বাংলাদেশসহ ৪টি দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা আরোপ
বাংলাদেশ, চীন, মিয়ানমার এবং উত্তর কোরিয়ার সাথে যুক্ত বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এবং সংস্থার উপর মানবাধিকার-সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানায় তারা।
এদিকে, মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা আরোপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগ দিয়েছে কানাডা এবং যুক্তরাজ্য। এছাড়া, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের অধীনে উত্তর কোরিয়ার উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।
ডেপুটি ট্রেজারি সেক্রেটারি ওয়ালি আদেয়েমো এক বিবৃতিতে বলেন, "আমরা, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ও কানাডার সাথে কাজ করা গণতান্ত্রিক দেশগুলো ক্ষমতার অপব্যবহারকারী দেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে।"
ওয়াশিংটনে চীনের দূতাবাস এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে এটিকে, 'চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গুরুতর হস্তক্ষেপ' এবং 'আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণকারী মৌলিক নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন' বলে উল্লেখ করেছে। দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেন, এটি চীন-মার্কিন সম্পর্কের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করবে। ওয়াশিংটনকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়ার মিশন এবং মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ওয়াশিংটন দূতাবাসগুলো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
বাইডেনের দুই দিনব্যাপী ভার্চুয়াল সামিট ফর ডেমোক্রেসিতে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রপন্থী আইনের সমর্থন ঘোষণা করেন তিনি।
তার এই সম্মেলনে ১০০ জনেরও বেশি বিশ্ব নেতা মানবাধিকার বিষয়ক কিছু প্রতিশ্রুতি নেন। তাদের এই প্রতিশ্রুতিতে স্বৈরাচারীতা প্রতিহত করার পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং মানবাধিকারের প্রচার সম্ভব হবে।
এই সম্মেলনে চীনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থা, সেন্সটাইম গ্রুপকে বিনিয়োগের কালো তালিকায় যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত সেন্সটাইমের ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, জাতিগত উইঘুরদের সনাক্তকরণে ব্যবহৃত হতে পারে এটি।
শনিবার এক বিবৃতিতে সেন্সটাইম এই 'অভিযোগকে ভিত্তিহীন' বলে অভিহিত করে "এর সাথে সম্পর্কিত পদবি ও অভিযোগের তীব্র বিরোধিতা করেছে।"
"আমরা আমাদের ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত প্রযোজ্য আইন এবং নিয়ম মেনে চলেছি," জানায় কোম্পানিটি।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলোর অনুমান অনুযায়ী, চীনের সুদূর-পশ্চিম অঞ্চল জিনজিয়াং-এ সাম্প্রতিক বছরে এক মিলিয়নেরও বেশি লোক, প্রধানত উইঘুর জাতিগত মুসলিম সংখ্যালঘুদেরকে কোনো একটি বিশেষ নিয়মে আটক করা হয়েছে।
মিয়ানমার ও উত্তর কোরিয়া
ট্রেজারি জানায়, মিয়ানমারের দুটি সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং একটি সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে তারা। দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য রিজার্ভ সরবরাহ করে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। এদের মধ্যে রয়েছে সামরিক বাহিনী এবং পুলিশের জন্য অস্ত্র তৈরিকারক ডিরেক্টরেট অব ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। চলতি বছরের সেনা অভ্যূত্থানের সময় বিরোধীদের উপর চালানো নৃশংস ক্র্যাকডাউনে ব্যবহৃত হয়েছে এগুলো।
এছাড়া, ৪ জন আঞ্চলিক মুখ্যমন্ত্রীকেও টার্গেট করেছে ট্রেজারি। এদের মধ্যে রয়েছেন বাগো অঞ্চলে জান্তা প্রশাসনের প্রধান মিও সুই উইন। ট্রেজারির মতে, গত এপ্রিলে এই অঞ্চলে একদিনে কমপক্ষে ৮২ জন নিহত হয়।
মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সঙ্গে যুক্ত চারটি সংস্থার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য।
অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) মনিটরিং গ্রুপ অনুসারে, জান্তা বাহিনী মিলিটারি ক্র্যাকডাউনের সময় ১৩০০ এরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে।
মিয়ানমারের পাশাপাশি ট্রেজারি উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এছাড়া, সাবেক সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রী এবং সম্প্রতি জনগণের সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী রি ইয়ং গিলকেও নিষিদ্ধ করেছে তারা।
এদিকে উত্তর কোরিয়া থেকে শ্রমিক রপ্তানির সুবিধা নেওয়ার জন্য একটি রাশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়কেও টার্গেট করেছে ট্রেজারি।
দীর্ঘদিন ধরে তার অস্ত্র কর্মসূচির ওপর আরোপিত মার্কিন ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে উত্তর কোরিয়া।
এমনকি বেশ কয়েকবার উত্তর কোরিয়াকে তাদের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।কিন্তু তারা এতে রাজি হয়নি।
শুক্রবার চীন, বেলারুশ এবং শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তাসহ ১২ জনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
- সূত্র: রয়টার্স