হারিয়ে যাচ্ছে পেঙ্গুইন
‘কোটপড়া ভদ্রলোক’ হিসেবে পরিচিতি আছে পেঙ্গুইনদের। বসবাস করে হিমশীতল মেরু অঞ্চলে। পেঙ্গুইন পরিবারের কোনো প্রজাতি আকাশে উড়তে পারে না। দলবেঁধে বসবাসে অভ্যস্ত পেঙ্গুইন একটি উভচর প্রাণী, যাদের বিচরণস্থল স্থলভাগ আর পানিতে।
মেরুর হিমশীতল পরিবেশে তাপমাত্রা শূন্যের চাইতে ৪০ ডিগ্রী নিচে নেমে যাওয়াটা স্বাভাবিক এক ঘটনা। তীব্র ঠান্ডা, মেরু শেয়াল আর ভাল্লুকের মতো শিকারী প্রাণীর হাত থেকে সুরক্ষিত থাকতেই দলবদ্ধ হয়ে কলোনী গড়ে তোলে পেঙ্গুইনের দল।
কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন মেরু অঞ্চলে হিমশৈল গলছে। তাপমাত্রাও বেড়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। এর ফলে চিরচেনা প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বাস্তুসংস্থানে যে নেতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে পেঙ্গুইনদের জনসংখ্যায়।
সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক জরিপে দেখা যায়, অ্যান্টার্কটিক বা দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে কিছু পেঙ্গুইন কলোনির জনসংখ্যা গত ৫০ বছরে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা এর জন্য সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ি করেছন।
সংখ্যা কমার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইন প্রজাতি। প্রানীটি রিংড বা ব্রডেড পেঙ্গুইন নামেও পরিচিত। অর্থ শতাব্দী আগে করা এক জরিপের চাইতে বর্তমানে তাদের সংখ্যা কমেছে আশঙ্কাজনক হারে।
পরিবেশবাদী দল গ্রিনপিসের সঙ্গে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী বিজ্ঞানী দক্ষিণ মেরুর এলিফ্যান্ট আইল্যান্ডে যান। দ্বীপটি পেঙ্গুইনদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল। সেখানে তারা উভচর প্রানীটির জনসংখ্যা পতনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।
১৯৭১ সালের জরিপে এলিফ্যান্ট দ্বীপে এক লাখ ২২ হাজার ৫৫০টি পেঙ্গুইন বসবাস করার রেকর্ড নথিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, এই সংখ্যা ৫২ হাজার ৭৮৬টিতে নেমে এসেছে। অর্থাৎ গত পাঁচ দশকে দ্বীপটিতে পেঙ্গুইন সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ কমেছে। অবশ্য কলোনিভেদে এই সংখ্যা কম বেশি হচ্ছে। এলিফ্যান্ট আইল্যান্ডে ক্রিস্টক্যাম্প নামক এক কলোনিতে এই সংখ্যা ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। খবর সিএনএনের।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন সাগর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে। এর ফলে ক্রিল নামক সামুদ্রিক চিংড়ির সংখ্যায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ক্রিল সংখ্যা কমায় তাদের ওপর নির্ভর ছোট মাছেদের দলগুলোও এখন বিপন্ন। এসব কিছুর সম্মিলিত প্রভাব পড়েছে পেঙ্গুইনের খাদ্য তালিকায়। মূলত, ক্রিল এবং ছোট মাছ খেয়েই পেঙ্গুইনেরা জীবনধারণ করে।
গ্রিনপিসের স্বেচ্ছাসেবক বিজ্ঞানী এবং স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের পেঙ্গুইন গবেষক নোয়াহ স্ট্রাইকার সিএনএনকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিধ্বংসী প্রভাবে দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের খাদ্য চক্র এখন ভেঙ্গে পড়ার মুখে। পেঙ্গুইন জনসংখ্যা কমে যাওয়া এর গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
এই বিজ্ঞানী আরও বলেন, পেঙ্গুইন, সীল এবং তিমিরা সরাসরি ক্রিল জনসংখ্যার ওপর নির্ভরশীল। আর ক্রিলের সংখ্যা নির্ভর করে সামুদ্রিক বরফের অস্তিত্বের ওপর। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যদি বরফ গলতেই থাকে, তা আসলে খাদ্য চক্রের শীর্ষে থাকা সকল প্রাণীর অস্তিত্বের জন্যেই বড় হুমকি হয়ে উঠবে।
এদিকে বিজ্ঞানীরা এমন সময় এই গবেষণা প্রকাশ করলেন, যার কিছুদিন আগেই দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস (৬৪ দশমিক ৯৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট) তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড প্রকাশ করা হয়। এটা ২০১৫ সালের মার্চে প্রকাশিত সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের রেকর্ডকে অতিক্রম করে।