এশীয় অর্থনীতিগুলো সচল হওয়ায় চাঙ্গা ভ্রমণ ও পোশাক খাত
এশিয়াজুড়ে করোনার টিকাদান বৃদ্ধি পাওয়ায় কমছে সংক্রমণ সংখ্যা। প্রধান প্রধান অর্থনীতিগুলোও লকডাউনের মতো বিধিনিষেধের বেড়াজাল পেরিয়ে পুনঃউন্মুক্তকরণ শুরু করেছে। বেড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের নানান কাজে বিদেশ ভ্রমণ ও পর্যটন। ফলে বিনিয়োগকারীদের সুদৃষ্টিও ধীরে ধীরে আকর্ষণ করছে ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও এয়ারলাইনগুলো। অন্যদিকে মহামারির প্রকোপের সময় চাঙ্গা সুপারমার্কেট ও গ্যাজেট বিক্রির মতো খাত কিছুটা জৌলুস হারিয়েছে।
বিভিন্ন কোম্পানির প্রান্তিক শেষের আয় প্রতিবেদন বলছে, এশিয়ার মানুষ এখন ঘরে বসে টেলিভিশনের পর্দায় কম চোখ রাখছেন। কমেছে অনলাইনে মুদিবাজার করার হিড়িক। মহামারির বিধিনিষেধ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্পন্ন ভোক্তাশ্রেণির নানান স্থানে ভ্রমণই বেড়েছে।
এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি- চীনের স্বচ্ছল ভোক্তাদের এখনও বিদেশ ভ্রমণে বাঁধা থাকায়, তারা দেশ থেকেই বিলাসপণ্য কিনছেন।
তবে এ অঞ্চলের অধিকাংশ দেশের মানুষের ভ্রমণ চাহিদা বাড়ায়, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিমানে যাত্রী পরিবাহী সংস্থাগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে। বেড়েছে বিভিন্ন রুটে তাদের নির্ধারিত ফ্লাইটের সংখ্যা। সিঙ্গাপুরের মতো ধনী কিছু দেশ সম্পূর্ণরুপে টিকাপ্রাপ্ত পর্যটকদের নিজ দেশে আসার অনুমতি দিয়েও এয়ারলাইন ও পর্যটন ব্যবসাকে সমর্থন দিচ্ছে।
এই অঞ্চলের আরেক বৃহৎ অর্থনীতি- অস্ট্রেলিয়াও আন্তর্জাতিক সীমান্ত সচলের পরিকল্পনা নেওয়ায় বেড়েছে সেদেশে ভ্রমণেচ্ছুকদের ফ্লাইট বুকিং।
অস্ট্রেলিয়ার কোয়ানতাস এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী অ্যালান জয়েস বলেন, 'এবছর বড়দিনের ছুটিতে সবাই বেড়াতে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন। প্রায় বছর দুই পর প্রিয়জনদের সাথে দেখা করতে উম্মুখ সবাই।'
এশিয়ার পর্যটন খাত এই মুহূর্তে মহামারির আগের অবস্থানে ফিরেছে এমন নয়, তবে বর্তমান উৎসাহ বজায় থাকলে আরও কয়েক মাস লাগবে। তাছাড়া, চীনের বিপুল সংখ্যক পর্যটক এখনও যোগ দিতে পারছেন না। তারা বেড়ানোর ছাড়পত্র পেলে পর্যটন খাতে সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের আশা করা যেতে পারে।
অভ্যন্তরীণ পর্যটন বাজার অবশ্য বেশ চাঙ্গা। তবে কিছু দেশে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আনতে চালু করা সাময়িক বিধিনিষেধে ব্যাহত হচ্ছে ম্যাকডোনাল্ডসের মতো আন্তর্জাতিক ফাস্টফুড চেইনের ব্যবসা।
তবে আন্তঃসীমান্ত হোক বা দেশের ভেতরে, পর্যটন বাড়ায় গত তিন মাসে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে এয়ারলাইনগুলোর শেয়ারমূল্য সার্বিকভাবেে ৫ শতাংশ বেড়েছে। একইসময়, বৈশ্বিক এয়ারলাইনগুলোর বাজারমূল্য কমে ৬ শতাংশ।
কর্পোরেট ভ্রমণ প্রত্যাশা অনুযায়ী না বাড়ায় বৈশ্বিক এই অবনতি, যা থেকে মুক্ত এশিয়া প্যাসিফিক।
তারই প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেছে এমএসসিআই এর এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সব কয়টি দেশের সমন্বিত বাজার সূচকে। সেখানে ২ শতাংশ বেড়েছে এয়ারলাইনগুলোর বাজারদর।
সুফল বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর ঘরেও উঠছে। চীনে বিদ্যুৎ ও আবাসন খাতে সংকট সত্ত্বেও ইউরোপের লুই ভিটো ও কেরিং এর মতো ফ্যাশন হাউজের আয় প্রবৃদ্ধির তথ্য বিলাসপণ্যের প্রতি চীনা ক্রেতাদের আসক্তি না কমারই ইঙ্গিত দেয়।
এনিয়ে লরেল ব্র্যান্ড সিইও নিকোলাস হেরমিনাস গত সপ্তাহে বলেন, 'চীনের আছে বিশাল জনসংখ্যা, মধ্যবিত্ত শ্রেণিতেও গত দুই দশকে অনেক মানুষ উন্নীত হয়েছেন। রুপচর্চা সামগ্রীর প্রতি তাদের আগ্রহ সহজে পূরণ হওয়ার নয়।'
- সূত্র: রয়টার্স