পেঙ্গুইনের রাজ্যে পাঁচ মাস; হাড় কাঁপানো অ্যান্টার্কটিকায় ‘পোস্টমাস্টার’-এর চাকরি!
জর্জ ক্লার্ক, একজন পেশাদার 'টেন্ট মাস্টার'। জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংগীত উৎসবে তাঁবু টাঙ্গানোর কাজ করেন তিনি। তবে কখনও পোস্ট অফিস পরিচালনা করা হয়নি তার, পেঙ্গুইন গণনার কাজ তো অনেক দূরের ব্যাপার।
তবে, পেঙ্গুইন গণনার মতো এমন অদ্ভুত কাজও তার দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে যাবে যখন তিনি অ্যান্টার্কটিকায় বিশ্বের সর্বদক্ষিণের জাদুঘর এবং পোস্টঅফিসে নতুন কর্মচারী হিসেবে যোগদান করবেন।
বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম পোস্টঅফিসটি পরিচালনার জন্য এবছর ৫ জন সদস্যকে নিয়োগ দিয়েছে ইউকে অ্যান্টার্কটিক হেরিটেজ ট্রাস্ট। সংস্থাটি ব্রিটিশদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘাঁটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কাজ করে।
আগামী মাসেই পাঁচ সদস্যের এই দল দক্ষিণ আমেরিকার অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের কাছে গৌডিয়ার দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। ছোট্ট এই দ্বীপের আকার একটি ফুটবল মাঠের সমান।
দ্বীপে অবস্থানকালীন এই পাঁচ মাস তাদের তীব্র ঠান্ডা এবং প্রায়-নিরন্তর দিনের আলোতে স্থানীয় জেন্টু পেঙ্গুইনদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে, সংরক্ষণ মেরামত করতে হবে, বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং ক্রুজ জাহাজের দর্শকদের স্বাগত জানাতে হবে।
৩৪ বছর বয়সি ক্লার্ক দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার একটি নিবন্ধ পড়ার পর এই কাজের জন্য আবেদন করেন। তিনি বলেন, "আমি মনে করেছিলাম নতুন রোমাঞ্চকর কিছুর অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে—এবং আবেদন করার ক্ষেত্রে আমার কিছু হারানোর ছিল না। তাই আমি ভাবলাম, কেন চেষ্টা করব না?"
তিনি বলেন, "প্রতিদিন সকালে অ্যান্টার্কটিকার দিকে তাকিয়ে এক কাপ কফি পান করতে আর তর সইছে না, আশা করি একটি তিমি মাছেরও দেখা পাব।"
পাঁচ সদস্যের ছোট দলটি কাজগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেবে, তবে ক্লার্কের বিশেষ দায়িত্ব হবে পোস্টমাস্টার হিসেবে, যেখানে তিনি ছোট্ট কাঠের জাদুঘরে যেসব দর্শনার্থীদের রেখে যাওয়া চিঠি ও পোস্টকার্ডগুলো প্রক্রিয়া করবেন।
তিনি বলেন, "এমন একটি দূরবর্তী স্থানে পোস্টঅফিস থাকাটা একটু পাগলামো মনে হতে পারে। তবে অনেকেই পৃথিবীর সর্বদক্ষিণের পোস্ট অফিস থেকে চিঠি বা পোস্টকার্ড পাঠানোর অভিজ্ঞতা নিতে চান"।
"সুতরাং আমি চিঠিগুলো সাজাব, স্ট্যাম্প বাতিল করব, এবং পরে সেগুলো আবার ক্রুজ জাহাজগুলোর মাধ্যমে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠিয়ে দেব", যোগ করেন তিনি।
অন্য দলের সদস্যরা বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ, জাদুঘর পরিচালনা এবং ছোট দোকান পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন; মৌসুমের শেষের দিকে তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন দুইজন বিশেষজ্ঞ কাঠমিস্ত্রি, যারা ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের দ্বারা পূর্বে ব্যবহৃত ভঙ্গুর কাঠের কাঠামোগুলোর মেরামত করবেন। এই কাঠামোগুলো মহাদেশের উষ্ণতার কারণে বিশেষভাবে হুমকির সম্মুখীন।
সমুদ্র সংরক্ষণে অভিজ্ঞতার কারণে এই দলের নেতা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ৩১ বছর বয়সী লু হোস্কিন। তিনি বলেন, "দ্বীপে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের সাথে আমাদের প্রতিদিনই দেখা হবে। তাই আমাদের ওপর বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে ইউকে অ্যান্টার্কটিক হেরিটেজ ট্রাস্টের অসাধারণ কাজগুলো তাদের কাছে প্রদর্শন করার।"
"এই সংস্থার লক্ষ্য হলো দ্বীপের সংরক্ষণের পাশাপাশি মানুষকে মহাদেশটিকে ভিন্নভাবে দেখতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই চমৎকার স্থানটিকে রক্ষা করার অনুপ্রেরণা দেওয়া," তিনি বলেন।
ক্লার্ক জানান, চূড়ান্ত দলটি বাছাই করা হয়েছিল কিছু 'অদ্ভুত ও আশ্চর্যজনক' কাজের মাধ্যমে। যেমন- চোখ বেঁধে ওভেন গ্লাভস পরে তাঁবু স্থাপন করা। তিনি মজা করে বলেন, "আমি গর্ব করতে চাই না, কিন্তু তাঁবু টাঙানোর অভিজ্ঞতা থাকায় আমরা এটি দু'বার সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছিলাম।"
নিসেন হাটের একটি সাধারণ ডরমিটরিতে থাকবেন তারা, প্রত্যেকের জন্য সীমিত কিছু জিনিসপত্র থাকবে। তিনি বলেন, "এই ঘাঁটিতে ইন্টারনেট রয়েছে, তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে খুব বেশি ব্যবহার করব না।"
"আমি একজন শিল্পী, আঁকাআঁকি করি। আমি জানি যে কেউ কেউ সেলাই করার উপকরণ এবং ধাঁধার খেলনাও নিয়ে আসবে। আমাদের একটি ছোট লাইব্রেরি রয়েছে যেখানে সবাই বই পড়তে পারবে। তাই আমরা সবাই আমাদের প্রিয় একটি উপন্যাস এবং প্রিয় একটি নন-ফিকশন বই নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সেগুলো একে অপরের সঙ্গে বদলাব", যোগ করেন তিনি।
ক্লার্ক আরও বলেন, "এত দূরবর্তী স্থানে যাওয়ার মজার একটি দিক হলো, বাইরের দুনিয়া থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন থাকা যায়। তাই আমি নিশ্চিত, প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখানে অন্তত কেউ ফোনে স্ক্রল করে সময় কাটাবে না"।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন