এই খাবারগুলোই কি আপনার অতিরিক্ত রাগ ও মানসিক চাপের কারণ!
কখনো কি এমন হয়েছে শুধু শুধু কোনো কারণ ছাড়াই খিটখিটে আচরণ করছেন বা মেজাজ চড়ে যাচ্ছে? আপনার খাদ্যাভাসের জন্যই কিন্তু এমনটা হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যা খাই তার প্রভাব শুধু আমাদের শারীরের ওপরই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও এর প্রভাব পড়ে। কিছু খাবার ও পানীয় গ্রহণে শরীর শক্তি পায়, আবার কিছু খাবারের কারণে অলস লাগতে পারে, বিষণ্ণতা জেঁকে বসতে পারে, এমনকি মানুষকে রাগিয়েও তুলতে পারে। গবেষণায় উঠে এসেছে, রাগ ছাড়াও স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণ হতে পারে ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার।
ট্রান্স ফ্যাট মূলত হাইড্রোজেনেটেড অয়েল। উচ্চ তাপমাত্রায় দাহ্য তেল ও চর্বিও ট্রান্স ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। কেক, কুকিজ, বেকারি পণ্য, ভাজা খাবার ও প্যাকেটজাত স্ন্যাক- সাধারণত এসব খাবারে ট্রান্স ফ্যাট থাকে। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকা বিস্কুট, চানাচুর, চিপস বা সিঙ্গারা, সমুচার ও কড়া করে ভাজা স্ট্রিটফুড বানাতে হাইড্রোজেনেটেড অয়েল ব্যবহার করা হয়। রান্নার সময় একই তেল বারবার ব্যবহার করলে তাতেও ট্রান্স ফ্যাট উৎপন্ন হয়।
ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্সের (পিএলওএস) প্রকাশিত এক গবেষণায় মানুষের আক্রমণাত্মক ব্যবহার ও বিরক্তির সঙ্গে টান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়ার সম্পর্ক উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে খাদ্যাভ্যাস ও আচরণের ভিত্তিতে ৯৪৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে লিঙ্গ, বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধূমপান ও মদ্যপানের মতো বিষয়গুলোও জড়িত, তবে গবেষকরা বলছেন ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়ার সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণের সরাসরি সম্পর্ক আছে।
ফ্যাটযুক্ত খাবারের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ধরা হয় ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবারকে। শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রায় প্রভাব ফেলে এ উপাদান, ফলে বেড়ে যায় বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকিও। টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ায় ট্রান্স ফাট। ট্রান্স ফ্যাটের কারণে শরীরে উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা এইচডিএল (উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন) কমে আসে, বেড়ে যায় ক্ষতিকারক এলডিএল (নিম্ন ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরলের মাত্রা। ফলে শরীরে শুধু ক্ষতিকারক ফ্যাটি এসিড থেকে যায়।
হাইড্রোজেনেটেড বা আংশিক হাইড্রোজেনেটেড খাবারে এ ধরনের ফ্যাটি এসিড থাকে। মূলত খবার প্রক্রিয়াজাতকরণে সময় হাইড্রোজেনেশনের কারণে ট্রান্স ফ্যাট উৎপাদিত হয়। খাবার যাতে তাড়াতাড়ি নষ্ট না বা কক্ষ তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত টিকে থাকার সুবিধার কারণেই ব্যবহৃত হয় এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ২০১৫ সালে ঘোষণা দেয় আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেলযুক্ত খাবার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। ট্রান্স ফ্যাটি এসিডের অন্যতম বড় উৎস এসব খাবার। এ ধরনের পণ্য বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেলের জন্য মার্জারিনকে ট্রান্স ফ্যাটি এসিডের অন্যতম উৎস ধরা হয়। তবে, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ মাখনের চেয়ে এফডিএ'র স্বাস্থ্যবিধি বেশি মেনে তৈরি হয় মার্জারিন। ২০১৫ সালে এফডিএ গাইডলাইন পরিবর্তনের পরই পরিবর্তন আসে মার্জারিন উৎপাদনে। যদিও, এটি নির্ভর করছে কোনো দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার গাইডলাইনে কী নিয়ম রয়েছে আর সে দেশের খাবার উৎপাদনে কতোটুকু নিয়মগুলো মেনে চলা হয়।
খাবারে আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেল না থাকলেও, খাবারে শুধু হাইড্রোজেনেশনের কারণে ট্রান্স ফ্যাট উৎপন্ন হতে পারে। বানিজ্যিকভাবে উদ্ভিজ্জ তেলের স্থায়িত্ব বাড়াতে আংশিক হাইড্রেশনের মাধ্যমে একে কঠিনে রুপান্তর করার প্রক্রিয়াই হাইড্রোজেনেশন।
ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবারের সঙ্গে শুধু আক্রমণাত্মক ব্যবহার, খিটখিটে ও বিরক্ত লাগা এসব আচরণের সম্পর্ক আছে শুধু তা নয়। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালের সময়ে এ ধরনের খাবার ডিপ্রেশনে ভোগার আশঙ্কাও বাড়িয়ে তোলে।