দুই সপ্তাহে রডের দাম বেড়েছে টনে ৭,০০০ টাকা
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে এমএস (মাইল্ড স্টিল) রডের দাম। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে টনপ্রতি এমএস রডের দাম ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও বিলেটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।
কেএসআরএম গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, 'রডের দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ আর্ন্তজাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ ও স্ক্র্যাপ জাহাজের বুকিং দর বৃদ্ধি। ২০২০ সালে জুলাই থেকে সেপ্টম্বর পর্যন্ত আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রতি টন স্ক্র্যাপের দাম ছিল ২৬৫-২৭০ ডলার। কিন্তু বর্তমানে স্ক্র্যাপের বুকিং দর ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
'অর্থাৎ স্ক্র্যাপের দাম প্রায় দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আমরা সরকারের মেগা প্রজেক্ট এবং ক্রেতাদের সামর্থ্যের কথা ভেবে পণ্যের দাম দ্বিগুণ করতে পারিনি। এখনও উৎপাদন খরচের সাথে সমন্বয় করে পণ্য বিক্রি করছি।'
এমএস রডের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ইস্পাতের বাজারে বর্তমানে তিন কোয়ালিটির এমএস রড রয়েছে। এগুলো হলো: অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বা অটো কারখানাগুলোতে তৈরি ৭৫-গ্রেড (৫০০ টিএমটি), সেমি-অটো কারখানাগুলোতে তৈরি ৬০-গ্রেড (৫০০ ওয়াট) এবং সাধারণ বা ৪০-গ্রেডের রড।
বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতি টন ৭৫-গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে ৭৪ হাজার থেকে ৭৮ হাজার টাকায়। দুই সপ্তাহ আগেও এই গ্রেডের প্রতি টন রডের দাম ছিল ৬৭ হাজার থেকে ৭৩ হাজার টাকা।
এদিকে রডের পাশাপাশি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ইস্পাত তৈরির কাঁচামাল বিলেট, প্লেট ও স্ক্র্যাপের দামও। বর্তমানে বাজারে প্রতি টন স্ক্র্যাপ ৫৫ হাজার টাকা, প্লেট ৬০ হাজার টাকা এবং বিলেট ৬৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহে আগে স্ক্র্যাপ ৫০ হাজার টাকা, প্লেট ৫৬ হাজার টাকা এবং বিলেট ৬০-৬১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে অন্যান্য খাতের মতো গত বছরের মার্চ থেকে স্থবিরতা শুরু হয় দেশের নির্মাণ খাতেও। করোনা ও বর্ষার কারণে টানা ৫-৬ মাস স্থবিরতা শেষে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ফের চাঙা হতে শুরু নির্মাণ খাত। এরপর দফায় দফায় বাড়তে থাকে নির্মাণ পণ্য এমএস রডের চাহিদা।
গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি নভেম্বর পর্যন্ত পণ্যটির দাম টন প্রতি ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষ গত দুই সপ্তাহে পণ্যটির দাম সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের পাইকারি রড ব্যবসায়ী মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এসএম কামরুজ্জামান বলেন, 'চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে গত নভেম্বর থেকে নির্মাণ পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেয় কারখানা মালিকরা। এর পর থেকে দফায় দফায় বাড়তে শুরু করে পণ্যটির দাম। এতে গেল এক বছরের ব্যবধানে পাইকারি বা মিল পর্যায়ে পণ্যটির দাম টনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।'
তবে কারখানা মালিকরা জানান, দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক বাজারে গত এক বছরে রড উৎপাদনের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও বিলেটের দাম টনপ্রতি ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার পর্যন্ত টাকা বেড়েছে। এর ফলে উৎপাদন মূল্যের সাথে দামের সমন্বয় করতে রডের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
গোল্ডেন ইস্পাতের পরিচালক সরোয়ার আলম বলেন, দেশের ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল শতভাগ আমদানিনির্ভর। এর মাঝে ৭৫ শতাংশ বিলেট সরাসরি আমদানি হয় এবং বাকি ২৫ শতাংশ জাহাজ-ভাঙা খাত থেকে যোগান আসে। দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক বাজারে রড উৎপাদনের কাচাঁমালের দাম বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'ফেব্রুয়ারি-মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের বুকিং দর ছিল মাত্র ৪৬০-৪৭০ ডলার। সেই বুকিং দর এখন ৬০০ ডলারে ঠেকেছে। একইভাবে দেশীয় বাজারে গত বছরের নভেম্বরে স্ক্র্যাপের দাম ছিল টনপ্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা। যা বর্তমানে ৫৪-৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।'
অর্থাৎ দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক বাজারে ইস্পাত শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এমএস রডের দাম বেড়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেন সারোয়ার।