দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মজুরি বাড়ানোর দাবি পরিবহন শ্রমিকদের
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর এবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মজুরি বাড়ানোর দাবি জানালেন দেশের পরিবহন শ্রমিকরা।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বেশ কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গত চার দিনে কোনও উপার্জন হয়নি তাদের। এই বছরের শুরুতে সরকার আরোপিত লকডাউনে তাদের যে ক্ষতি হয়েছিল, এবারের ধর্মঘটে সেই ক্ষতি আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের (বিআরটিডব্লিউএফ) মতে, বাসে কর্মরত সাত লাখ শ্রমিকসহ সারা দেশে বর্তমানে কমপক্ষে ৫০ লাখ পরিবহন শ্রমিক রয়েছে।
বিআরটিডব্লিউএফ আরও জানায়, গড়ে একজন পরিবহন শ্রমিক দৈনিক ৫০০ টাকা আয় করেন। পরিবহন মালিক সমিতির ধর্মঘটে তাদের মোট ক্ষতি হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা।
মহাখালী বাস ডিপোর পরিবহন শ্রমিকরা টিবিএস প্রতিবেদককে জানান, ধর্মঘটে রোজগার না থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
মহাখালী-টাঙ্গাইল রুটে চলাচলকারী শৌখিন পরিবহনের হেলপার শফিকুল ইসলাম বলেন, "আমরা ভালো নেই। বাস চলাচল বন্ধ থাকুক তা আমরা কখনোই চাই না।" তিনি বলেন, "সাধারণত দিনে আমরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করে থাকি। কিন্তু গত চার দিনে আমাদের কোনো আয় হয়নি।"
শফিকুল যোগ করেন, "আমি আমার পরিবারকে কোনো টাকা পাঠাতে পারি না। নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসেরই দাম বাড়ছে। তাই আমাদের মজুরিও বাড়ানো দরকার। আমি যা আয় করি তা দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণের খরচ বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মহামারীর মধ্যে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের উপার্জনও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ধার করা টাকায় বাঁচতে হয়েছিল আমাদেরকে।"
এদিকে ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, মালিকের সিদ্ধান্তের কাছে শ্রমিকরা অসহায়। তিনি বলেন, "বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা। তারা তা করতে চাইলে আমরা অসহায়।"
"জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে নিত্যপণ্যের দামও বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান মজুরি দিয়ে পরিবারের খরচ বহন করতে পারবেন না পরিবহন শ্রমিকরা। আমরা ইতোমধ্যে মালিকদেরকে মজুরি বাড়ানোর কথা বলেছি। বাস না চললে শ্রমিকদেরই লোকসান হয়," বলেন তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ শিপিং ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (বিএসডব্লিউএফ) অনুসারে, সারা দেশে নৌ পরিবহনে কর্মরত প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক রয়েছে।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুল আলম বলেন, "আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি জ্বালানির দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। এখন সব দ্রব্যের দাম বাড়ছে। ফলে শ্রমিকদের মজুরিও বাড়াতে হবে। অন্যথায় শ্রমিকদের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।"
"সবকিছুর দাম যখন বাড়ছে, তখন মজুরি না বাড়লে শ্রমিকরা বাঁচবে কী করে?"- প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আশিকুল আরো জানান, "একজন নৌ পরিবহন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৭ হাজার ৫০০ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে তা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছি আমরা।"
পারাবত-১২ এর লঞ্চ মাস্টার মোঃ জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, "একজন শ্রমিক কিভাবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করবে? আমার পরিবারে ছয়জন সদস্য আছে এবং আমি মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পাই। আমার পরিবারের খরচ বহন করতে এই টাকা মোটেই যথেষ্ট নয়।"