‘কখনোই হুইসেলব্লোয়ার হতে চাইনি, কিন্তু মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল’: ফ্রান্সিস হাউগেন
আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার ইচ্ছা ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নানা অনিয়ম নিয়ে মুখ খোলা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মী ফ্রান্সিস হাউগেন। কিন্তু ফেসবুকে কাজ করার সময় চারদিকে অনিয়ম দেখে মুখ খুলতে বাধ্য হন বলে দাবি করেন হাউগেন। আর সেখান থেকেই হঠাৎ করে মিলেছে খ্যাতি।
"যা করেছি তা আমার প্রথম পরিকল্পনা ছিল না। এমনকি আমার দ্বিতীয় বা তৃতীয় পরিকল্পনাও নয়। এটা প্ল্যান জে বা সেরকম কিছু ছিল," হেসে বলেন হাউগেন। "কেউ আমাকে এই কাজে নিয়োজিত করে বলেনি যে তোমাকে এখন ভেতরের খবর ফাঁস করতে হবে।"
কিন্তু হাউগেন তাই করেছেন। চলতি বছরের মে মাসে তিনি প্রডাক্ট ম্যানেজারের চাকরি ছাড়েন এবং সঙ্গে করে কয়েক হাজার অভ্যন্তরীণ নথি নিয়ে আসেন।
গণমাধ্যমে একের পর এক গোপন নথি প্রকাশের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সৃষ্টি হয় বিতর্ক। ফেসবুকের অধীগ্রহণকৃত ইনস্টাগ্রাম টিনেজারদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা জেনেও গোপন করা, ইথিওপিয়াসহ বিভিন্ন দেশে জাতিগত সহিংসতায় উসকানি, ৬ জানুয়ারি ক্যাপটল হিলের দাঙ্গার সময় ভুল তথ্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাসহ ফেসবুকের বিরুদ্ধে নানান অভিযুগের তীর ওঠে।
৩৭ বছর বয়সী হাউগেন বলেন, মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করার পরেই তার পরিবর্তনের শুরু। হাউগেনের মা যাজক হওয়ার জন্য অ্যাকাডেমিক চাকরিজীবন ছেড়ে দেন। "আমি গর্বিত যে আমার মা এপিস্কোপাল চার্চের যাজক," বলেন হাউগেন।
হাউগেনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়ায়। তিনি বলেন, "গত বছর ছয় মাস মায়ের সঙ্গে ছিলাম। ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ এসব ঘটনা আমাকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে এবং আমি নিশ্চিত ছিলাম যে ফেসবুকের ভেতরকার পরিস্থিতি ঠিক হবে না।"
ইংরেজি ভাষাভাষী ব্যতীত আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্যের মতো অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ফেসবুকের উদাসীনতা, ইথিওপিয়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠী ও মানবপাচারকারীদের উদ্দেশ্য পূরণে ফেসবুক ব্যবহারের মতো বিষয়ই হাউগেনকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।
"মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য আমার কাছে যা জরুরি মনে হয়েছে, আমি তাই করেছি। বিশেষ করে বৈশ্বিক দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের চেয়ে ফেসবুকের কাছে মুনাফাই গুরুত্বপূর্ণ, যা এসব জনগোষ্ঠীর জন্য বিপজ্জনক। আমি নথিগুলো না আনলে, এই বিষয়গুলো কখনোই সামনে আসত না," বলেন তিনি।
তবে, অবজার্ভের কাছে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে ফেসবুকের মতো বিশাল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা বলার সময় হাউগেনকে বেশি চিন্তিত বলে মনে হয়নি।
"ইচ্ছা করেই খুব বেশি সাক্ষাৎকার দিই না, কারণ আসলে আমি নই, নথিগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। আমি জন্মদিনও উদযাপন করি না, কেননা আকর্ষণের কেন্দ্রে আসাটা আমার পছন্দ নয়," বলেন হাউগেন।
হাউগেন জানান তার এই পদক্ষেপে তিনি বন্ধুবান্ধব ও পরিবার-পরিজনকে পাশে পেয়েছেন।
তিনি বলেন, "স্বাক্ষ্যপ্রদানের আগে আমার এক বন্ধু আমাকে চমৎকার একটি কথা বলেছে। আমি যখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি, তখন নিজেকে এই কথাই বলি। সেটা হলো: বিষয়টি তোমার ব্যাপারে নয়, তুমি স্রেফ নথিগুলো সামনে আনার মাধ্যম।"
আটলান্টিক সমুদ্রে পুয়ের্তো রিকোতে নিজের নতুন বাড়ি সম্পর্কে হাউগেন বলেন, "আমি এখন সান ফ্রান্সিসকোতে থাকলে ভীষণ চাপে থাকতাম, কেননা আমি নিশ্চিত সবাই আমাকে সেখানে চিনত। পোয়ের্তে রিকোতে থেকে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। এখানে এখন পর্যন্ত আমাকে কেউ আমাকে চিনেনি।"
স্বাস্থ্যগত কারণেও তিনি এখানে এসেছেন বলে মন্তব্য করেন।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান