বৈদেশিক সহায়তা: জুলাই-সেপ্টেম্বরে বেড়েছে অর্থছাড়, কমেছে প্রতিশ্রুতি
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় বাড়লেও উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ব্যাপকভাবে কমেছে। এ সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। বিপরীতে প্রতিশ্রুতি কমে গেছে ৮৮ দশমিক ২১ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সরকারের মাত্র ৯৪.০৩ মিলিয়ন ডলারের ঋণ ও অনুদান চুক্তি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার মধ্যে ৭৯৭.৪৬ মিলিয়ন ডলারের ঋণ ও অনুদান চুক্তি হয়েছিল।
এদিকে চলতি অর্থবছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থছাড় করেছে ১ হাজার ৯৩৮ মিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৪৪৪.৬২ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অর্থবছরের শুরুতে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি কিছুটা কম হলেও অর্থবছরের বাকি সময়ে তা বাড়বে। কারণ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কিছু প্রকল্পে ঋণ চুক্তির প্রস্তুতি চলছে।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব (এডিবি) ড. পিয়ার মোহাম্মদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চলতি অর্থবছরে এডিবির সঙ্গে ১.২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্ত এরই মধ্যে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই হয়ে গেছে। এই অর্থবছরের শেষের দিকে গিয়ে আরও কয়েকটি প্রকল্পের ঋণ চুক্তির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ফলে বছরের শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।"
একইভাবে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের চলতি অর্থবছরে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি লক্ষ্য রয়েছে। অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানান ইআরডির কর্মকর্তারা।
এছাড়াও জাপান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে মোট ছয় প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি হবে বলে জানান ইআরডির কর্মকর্তারা।
গত অর্থ বছরের শেষে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সরকার মোট ৯.৩ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কোভিড পরিস্থিতির কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের অগ্রাধিকারে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তারা আগে যে ধরণের প্রকল্পে ঋণ বেশি দিতো কোভিড পরিস্থিতে এখন এ ধরণের প্রকল্পে বেশি ঋণ দেবে না। এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে ঋণের নেগোসিয়েশন করতে হবে।"
"আবার বিশ্বব্যাপী কোভিড পরিস্থিতিতে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ ও সহায়তায় ক্ষেত্রে দারিদ্র্যপ্রবণ দেশগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে নিজেদের সঠিক অবস্থান তুলে ধরতে না পারলে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি কমে যাবে।"
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, কোভিড পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরের শুরুতে অর্থছাড় কিছুটা বেড়েছে। অর্থবছরের বাকি সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন গতি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে অর্থছাড়েও আরও গতি আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বৈদেশিক সহায়তার বেশির ভাগই এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কাছ থেকে, যার পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলারের বেশি। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ২১২ মিলিয়ন, জাইকা ১৮৬ মিলিয়ন এবং চীন ছাড় করেছে ২২৪ মিলিয়ন ডলার। আগামী কয়েক মাসে এসব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার অর্থছাড় কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুদ-আসল মিলিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের ৫৯৩.৮৬ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধের পরিমান ছিল ৫০৮.২৩ মিলিয়ন ডলার।