এখন সিনেমার মূল নায়ক আসলে গল্প: মীর সাব্বির
আগামী ৩১ ডিসেম্বর মুক্তি পাচ্ছে অভিনেতা মীর সাব্বির পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র 'রাত জাগা ফুল'। ছবিটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি নিজেই। ছবি মুক্তির আগে কথা বলেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে।
প্রশ্ন: শুরুতেই আপনার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র 'রাত জাগা ফুল' নিয়ে জানতে চাই।
মীর সাব্বির: এটা আমার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। ২০১৮-১৯ এ আমি ছবিটির জন্য সরকারি অনুদান পাই। আমার প্রথম সিনেমা সরকারি অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে এটা আমার জন্য আনন্দের ও গর্বের। ছবিটি ২০২০ সালে ছবিটি মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোভিডের কারণে আর দিতে পারিনি। স্বাধীনতার ৫০ বছরের শেষ দিনে আমার প্রথম সিনেমা মুক্তি পাবে। এটা আমার জন্য সত্যি আনন্দের। এতে আমি ছাড়াও অভিনয় করেছেন ঐশি, আবুল হায়াত, দিলারা জামান, তানভীর, আবদুললাহ রানা, অপুসহ অনেকেই।
প্রশ্ন: ছবিটির রাত জাগা ফুল হওয়ার কারণ কী?
সাব্বির: সবাই তো রাত জাগা পাখি বিষয়টা জানে। কিন্তু রাত জাগা ফুলের বিষয়টা তো জানে না। আমার কাছে মনে হয়, আমরা যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকি তখন অন্য একটা পৃথিবী জেগে থাকে। আবার আমরা যখন জাগি তারা হয়তো ঘুমিয়ে থাকে। এই যে অন্য একটা পৃথিবীর জেগে থাকা সেই ভাবনা থেকেই এমন নামরকরণ। আমি মনে করি সকল অন্ধকারের মধ্যে একটা আলো থাকে। মানুষের মধ্যে অন্ধকার থাকলেও আলো কিন্তু থাকে। এটা রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এটা একটা প্রেমের গল্প। সাধারণ প্রেমের। সব মানুষের ভালো লাগবে আশা করছি।
প্রশ্ন: ছবিতে গান রয়েছে কয়টি?
সাব্বির: এতে পাঁচটি গান রয়েছে। গানগুলো গেয়েছেন দেশের নামকরা সব শিল্পী। যেমন মমতাজ, নচিকেতা, এস আই টুটুল, শফি মন্ডল, রাহুল ও হৃদয় খান। গানগুলো সবার ভালো লাগবে বলে আমার মনে হয়। এরইমধ্যে একটা গান রিলিজ হয়েছে। বেশ সাড়া পাচ্ছি।
প্রশ্ন: একটা বিষয়, আপনাদের বেশিরভাগ অভিনয়শিল্পীকে নিয়মিত টিভিতে বা ইউটিউবে দেখা যায়। আলাদা করে দর্শক কেন সিনেমা হলে যাবেন দেখতে?
সাব্বির: এই প্রশ্নটা আমারও। শিল্পীদের অভিনয় তো চাইলেও দেখা যায়। কিন্তু রাত জাগা ফুল দেখতে কেন যাবে? আমি মনে করি, এখন আর চলচ্চিত্রে সে অর্থে নায়ক নায়িকা বিবেচ্য নয়। এখন সিনেমার মূল নায়ক আসলে গল্প। গল্পই দর্শককে হলে টেনে আনবে। ধরেন, চঞ্চল চৌধুরী নিয়মিত টিভি নাটক করেন কিন্তু তার সিনেমা আয়নাবাজি দেখতে দর্শক হলে যায়নি? মোশাররফ করিম তো টিভিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা তার অজ্ঞাতনামা বা জালালের গল্প কি মানুষ দেখেনি। এটাই সিনেমার বা গল্পের শক্তি।
প্রশ্ন: আপনি তো নিয়মিত অভিনয় করেছেন এবং করছেন। কিন্তু হঠাৎ পরিচালনায় কেন?
সাব্বির: আগে অভিনয়টা ছিল আমার নেশা। নেশাটাই একসময় পেশা হয়ে গেছে। কিন্তু এই পেশায় গিয়ে মানে অভিনয় করতে অনেকবার মনে হয়েছে গল্পটা এভাবে বলা যেতো। ওভাবে বলা যেতো। মানে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে আগ্রহ হতো। এই কারণেই পরিচালনায় আসা। আমার সবসময় ইচ্ছা ছিলো, নতুন কিছু চেষ্টা করার। এই কারণেই আমি কাজটা করেছি। তবে সিনেমা নির্মাণ করার চেয়ে কঠিন হলো সিনেমার প্রচার করা। এই পুরো মাসটা এটাই করছি। চেষ্টা করছি রাত জাগা ফুল সিনেমাটা সবার কাছে পৌছে দেয়ার।
প্রশ্ন: আপনার ক্যারিয়ারের প্রায় দুই যুগ হলো। কেমন লাগে?
সাব্বির: ক্যামেরার সামনে দুই যুগ। কিন্তু এটার আগে মঞ্চে কাজ করেছি আরও অনেকদিন। আমার জন্ম বরগুনায়। সেখানে খেলাঘর করেছি। ১৯৯৪ সালে ঢাকায় এসেছি। তারপর কন্ঠশীলনে আবৃত্তি শিখেছি। নাগরিক নাট্যাঙ্গন যোগ দিয়েছি। সেখানে অভিনয় শিখেছি ও করেছি। তারপর অনেক ডিরেক্টরের কাছে গিয়েছি। কেউ সুযোগ দিয়েছে, কেউ দেয়নি। তবে আমাকে দর্শক চিনেছে অনন্ত হীরা পরিচালিত 'বিষকাটা' নাটকের মাধ্যমে। এটা প্রচারের পর সবার কাছে একটা পজিটিভ ভাইব আসে। আমাকে চেনা শুরু করে। তারপর থেকে সবার সাথে কাজ করেছি। আমার আক্ষেপ আছে সিনেমা নিয়ে। যেমন সময় প্রচুর নাটক করেছি তখন আমাকে কেউ সিনেমায় নেয়নি। নিলে হয়তো ক্যারিয়ার অন্যরকম হতো। অনেক ছবি দেখে মনে হয়েছে এই চরিত্রে আমি ভালো করতে পারতাম। তবে আমার ক্যারিয়ার নিয়ে আমি হ্যাপি। এখন যে অবস্থায় আছি আমি তৃপ্ত।
- সাক্ষাৎকারটি ইংরেজিতে পড়ুন: I think there is light in darkness: Mir Sabbir