তহবিল অনিশ্চয়তা, প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতে দুর্বলতায় অধরাই থেকে যাচ্ছে রেলওয়ের উন্নয়ন
বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০টি মিটার গেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহে একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় ২০১৬ সালে।
কিন্ত প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ কিনতে ইউরোপভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংক ক্রেডিট এগ্রিকোল কর্পোরেট এবং ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ৭১৩ কোটি টাকার ঋণের প্রতিশ্রুতি আদায় করতেই প্রকল্পে তিন বছরের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
এ বাণিজ্যিক ঋণ স্ট্যান্ডিং কমিটি অফ নন-কনসেশনাল ঋণের অনুমোদন পায় ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর। ঋণের এ জটিলতায় পড়ে এখনও ভোগান্তিতে রয়েছে প্রকল্পটি। তিনবার মেয়াদ বাড়ানোর পরও এখনও কেনা সম্ভব হয়নি ওই সব প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ।
এ প্রকল্পের মতো দীর্ঘ দিন আগে অনুমোদন পেলেও নির্মাণ বা ক্রয় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না চীন, ভারত, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান এবং বিডার্স ফাইন্যাসিংয়ের অর্থায়নের আট প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মেয়াদ ইতোমধ্যে একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে।
আবার দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে নির্মাণ কাজ হলেও বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়ে জটিলতায় পড়েছে অনেক প্রকল্প। কারণ যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে বাস্তবায়ন পর্যায়ে নকশা পরিবর্তন ও প্রকল্প সংশোধন করতে হয়। এ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক সহায়তা নির্ভর প্রকল্পে কাজ এগোচ্ছে খুবই ধীরগতিতে।
সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণ নিশ্চিত না করেই রেলের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এতে নির্মাণ কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না। এছাড়া প্রকল্প প্রস্তাব ও দরপত্র তৈরিতে দুর্বলতার কারণে জটিলতায় পড়ছে রেলের প্রকল্প।
অন্যদিকে ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়া, দরপত্র প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সম্মতি আদায়ে সময়ক্ষেপণের কারণেও অনুমোদিত প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে রেল খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ আসা শুরু হয়। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্থরগতি ও দুর্বলতার কারণে সে বিনিয়োগের সুফল এখনও অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে রেলওয়ের প্রায় ৪২টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকই বৈদেশিক সহায়তা নির্ভর প্রকল্প। এসব প্রকল্পের প্রায় সব প্রকল্পেরই একাধিকবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তারপরও প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। পুরাতন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ায় নতুন প্রকল্পগুলো নেওয়া যাচ্ছে না। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রেলের উন্নয়ন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, "রেলওয়ের বৈদেশিক সহায়তা নির্ভর প্রকল্পে অগ্রগতি কম হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। একেকটি প্রকল্পে একেক ধরণের সমস্যা রয়েছে। অর্থায়ন প্রক্রিয়াতে সমস্যা রয়েছে, আবার বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এই সমস্যাগুলো সমাধানে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এরপর প্রকল্পগুলোতে বাস্তবায়ন জটিলতা দূর হবে।"
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক এবং যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, "বাংলাদেশ জিটুজি মডেল ব্যবহার করে ভারত বা চীন থেকে ঋণ নিচ্ছে। এ মডেলে সময়ক্ষেপণ হয়, খরচ বাড়ে এবং প্রকল্পের সুফলও পাওয়া যায় না। এ মডেলে উন্নয়ন সহযোগীরা তাদের স্বার্থেই ঋণ দেয় এবং তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী অর্থছাড় করে। এ কারণে এর থেকে বের হয়ে এসে পিপিপিতে যাওয়া দরকার। তাহলে অর্থায়নের কোনো সংকট থাকবে না।"
আবার যেনতেন সমীক্ষা প্রতিবেদনের কারণেও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে করেন ড. শামসুল হক। তিনি বলেন, "দেশের বেশিরভাগ সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয় ঘরে বসে। এর জন্য কোনো দায়ও নিতে হয় না। পরে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হলে বারবার নকশা পরিবর্তন করতে হয়।"
অন্যদিকে রেলে প্রকল্প পরিচালক ও কর্মকর্তাদের অদক্ষতার কারণে বৈদেশিক সহায়তা পুষ্ট প্রকল্প বিলম্বিত হয়। কারণ ঠিকাদাররা তাদের স্বার্থে প্রকল্পের অনেক কিছু পরিবর্তন করেন। কারিগরি জ্ঞান না থাকায় রেলওয়ের কর্মকর্তাদের এসব বিষয় মেনে নিতে হয়।
এগিয়ে ভারত
ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালে অনুমোদন পায় বগুড়া থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত নতুন ডুয়েল গেজ লাইন, খুলনা–দর্শনা ডাবল লাইন নির্মাণ, পার্বতীপুর-কাউনিয়া মিটার গেজ রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর প্রকল্প। কিন্ত এখনও এ তিন প্রকল্পের দরপত্র চূড়ান্ত হয়নি।
দরপত্র তৈরি থেকে ঠিকাদার নিয়োগ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতির প্রয়োজন হয়। এতে দীর্ঘ দিন সময়ক্ষেপণ হয়। আর এ কারণে ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে নির্মাণ কাজ শুরু করতেই ৫ বছরের বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় বলে পর্যালোচনায় দেখা গেছে।
অন্যদিকে ১০ বছর আগে বাস্তবায়ন কাজ শুরু হওয়া বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হলেও দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করতে অর্ধযুগ পার হয়ে যায়। গত অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পটির মাত্র ২০% কাজ শেষ হয়েছে।
এলওসি অর্থায়নের দীর্ঘ দিন ধরে চলমান আরেকটি প্রকল্প হলো, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। ২০১২ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
এ প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করতেই লাগে ৬ বছর। আবার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়ার কারণে বাস্তবায়ন নকশার পরিবর্তন করতে হয়েছে। এ প্রকল্পে অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ২৮%।
১০ বছরের বেশি সময় ধরে বাস্তবায়ন হচ্ছে খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। এই প্রকল্পটিরও দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয় ৫ বছর পর। আবার বারবার নকশাও পরিবর্তন করতে হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, ভারতীয় ঋণের শর্ত অনুযায়ী, ৭৫% পণ্য-সেবা ভারত থেকে কিনতে হয়। ভারতীয় ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে এটা একটা বড় বাধা। এছাড়াও ভারতের শর্ত ভারতীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে ভারতীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দরপত্র দলিল অনুযায়ী তৈরি করতে হয়। আর এটি করতে গিয়ে জটিলতায় পড়তে হয় রেলওয়ের কর্মকর্তাদের।
অন্যদিকে বিভিন্ন শর্তের কারণে ভারতীয় ঋণের প্রকল্প নিতে চায় না সরকারি সংস্থাগুলো। রেলওয়ের ভারতীয় ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে রেলওয়ের আগ্রহ না থাকলেও সরকার থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
এডিবি অর্থায়নের প্রকল্প
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মায়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১০ সালে। কিন্ত এ প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়ন নিশ্চিত হয় আট বছর পর ২০১৭ সালে। অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ার পর বারবার প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং বাস্তবায়নে অদক্ষতার কারণে এক দশকেও বাস্তবায়ন কাজ শেষ করা যায়নি প্রকল্পটির। সর্বশেষ ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না বলে মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ৫ বছরে যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা, তা শেষ করতে সময় লাগছে ১৫ বছর।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প প্রণয়নের দুর্বলতার কারণে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হয়েছে। একদিকে রেলে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। অন্যদিকে প্রকল্প প্রণয়নে আলাদা কোনো অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার মাধ্যমে নকশা এবং প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করার পরেও তা সংশোধন করতে হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রেলওয়ের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬৫%।
প্রকল্পের পরিচালক মো. মফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "এ প্রকল্পের জন্য এডিবি ২০১৭ সাল ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়। ঋণ পাওয়ার পর বাস্তবায়নে গেলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ হয়নি। এখনও পর্যন্ত বৈদ্যুতিক টাওয়ারের স্থানান্তর কাজ সমাপ্ত হয়নি। এতে প্রকল্প এলাকায় ঠিকাদাররা নির্বিঘ্নে ভৌত কাজ করতে পারছে না। ফলে প্রকল্পে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে।"
এডিবির অর্থায়নে রেলের জন্য ৪০টি ব্রডগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ, পণ্য পরিবহনে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান, ৪০০টি মিটার গেজ এবং ৩০০ ব্রডগেজ কাভার্ড ওয়াগন কিনতে একটি প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। 'রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন' শীর্ষক প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ ২০২১ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি গত অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ৮%।
আইএমইডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে বিশেষ করে কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপর এডিবির অনাপত্তি নিতে হয়। এক্ষেত্রে এডিবির অধিক সময়ক্ষেপণের কারণে দরপত্র চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়।
ইআরডির কর্তকর্তারা বলেন, অনেক সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদর দপ্তর থেকে সম্মতি নিতে হয়। এ কারণেও সময় ব্যয় হয়। আর উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি কমে যায়।
অনিশ্চয়তার মধ্যে চীনা-প্রতিশ্রুত দুটি প্রকল্প
চীনের ঠিকাদার ফেরত যাওয়ায় আখাউড়া-সিলেট মিটারগেজ রেললাইন মিশ্র গেজে রূপান্তর এবং জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণে দুটি প্রকল্প অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
জিটুজি পদ্ধতিতে রেলে দুটি প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন ও সেদেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা ছিল। চীনা জিটুজি অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্প দুটির ব্যয় বেশি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে ব্যয় যৌক্তিকীকরণ করা হয়। কিন্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির নির্ধারিত ব্যয়ে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে সম্মত হয়নি চীনা ঠিকাদার। এ অবস্থায় অন্য কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাজ থেকে ঋণ চেয়েছে রেলওয়ে। কবে এ প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ নিশ্চিত হবে তাও বলতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এখন এই দুই প্রকল্পে অন্য কোনো উন্নয়ন সহযোগী এগিয়ে আসলেও তারা নিজেরা নতুন করে সমীক্ষা করবে। এরপর ঋণে প্রক্রিয়া শুরু করবে। এতে তিন বছরের বেশি সময় লাগবে। এতে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাবে।
জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা টিবিএসকে জানান, চীন এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। রেলওয়েও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে এবং জাইকার কাছ থেকে অর্থায়নের প্রাথমিক সম্মতিও পাওয়া গেছে। জাইকার ঋণ চূড়ান্ত করতে ইআরডি তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে। যদি জাইকার ঋণ পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে অন্য কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
২০১৮ সালের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডাবল লাইনের প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪,২৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের ঋণ ধরা হয়েছিল ৮,৭৫৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে রেলওয়ের ১০,৩০২ কোটি টাকার নির্মাণ চুক্তি ছিল।
ব্যয় যৌক্তিকীকরণে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি এ প্রকল্পে প্রায় ২১৭ কোটি টাকা বেশি ব্যয় চিহ্নিত করে।
অন্যদিকে আখাউড়া–সিলেট মিটার রেল লাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬,১০৪ কোটি টাকা। চীনা প্রতিষ্ঠান কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয় ১২,০৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি প্রকল্পের ব্যয় ৩,৩৫৪ কোটি টাকা কমানোর সুপারিশ করে।
বিডার্স ফ্যাইন্যান্সিং
২০১১ সালে একনেকে অনুমোদন পায় ৭০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ কেনার একটি প্রকল্প। বিডার্স ফ্যাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক ঋণ নিশ্চিত করে এ প্রকল্পটির অর্থায়ন করার কথা ছিল।
অদক্ষতার ও অনভিজ্ঞতার কারণে মানসম্মত লোকোমোটিভ কেনার জন্য দরপত্রে স্পেসিফিকেশন সঠিকভাবে দিতে পারেনি রেলওয়ে কর্মকর্তারা। আর এ কারণে দীর্ঘ ৮ বছরে দরপত্র চূড়ান্ত করা যায়নি বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তৃতীয় বার দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কোরিয়ান কোম্পানি হুন্দাই রোটেম কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের শর্ত অনুযায়ী, ঠিকাদার কোম্পানি ঋণের ব্যবস্থা করবে। এই হিসেবে কোম্পানিটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও জাপানের সুমিতোমো মিটসুই ব্যাংকিং করপোরেশন থেকে ২৮৩.২ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিশ্চিত করে।
প্রস্তাবিত এ ঋণের ওপর ইআরডির এক পর্যালোচনায় দেখে গেছে, প্রস্তাবিত ঋণ লোকোমোটিভের দামের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি পড়ছে। ঋণের সুদ হার ১.৭% হলেও বিভিন্ন চার্জ হিসাব করলে ঋণের সুদ সাড়ে ৫% এর বেশি হয়। এই অবস্থায় উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে লোকোমোটিভ না কিনে সহজ শর্তে বৈদেশিক ঋণের চেষ্টা করাই বাঞ্ছনীয় হবে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেয় ইআরডি।