ভবিষ্যত প্রজন্মের সিগারেট কেনা নিষিদ্ধ করলো নিউজিল্যান্ড
২০২৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ দেশকে ধূমপানমুক্ত করে তোলার উদ্দেশ্যে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের সিগারেট কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নিউজিল্যান্ড।
এখন থেকে দেশটিতে ১৪ বছরের কম বয়সী কেউ ভবিষ্যতে আর কখনোই সিগারেট কেনার অনুমতি পাবে না। ধূমপানমুক্ত দেশ গড়ে তুলতে চলমান কর্মসূচির আওতায় এই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে নিউজিল্যান্ড সরকার।
প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেনের মৌলিক পরিকল্পনার অধীনে দেশের সবার জন্যেই তামাকজাত দ্রব্য কেনা অবৈধ ঘোষণার আগপর্যন্ত প্রতি বছর এই বয়সসীমা বাড়ানো হবে।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আয়েশা ভেরাল বলেন, "আমরা চাই তরুণ প্রজন্ম আর কখনোই ধূমপান শুরু না করুক। তাই তাদের কাছে সিগারেট বা তামাকজাত যেকোনো দ্রব্য বিক্রি বা সরবরাহ করাকে আমরা অপরাধ বলে বিবেচনা করবো।"
তিনি আরও বলেন, "এই নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর ১৪ বছর বয়সী কেউ আর কখনো এদেশে বৈধভাবে তামাকজাত পণ্য কিনতে পারবে না। আমরা তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণ-আবেদন ও এসব দ্রব্যের সহজলভ্যতা কমানোর চেষ্টা করছি। নতুন আইনে বলা আছে, শুধুমাত্র যেসব ধূমপান জাতীয় দ্রব্যে খুব সামান্য পরিমাণ নিকোটিন আছে, সেগুলোই বাজারে বিক্রি করা যাবে। তবে এ ধরনের পণ্য বিক্রি করতে পারবে এমন দোকানের সংখ্যাও অনেক কমিয়ে আনা হবে।"
তবে ডা. ভেরাল জানিয়েছেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা যেন সিগারেট বিক্রির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পারেন, সেজন্যে তাৎক্ষণিকভাবে এই আইন কার্যকরী হবে না।
নিউজিল্যান্ডজুড়ে মাত্র ৫০০টি দোকান সিগারেট বিক্রির অনুমতি পাবে এবং নতুন বিধিমালা কার্যকর হওয়ার পর তাদেরকে তামাকজাত পণ্য বিক্রির জন্য সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।
২০২৫ সালের মধ্যে ধূমপানের মাত্রা ৫ শতাংশ কিংবা তারও কমে নামিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নিউজিল্যাল্ড সরকার। তারই কৌশল হিসেবে ২০১১-২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর সিগারেটের দাম ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। তবে বাড়তি আর কোনো কর আরোপ হবে কিনা, তা এখনো জানানো হয়নি।
এদিকে সিগারেটের দাম হুহু করে বেড়ে যাওয়ায় সিগারেটের বিশাল কালোবাজার তৈরি হয়েছে দেশটিতে। এমনকি সিগারেট বিক্রি করে এমন দোকানগুলোতে হামলা চালানোর মতো অপরাধও অনেক বেড়ে গেছে।
বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে ২০টি মার্লবোরো সিগারেটসমেত একটি প্যাকেটের দাম ৩৩ নিউজিল্যান্ড ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৮৭৭ টাকা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, মূল্যবৃদ্ধির এই কৌশল তাদের ২০২৫ লক্ষ্য পূরণে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
নিউজিল্যান্ড মেডিক্যাল এসোসিয়েশন জানিয়েছে, বর্তমানে নিউজিল্যান্ডের ৮০ শতাংশ ধূমপায়ী নিজেদের ধূমপান শুরু করা নিয়ে অত্যন্ত অনুতপ্ত। আগামী প্রজন্ যে এই ধূমপায়ীদের দলে যোগ দিবে না, তা ভেবে তারা ভীষণ আনন্দিত।
বৃহস্পতিবার এনজেডএমএ-এর চেয়ারম্যান ডা. অ্যালিস্টার হামফ্রে বলেন, "ধূমপানমুক্ত প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারা হবে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সিগারেট খাওয়ার ফলে প্রতিদিন ১৪ জন নিউজিল্যান্ডবাসীর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এবং প্রতি তিনজন ধূমপায়ীর মধ্যে অন্তত দুজন এই ধূমপানের কারণে মারা যাচ্ছে। নতুন আইন আমাদেরকে '২০২৫ ধূমপানমুক্ত দেশ' গড়ার টার্গেট পূরণে কিছুটা সাহায্য করবে।"
এখানেই শেষ নয়, সিগারেটের প্যাকেটের উপর চরম সতর্কবার্তা লেখার মাধ্যমেও সচেতনতা ছড়ানোর চেষ্টা করছে নিউজিল্যান্ড। এর আগে অস্ট্রেলিয়াও দেশে ধূমপানের হার কমাতে একই পদক্ষেপ নিয়েছে।
সূত্র: ডেইলি মেইল