ফেসবুক ছাড়তে চান? জেনে নিন ফেসবুক ছাড়াই কীভাবে গুছিয়ে নেবেন আপনার অনলাইন জগতকে
ফেসবুক নিয়ে বিরক্ত মানুষের অভাব নেই। ফেসবুক নিয়ে প্রতিটা চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হওয়ার পর, ফেসবুকের প্রতিটা কেলেঙ্কারির পরই হয়তো আপনি একবার করে ভাবেন, এবার ফেসবুক ছেড়েই দিবেন। অথবা, ফেসবুক হয়তো আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে এবং এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি বহুবার ছাড়ার চেষ্টা করেও ছাড়তে পারছেন না আপনি।
এ যুগে, বিশেষ করে মহামারি-পরবর্তী সময়ে, আমাদের দৈনন্দিন যোগাযোগের সিংহভাগই অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়েছে। এবং বিশ্বের অনেক জায়গায়, অনেক মানুষের কাছে ইন্টারনেট মানেই ফেসবুক। ৩০০ কোটি গ্রাহকের এই বিশাল নেটওয়ার্ক খুব সম্ভবত আপনার অনলাইন জগতকেও ঘিরে রয়েছে।
তাই যদি ফেসবুক ছাড়তে চান, তাহলে আপনাকে প্রথম ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ফেসবুক ছেড়ে কোথায় যাবেন। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যে যে কাজে ফেসবুক ব্যবহার করতে হতো আপনার, সেসব কাজ অন্য কোন বিকল্প মাধ্যমে গিয়ে করতে পারবেন।
ফেসবুকের সঙ্গে আপনার বিরোধটা যদি আদর্শগত হয়ে থাকে; অর্থাৎ ফেসবুকের তথ্য ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়িক মডেল এবং এদের সাথে আসা ঝুঁকিগুলো নিয়ে যদি আপনি চিন্তিত বা বিরক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে ফেসবুকের মালিকানাধীন অন্য অ্যাপগুলো (মেসেঞ্জার, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ) থেকেও অব্যাহতি নিতে হবে আপনার।
ফেসবুক আমাদের সঙ্গে এতোটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সিংহভাগ মানুষের জন্য ফেসবুক ছেড়ে থাকাটা বাস্তবিকভাবেই সম্ভব না। তবে আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন আপনার জন্য সম্ভব, তাহলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন-
ফেসবুকের সঙ্গে আর কী কী জিনিস ছেড়ে দিতে হবে আপনাকে, তা ঠিক করুন
ফেসবুক-ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে আপনি যেসব নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে, সেগুলো শুধু এই পরিষেবাগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমাদের ফ্রেন্ড এবং ফলোয়ার লিস্ট মূলত বছরের পর বছর ধরে যেসব মানুষ আমাদের জীবনে এসেছে (অনলাইনে), তাদের তালিকা। এখানে হয়তো আপনার বাবা-মা, প্রিয় বন্ধুরা ও অফিসের সহকর্মীরা আছেন। হয়তো আছেন ক্লাস ফাইভে হারিয়া যাওয়া বন্ধুটিও। এছাড়া এমন অনেক লোকজন আছেন যাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কই গড়ে উঠেছে এই পরিষেবায়।
একচেটিয়া ব্যবসার ফলে ফেসবুক আমাদের যেসব সংযোগ তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছে, সেগুলো আর কোথাও পাওয়া সম্ভব না। আর এদের সবাই আপনার সাথে অন্য নেটওয়ার্কে পাড়ি জমাবে, সেটাও সম্ভব না। সুতরাং, ফেসবুক ছাড়তে চাইলে আপনাকে কিছু সম্পর্ককেও ছাড়তে হবে, ছাড়তে হবে বিশেষ কিছু ডোপামিনের চাহিদাকেও।
নতুন গ্রুপ কোথায় তৈরি করবেন
ফেসবুক গ্রুপগুলো এই পরিষেবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিচারগুলোর একটি। গ্রুপগুলো আক্ষরিক অর্থেই মানুষকে কিছু বায়বীয় সম্প্রদায় গড়ে তুলতে দেয়, যেখানে সম্পূর্ণ অপরিচিত লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে সহবস্থান করার সুযোগ পান আপনি।
ফেসবুক গ্রুপ অনেক রকম হতে পারে। আপনার আত্মীয়-সজন বা বন্ধুবান্ধবের গ্রুপ থেকে শুরু করে কুকুর পালনকারীদের গ্রুপ কিংবা মারভেল সিনেমা ভক্তদের গ্রুপ; খুবই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সাধারণ আগ্রহের জায়গা থেকে খোলা হতে পারে ফেসবুক গ্রুপ।
ফেসবুক ত্যাগ করতে চাইলে এটা আগেই জেনে রাখুন, বড় গ্রুপগুলোকে অন্য কোথাও পুনরায় তৈরি করাটা প্রায় অসম্ভব।
তবে ছোট ও কাছের গ্রুপগুলোর বেলায় কোনো মেসেজিং অ্যাপের আশ্রয় নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে টেলিগ্রাম (Telegram), সিগনাল (Signal), স্ন্যাপচ্যাট (Snapchat), গ্রুপমি (GroupMe) ও হ্যাংআউটসের (Hangouts) মতো অনেক নিরাপদ অ্যাপই আছে, যারা হোয়াটসঅ্যাপের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে।
বড় গ্রুপগুলোর বেলায় আপনি খোঁজ নিয়ে বা জরিপ করে দেখতে পারেন, আপনার পছন্দের গ্রুপের সদস্যরা অন্য কোন যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়। অনলাইন কমিউনিটি বা সম্প্রদায়গুলোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও সুস্থ জায়গা হচ্ছে রেডিট (Reddit)। যেকোনো আগ্রহ বা শখ নিয়েই রেডিটে কোনো না কোনো পাবলিক গ্রুপের সন্ধান পাবেন আপনি। রেডিটের এলগরিদম ও ব্যবসায়িক মডেলের জন্য সেসব গ্রুপে প্রয়োজনীয় ও সুস্থ আলোচনাও চালাতে পারবেন আপনি।
জটিল বিষয় এবং উপবিষয় নিয়ে আলোচনা চালাতে, ফাইল শেয়ার করতে এবং কথোপকথন চালাতে আরেকটি কার্যকর ওয়েবসাইট রয়েছে, যার নাম স্ল্যাক (Slack)।
তরুণ প্রজন্মের কাছে অবশ্য একটি অ্যাপ খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সেটি হচ্ছে, ডিসকর্ড (Discord)। অডিও-চ্যাটের মতো অত্যাধুনিক ফিচার থাকা এই অ্যাপের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের অনলাইনে আড্ডা দেওয়া নতুন মাত্র পাচ্ছে।
সময় নষ্ট করার জন্য কোথায় যাবেন
সবাই প্রয়োজনীয় কাজ, আলোচনা চালাতে বা মানুষের সঙ্গে গভীর ব্যক্তিগত সংযোগ তৈরি করতে ফেসবুক ব্যবহার করে না। অনেকের জন্য ফেসবুক হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রল করার জায়গা।
যদি আপনি মিম বা বিভিন্ন মজার মজার ভিডিও দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুক স্ক্রল করতে পছন্দ করেন, তাহলে আপনি টিকটকে আশ্রয় খুঁজতে পারেন। যারা ইন্সটাগ্রাম রিল দেখে সময় কাটান, তাদের জন্যও টিকটক একটি উপযুক্ত জায়গা। এসব রিলের অধিকাংশ ভিডিও আসে টিকটক থেকেই।
ছবি ও লাইফস্টাইল সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে যদি আপনার আগ্রহ থাকে, তাহলে পিন্টারেস্ট (Pinterest) বা হাউজ (Houzz)-এর দ্বারস্থ হতে পারেন। সময় ক্ষেপণের জন্য ইউটিউবও একটি দারুণ জায়গা। তবে ফেসবুকের কিছু কিছু সমস্যা ইউটিউবের মধ্যেও বিদ্যমান, যেমন- ভুল তথ্য, শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলা ইত্যাদি।
খবরের জন্য কোথায় যাবেন
অধিকাংশ মানুষ ফেসবুক থেকেই দৈনন্দিন সংবাদ পেয়ে থাকে। এবং ফেসবুকে বিদ্যমান সংবাদের একটি বড় অংশই ভুল তথ্য ও প্রোপাগান্ডায় ভরা। ভুল তথ্য ও প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে মানুষের মাঝে বিভাজন তৈরি করা ফেসবুকের ব্যবসায়িক মডেলেরই অংশ।
সংবাদের জন্য আপনার প্রথম গন্তব্য হওয়া উচিত আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যমটি। যদি আপনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে খবরাখবর পেয়ে থাকেন, তাহলে গুগল নিউজ বা অ্যাপল নিউজের শরণাপন্ন হতে পারেন। বিশ্বস্ত সূত্র থেকে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে ভালোই পাকা এই দুটি সাইট/অ্যাপ।
আর যদি সংবাদ পড়ে সেটা নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা করার অভ্যাস থেকে থাকে আপনার, তাহলে প্রতিটা নিউজ আর্টিকেলের কমেন্ট সেকশনে ঢুঁ মারতে পারেন, বা টুইটারের দ্বারস্থ হতে পারেন।
সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।