দুর্নীতির মামলায় ‘পলাতক’ সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহার ১১ বছরের জেল
তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ (৯ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় দেন।
তার ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত ৭৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাকে জরিমানা করা হয়েছে ৯৫ লাখ টাকা।
এই প্রথম সাবেক কোনো বিচারপতি দোষী সাব্যস্ত হলেন।
২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এস কে সিনহাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে নজিরবিহীন টানাপড়েনের মধ্যে ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর সেখানে থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এস কে সিনহা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন তিনি।
মামলায় আরও আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
তারা হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) সাবেক অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবু হক চিশতী, ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়। এদের মধ্যে এমডি এ কে এম শামীমের চার বছরের কারাদণ্ড ও বাকি আসামিদের তিন বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান ও একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন মাহবুবুল হক চিশতী। আর বাকি ছয়জন জামিনে। অন্যদিকে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সফিউদ্দিন আসকারী আহমেদ, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক রয়েছেন। পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেননি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অভিযুক্তরা তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৪ কোটি টাকা ভুয়া ঋণের ব্যবস্থা করে পে-অর্ডারের মাধ্যমে এস কে সিনহার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন।
এস কে সিনহা নগদ, চেক এবং পে-অর্ডারে অন্য অ্যাকাউন্টে সেসব অর্থ স্থানান্তর করেন; দুর্নীতি দমন আইন এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অধীনে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পরে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ বাদী হয়ে মামলা করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
ওই বছরের ডিসেম্বরে দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
একই বছরের ১৩ আগস্ট আদালত এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।