জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ থাকবে কি না, সিদ্ধান্ত ‘আইন পর্যবেক্ষণের পর’
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটূক্তি করায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ থেকেও অপসারণ করা হবে কিনা, সে বিষয়ে আইন পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে একটি সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, "গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তিনি মেয়র পদে থাকবেন কিনা সেটা আইন পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।"
এর আগে গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহীর এক বৈঠকে মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
আইন কী বলে?
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এ 'মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাময়িক বরখাস্তকরণ' বিষয়ে বলা হয়েছে-
১২৷ (১) যেক্ষেত্রে কোন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অথবা কাউন্সিলরের অপসারণের জন্য ধারা ১৩ এর অধীন কার্যক্রম আরম্ভ করা হইয়াছে অথবা তাহার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলায় অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হইয়াছে, সেইক্ষেত্রে সরকার, লিখিত আদেশের মাধ্যমে, ক্ষেত্রমত, মেয়র বা কোন কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন সিটি কর্পোরেশনের কোন মেয়রকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ প্রদান করা হইলে উক্ত আদেশপ্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত মেয়র, ক্রমানুসারে মেয়র প্যানেলের জ্যেষ্ঠ সদস্যের নিকট স্বীয় দায়িত্ব হস্তান্তর করিবেন এবং উক্ত মেয়রের বিরুদ্ধে আনীত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত অথবা উক্ত মেয়র অপসারিত হইলে, তাহার পরিবর্তে নূতন মেয়র নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত মেয়রের দায়িত্ব পালন করিবেন।
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন কর্পোরেশনের কোন কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ প্রদান করা হইলে উক্ত আদেশপ্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত কাউন্সিলর, মেয়র কর্তৃক মনোনীত পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলরের নিকট স্বীয় দায়িত্ব হস্তান্তর করিবেন এবং উক্ত কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আনীত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত অথবা উক্ত কাউন্সিলর অপসারিত হইলে, তাহার পরিবর্তে নূতন কাউন্সিলর নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর, সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করিবেন।
এই আইনের 'মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণ' অংশে বলা হয়েছে-
১৩৷ (১) মেয়র অথবা কাউন্সিলর তাহার স্বীয় পদ হইতে অপসারণযোগ্য হইবেন, যদি তিনি-
(ক) যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে সিটি কর্পোরেশনের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন; অথবা
(খ) নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হন;
(গ) দায়িত্ব পালন করিতে অস্বীকার করেন অথবা শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন;
(ঘ)অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন;
(ঙ) ধারা ৯ (৩) অনুযায়ী নির্বাচনের অযোগ্য ছিলেন মর্মে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তিন মাসের মধ্যে প্রমাণিত হয়;
(চ) বার্ষিক ১২টি মাসিক সভার পরিবর্তে ন্যুনতম ৯টি সভা গ্রহণযোগ্য কারণ ব্যতীত অনুষ্ঠান করিতে, বা ক্ষেত্রমত, উক্ত সভাসমূহে উপস্থিত থাকিতে ব্যর্থ হন।
ব্যাখ্যাঃ এই উপ-ধারায় বর্ণিত 'অসদাচরণ' বলিতে ক্ষমতার অপব্যবহার, এই আইন অনুযায়ী বিধি-নিষেধ পরিপন্থী কার্যকলাপ, দুর্নীতি, অসদুপায়ে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ, পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, ইচ্ছাকৃত অপশাসন, নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল না করা বা অসত্য তথ্য প্রদান করাকে বুঝাইবে।
(২) বিধি দ্বারা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ সরকারি গেজেটে আদেশ দ্বারা, উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত কারণে মেয়র বা কোন কাউন্সিলরকে অপসারণ করিতে পারিবে।
(৩) অপসারণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করিবার পূর্বে বিধি মোতাবেক তদন্ত ও অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হইবে।
(৪) সিটি কর্পোরেশনের কোন মেয়র বা কাউন্সিলরকে উপ-ধারা (২) অনুযায়ী তাহার পদ হইতে অপসারণ করা হইলে, ঐ আদেশের তারিখ হইতে ত্রিশ দিনের মধ্যে তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট আপিল করিতে পারিবেন এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উক্ত আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপসারণ আদেশটি স্থগিত থাকিবে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ প্রদানের পর রাষ্ট্রপতি উক্ত অপসারণ আদেশটি পরিবর্তন, বাতিল বা বহাল রাখিতে পারিবেন।
(৫) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উপ-ধারা (৪) এর অধীন প্রদত্ত আদেশ চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।
(৬) এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, অপসারিত কোন ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের কার্যকালের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না।