আঞ্চলিক সংযোগ বাড়াতে ২০৪১ সালের মধ্যে হবে ৮টি এক্সপ্রেসওয়ে
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী যোগাযোগ গড়ে তুলতে দেশের সমুদ্রবন্দর ও কয়েকটি স্থলবন্দরকে সংযুক্ত করে আটটি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য একটি মেগা পরিকল্পনা প্রস্তুত করছে সরকার।
পরিকল্পনা প্রস্তুতকারী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বলছে, দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলকে যুক্ত করতে পাঁচটি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হবে। আর পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলকে সংযুক্ত করবে তিনটি এক্সপ্রেসওয়ে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন রুটে নির্মিতব্য প্রস্তাবিত চার লেনের এক্সপ্রেসওয়েগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ২ হাজার ৩৫২ কিলোমিটার। কেবল দূরপাল্লার যাত্রী ও মালবাহী যানবাহনকে টোল প্রদানের বিনিময়ে এক্সপ্রেসওয়েগুলো ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে।
প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়েগুলোতে ঢাকার নাম রাখা হয়নি।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে, এখনকার বাজার মূল্যে প্রস্তাবিত ২ হাজার ৩৫২ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হবে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যদিও ভবিষ্যতে নির্মাণ সামগ্রী ও ভূমির জমির দাম বৃদ্ধির কারণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফলে এই বিশাল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অর্থায়ন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত আটটি এক্সপ্রেসওয়ে থেকে অর্থনৈতিক সুফল পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এই এক্সপ্রেসওয়েগুলোই ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হবে।
দুবাইসহ বিশ্বের অনেক দেশ ও অঞ্চল এখন পূর্বে বাস্তবায়িত সুপরিকল্পিত সড়ক অবকাঠামো প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে উল্লেখ করে তারা বলছেন যে, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডের জন্য প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়েগুলোর ভিত্তি স্থাপন করা দরকার।
এক্সপ্রেসওয়েগুলো ব্যবহার করে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো যেমন ঢাকার যানজট এড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে, তেমনি এর ফলে রাজধানীতেও যানবাহনের চাপ কমবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলকে যুক্ত করার জন্য সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর থেকে কক্সবাজারের গুনদুম পর্যন্ত প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এটি চট্টগ্রাম ও মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরকেও সংযুক্ত করবে।
ময়মনসিংহের গোবরাকুড়া স্থলবন্দর থেকে আরেকটি এক্সপ্রেসওয়ে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় এসে দুই দিকে চলে যাবে—এক ভাগ যাবে মোংলা বন্দরে, অন্যটি পায়রা বন্দরে। এই এক্সপ্রেসওয়ের জন্য মানিকগঞ্জ-রাজবাড়ী পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে আরও একটি এক্সপ্রেসওয়ে নীলফামারীর জলঢাকায় দুই ভাগে বিভক্ত হবে—একটি যাবে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের দিকে, অন্যটি লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের দিকে।
এদিকে পূর্ব ও পশ্চিমে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত একটি এক্সপ্রেসওয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি চাঁদপুর-শরীয়তপুর পয়েন্টে মেঘনা নদীর ওপর একটি সেতুসহ তামাবিল-গুনদুম এক্সপ্রেসওয়ের সাথে মিলিত হবে।
আরেকটি এক্সপ্রেসওয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তামাবিল-গুনদুম এক্সপ্রেসওয়েকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত করবে বলে কথা রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতুসহ তামাবিল থেকে জয়পুরহাট পর্যন্ত আরও একটি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ইউরোপ ও অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চলে আঞ্চলিক যোগাযোগ একটি সাধারণ বিষয়। এশিয়া এখনও এই ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ এশিয়ার কিছু দেশ সাম্প্রতিক সময়ে ভবিষ্যৎ আঞ্চলিক সংযোগের জন্য সড়ক ও হাইওয়ে নির্মাণের ওপর জোর দিয়েছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বাংলাদেশও এক্সপ্রেসওয়ের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন যে, আঞ্চলিক সংযুক্তির জন্য সরকারের আরও কয়েকটি পরিকল্পনা রয়েছে। সেসবের মধ্যে আছে এশিয়ান হাইওয়ে কানেক্টিভিটি, সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) রোড কানেক্টিভিটি, এবং সার্ক কানেক্টিভিটি।
আঞ্চলিক সংযুক্তির জন্য দেশের বিদ্যমান সড়ক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে রাস্তার ওপর চাপ বাড়ার এবং অর্থনৈতিক সুবিধা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন এক্সপ্রেসওয়েগুলো নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, শক্তিশালী সংযুক্তি কেবল আন্তঃ ও আঞ্চলিক বাণিজ্যকেই শক্তিশালী করে না, উচ্চ আয় এবং সমৃদ্ধিও নিয়ে আসে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ বাড়লে তা দক্ষতা ও বাড়তি উৎপাদনশীলতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাণিজ্য সহজ করার সঙ্গে পরিবহন সংযোগ ব্যবস্থা যোগ হলে পরিবহন ও লজিস্টিকস খরচ কমবে। ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়বে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা শাখা) মো. জাকির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়েগুলোর রুট জরিপের মাধ্যমে বাছাই করা হয়েছে, যদিও সরকার এখনও এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। এক্সপ্রেসওয়েগুলোর তালিকা আরও ছোট হতে পারে।'
তিনি বলেন, 'সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে চায়। সে কথা মাথায় রেখেই এক্সপ্রেসওয়ের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিছু এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ ২০৪১ সালের আগেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।'
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. শামসুল হক বলেন, 'বাংলাদেশে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের এটাই সঠিক সময়। আমরা যদি এখনই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ না করি, তাহলে ভবিষ্যতে আর সম্ভব হবে না। কারণ ভূমির তুলনায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি। তাই এখনই জমি অধিগ্রহণ করা উচিত।'
কিছু প্রতিবেশী দেশ ইতিমধ্যেই এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'পাকিস্তানে ১১টি, ভারতে ২২টি এবং মালয়েশিয়ায় ৩৭টি এক্সপ্রেসওয়ে আছে। কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের কোনো অগ্রগতি হয়নি। ঢাকা-মাওয়াই আমাদের একমাত্র এক্সপ্রেসওয়ে।'
এক্সপ্রেসওয়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করা শামসুল হক বলেন, সরকারের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কৌশলটা হলো উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিমাঞ্চলে এক্সেপ্রেসওয়ে নির্মাণ করে দেশের সব অঞ্চলের মধ্যে শক্তিশালী যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপন করা।
তিনি বলেন, 'ভারতে উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম এবং চতুর্দিকের পেরিফেরিতে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে মহাপরিকল্পনা ২৫ বছর আগে পাস হয়েছে। পরে ধাপে ধাপে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
'বাংলাদেশে জাতীয় হাইওয়েগুলো পাশে হাটবাজারসহ অন্যান্য অবকাঠামো এবং ধীরগতির যানের কারণে স্থানীয় সড়কের মতো রয়ে গেছে। এ কারণে এক্সেপ্রেসওয়ে নির্মাণের একটি রূপরেখা দরকার। এসব এক্সেপ্রেসওয়ের অর্থনৈতিক সুফল এখন পাওয়া না গেলেও ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে সুফল পাওয়া যাবে।'
এক্সপ্রেসওয়ে পরিকল্পনা
প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়েগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ হবে ৫৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তামাবিল-গুনদুম এক্সপ্রেসওয়ে। তামাবিল থেকে সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম হয়ে এটি কক্সবাজার পর্যন্ত হবে।
সীমান্তে প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সংযোগ স্থাপন করবে এই এক্সপ্রেসওয়ে। মিয়ানমারের সাথে থাকা গুনদুম সীমান্ত ব্যবহারের মাধ্যমে আসিয়ানভুক্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রাম ও মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর ব্যবহারেও প্রতিবেশী দেশগুলোকে উৎসাহিত করবে।
ময়মনসিংহ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী এবং বরগুনার বুক চিরে যাবে গোবরাকুড়া-পায়রা বন্দর এক্সপ্রেসওয়ে। রাজবাড়ী-মানিকগঞ্জ পয়েন্টে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় পদ্মা সেতুসহ এর দৈর্ঘ্য হবে ৩৭৫ কিলোমিটার।
এদিকে এক্সপ্রেসওয়েতে চাঁদপুর-শরীয়তপুর পয়েন্টে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে সেতু বিভাগ। আগামী বছর জরিপ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গোবরাকুড়া-পায়রা বন্দর এক্সপ্রেসওয়েকে মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এজন্য গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত আরও ৭৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে।
এই এক্সপ্রেসওয়ে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল ও পটুয়াখালী এবং বরগুনাসহ বিভিন্ন জেলাকে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জের সঙ্গে যুক্ত করবে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর পর্যন্ত বুড়িমারী-ভোমরা এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ৪৩২ কিলোমিটার।
এটি সর্ব-উত্তরের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরকেও সংযুক্ত করবে। এ লক্ষ্যে বাংলাবান্ধা থেকে নীলফামারীর জলঢাকা পর্যন্ত আরও ৮৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এক্সপ্রেসওয়েটি এই দুটো বন্দরকে সংযুক্ত করে এসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াবে।
মেঘনা নদীর ওপর একটি সেতুসহ ২৯৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বেনাপোল-লাকসাম এক্সপ্রেসওয়ে খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি কমাবে।
এটি ফরিদপুরের গোবরাকুড়া-পায়রা বন্দর এক্সপ্রেসওয়ে এবং যশোরের বুড়িমারী-ভোমরা এক্সপ্রেসওয়ের সাথে সংযুক্ত হবে।
সোনামসজিদ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ৩১০ কিলোমিটার। এটি তামাবিল-ঘুমধুম এক্সপ্রেসওয়ের সাথেও যুক্ত হবে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সঙ্গে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দূরত্ব কমিয়ে আনবে এই এক্সপ্রেসওয়ে।
জয়পুরহাট-টু-তামাবিল এক্সপ্রেসওয়েকে গোবরাকুড়া-পায়রা বন্দর এবং বুড়িমারী-ভোমরা এক্সপ্রেসওয়ের সাথে যুক্ত করা হবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ২২৬ কিলোমিটার।
সান-রিজিওনাল রোড ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট প্রিপারেটরি প্রকল্পের জন্য কারিগরি সহায়তার আওতায় পরিকল্পনাটি প্রস্তুত করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক
প্রস্তাবিত আটটি এক্সপ্রেসওয়ের সবগুলো থেকে অর্থনৈতিক সুফল পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
বন্দর সুবিধা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার কারণে ৫৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তামাবিল-গুনদুম এক্সপ্রেসওয়ে যে বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাই-ই নিশ্চিত। কিন্তু ৪৩২ কিলোমিটারের বুড়িমারী-ভোমরা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে কোনো অর্থনৈতিক সুফল পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়েগুলোর অর্থনৈতিক সুফল সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. শামসুল হক বলেন, 'পৃথিবীর যেকোনো দেশই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে খরচ-সুবিধার চেয়ে কৌশলগত কারণকে বেশি গুরুত্ব দেয়। যেমন, কস্ট-বেনিফিট বিবেচনায় নিলে অস্ট্রেলিয়াতে অনেকগুলো এক্সেপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রয়োজন হতো না। কারণ ওই দেশে কোনো কোনো এক্সপ্রেসওয়েতে ৩০ মিনিটেও কোনো গাড়ি দেখা যায় না।'
উন্নত দেশগুলো রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আঞ্চলিক সংযোগ এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ভবিষ্যত উন্নয়নকে বিবেচনায় নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, কোনো দেশেই সবগুলো এক্সপ্রেসওয়ে জনপ্রিয় হয় না।
তিনি আরও বলেন, বুড়িমারী-ভোমরা এক্সেপ্রেসওয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে। এর মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে।
এছাড়া ইন্টারলক দেশ নেপাল, ভুটানের সঙ্গে এ অঞ্চলের দেশগুলো যোগাযোগ স্থাপনে সুবিধা পাবে। ফলে ভৌগলিক অবস্থার কারণে এ ধরনের এক্সেপ্রেসওয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
শামসুল হক আরও বলেন, দুবাইয়ের মেন্ট্রো রেল প্রকল্পও শুরুতে খরচের তুলনায় লাভ তুলতে পারেনি। ওই সময়ে দুবাইয়ের ৫৫ লাখ জনবল দিয়ে কস্ট-বেনিফিট পাওয়ার কথাও ছিল না। কিন্ত এখন দুবাইতে জনসংখ্যার চেয়ে সাতগুণ ট্যুরিস্ট আসছে। পরিকল্পিতভাবে মেট্রো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বলে এখন তার সুফল তারা পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অভ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে হলে নিজেদের স্বার্থেই এসব এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে।
তিনি বলেন, 'আঞ্চলিক সংযোগ বিবেচনায় আনলে সবগুলো এক্সপ্রেসওয়ে থেকে সমান অর্থনৈতিক সুফল পাওয়া যাবে না। কিন্ত সামগ্রিকভাবে সবগুলো এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনে কোনো কোনো এক্সেপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাণিজ্যিক সংযোগ, কূটনৈতিক বিষয়েও সফলতা পেতে পারে।'
'ফলে প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়েকে শুধু অর্থনৈতিক সুফল দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না, অন্যান্য বিষয়ও এর সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।'
তবে কোনো কোনো স্থানে ভূমির অপর্যাপ্ততা এবং নির্মাণ ব্যয়কে বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যমান সড়কের সঙ্গেই এক্সপ্রেসওয়ে করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।