ ফুট প্রশস্ত যানবাহন চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হবে।
নাজিরারটেক বিচ এলাকায় মাল্টিফাংশনাল সড়ক কাম ডাইক যেখানে শেষ হবে সেখান থেকে লাবণী পয়েন্ট পযন্ত ২.১১ কিলোমিটারের আরও একটি সড়ক কাম ডাইক নির্মাণ করা হবে। ১.১২ কিলোমিটারের আরও একটি সড়ক কাম ডাইক নির্মাণ করা হবে কলাতলী থেকে বেইলী হ্যাচারি পযর্ন্ত।
কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্টে ১.৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ হবে এ প্রকল্পের আওতায়।
নাজিরারটেক এলাকায় নির্মাণ করা হবে দুই কিলোমিটার এবং লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী বিচ পর্যন্ত ২.৮ কিলোমিটারের সাইকেল বে নির্মাণ করা হবে। পার্কিং সুবিধাসহ মাল্টিফাংশনাল সড়কের পাশেই নির্মাণ করা হবে ১০ ফুট প্রশস্তের সাইকেল বে।
ওয়াকিং বে নির্মাণ করা হবে নাজিরারটেক সৈকতের দুই কিলোমিটার এবং লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত ২.২৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। ভূমি থেকে ফুট ওপরে এ সড়ক নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বিদেশি পর্যটকদের জন্য নতুন করে গড়ে তোলা হবে নাজিরারটেক সৈকত, গড়ে তোলা হবে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট যেখানে বিভিন্ন দেশের রান্না পরিবেশন করা হবে। এছাড়া নাজিরারটেক এলাকায় নির্মাণ করা হবে অ্যাকুরিয়াম বিল্ডিং।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হল, দীর্ঘ এক যুগ ধরে বিদ্যমান সৈকতের ভাঙ্গন প্রতিরোধে টেকসই ও কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রতিরক্ষা কাজের পাশাপাশি সমুদ্র সৈকতে বালু প্রতিস্থাপন ব্যবস্থা থাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ থাকবে। এর ফলে সৈকতের তীরবর্তী সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
তিনি বলেন, নাজিরারটেক এলাকায় এখনও কোনো পর্যটন সুবিধা গড়ে উঠেনি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হবে এলাকাটি। এতে বেসরকারি বিনিয়োগও বাড়বে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। কলাতলী থেকে নাজিরারটেক এলাকার ভাঙ্গণপ্রবণ উপকূলীয় এলাকা রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সুযোগ তৈরি হবে প্রকল্পের আওতায়।
এদিকে প্রকল্পটি নেওয়ার আগে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন কক্সবাজার শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী। এ কারণে প্রকল্পটি স্থানীয় মানুষের কতটুকু কল্যাণে আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তবে নাজিরারটেক পর্যন্ত বাঁধ কাম সড়ক নির্মাণের ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।