রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের সাফল্য কামনা ৩৭ বিশিষ্ট নাগরিকের
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন তা দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সময়োপযোগী ও জরুরি বলে মত দিয়েছেন দেশের ৩৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
বুধবার এ নাগরিকদের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "আমরা আনন্দের সাথে লক্ষ করছি যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের বেশ কিছু মাপকাঠিতে দেশের প্রশংসনীয় সাফল্য এসেছে। তবে মুদ্রার অপর পিঠ, অর্থাৎ নির্বাচন, জবাবদিহিতা, আইনের সমপ্রয়োগ, বাক-স্বাধীনতা, সভা সমিতির অধিকার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্যাতন এবং আনুষঙ্গিক অনেক মাপকাঠিতে আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছি। বৈষম্যের হারও আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মানের ক্রমাবনতি এখন অনস্বীকার্য। এসব ছাড়িয়ে আমাদের উদ্বেগের আরেকটা বড় কারণ হলো আমাদের রাজনীতিতে পরমত সহিষ্ণুতার অবনতি।"
১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় প্রণীত তিন রাজনৈতিক জোটের রূপরেখায় যে গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা থেকে বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে পেছনে হাঁটছে বলে ওই বিবৃতিতে মন্তব্য করেছেন এ নাগরিকরা।
বিবৃতিতে তারা বলেন, "আশা করি আজকের ক্ষীণ গণতন্ত্রের বাংলাদেশে এখন আবার নতুন করে গণতন্ত্র চর্চা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, জবাবদিহিতা, আইনের সম ও ন্যায্য প্রয়োগ এবং আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সর্বময় ও বন্টন ব্যবস্থাকে সাম্যমূলক করে তোলার জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ঐক্যমতের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আলাপ-আলোচনা করবেন।"
আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের ব্যাপারে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা খসড়া প্রস্তাবনা প্রণীত হবে বলে বিবৃতিতে আশাপ্রকাশ করেন তারা।
এই প্রস্তাবনায় বর্তমানে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আওয়ামী লীগের রূপকল্পও স্থান পাবে বলেও মত দেন তারা।
তারা বলেন, "আমাদের প্রত্যাশা যে, সেই সাথে মানবাধিকার সংক্রান্ত আমাদের ব্যাপক এবং প্রকট বিচ্যুতি নিরসনের নির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলিও রচিত হবে। আমরা আরো আশা করি যে, দলসমূহের মধ্যে 'তিন জোটের রূপরেখার' আদতে একটা ঐকমত্য সৃষ্টি হবে।"
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে গণমাধ্যম ও নাগরিক সংগঠনগুলোকেও যুক্ত করার জন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রতি আহ্বান জানান এ বিশিষ্ট নাগরিকরা।
তারা বলেন, "রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে প্রণীত প্রস্তাবনাগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৫) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মন্ত্রীপরিষদের বিবেচনার জন্যে প্রেরণ করবেন বলেও আমরা আশা করছি।"
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন-
১. ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
এমিরেটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২. ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম
সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী
৩. এম হাফিজউদ্দিন খান
অবসরপাপ্ত মহা হিসাব-নিরীক্ষক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
৪. বিচারপতি আব্দুল মতিন
সাবেক বিচারপতি, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
৫. ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
সাবেক নির্বাচন কমিশনার
৬. ড. হামিদা হোসেন
মানবাধিকারকর্মী
৭. ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ
সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
৮. আলী ইমাম মজুমদার
সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব
৯. মহিউদ্দিন আহমদ
সাবেক সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
১০. অধ্যাপক পারভীন হাসান
ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি
১১. ড. বদিউল আলম মজুমদার
সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক
১২. অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ
১৩. ড. শাহদীন মালিক
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
১৪. মুনিরা খান
সভাপতি, ফেমা
১৫. শিরিন হক
সদস্য, নারীপক্ষ
১৬. ব্যারিস্টার সারা হোসেন
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
১৭. শাহীন আনাম
নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
১৮. অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা
অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৯. আবদুল লতিফ মন্ডল
সাবেক সচিব
২০. সঞ্জীব দ্রং
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
২১. ড. শহিদুল আলম
আলোকচিত্র শিল্পী
২২. শারমিন মুরশিদ
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্রতী
২৩. জনাব শামসুল হুদা
নির্বাহী পরিচালক, এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট
২৪. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২৫. অধ্যাপক আসিফ নজরুল
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৬. অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ
লেখক
২৭. অধ্যাপক স্বপন আদনান
অধ্যাপক ও গবেষক, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন
২৮. সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ
সাবেক ব্যাংকার
২৯. আবু সাঈদ খান
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
৩০. অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩১. অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩২. গোলাম মোনোয়ার কামাল
নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
৩৩. অধ্যাপক নায়লা জামান খান
পরিচালক, ক্লিনিকাল নিউরোসাইন্স সেন্টার, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন
৩৪. জাকির হোসেন
প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ
৩৫. ফারুক ফয়সাল
আঞ্চলিক পরিচালক, আর্টিকেল ১৯
৩৬. ড. ফস্টিনা পেরেরা
মানবাধিকারকর্মী
৩৭. নূর খান লিটন
মানবাধিকারকর্মী