ফিরে দেখা ২০২১: আবরার ফাহাদ হত্যার রায়, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি
বছরের শেষ দিকে চাঞ্চল্যকর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
আবরারের মৃত্যুর প্রায় দু'বছর পর হত্যাকাণ্ডে জড়িত ২০ বুয়েট শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। আরও পাঁচজনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ।
মেধাবীদের ভেতরেও সেরা মেধাবীরাই বাংলাদেশের শীর্ষ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটে পড়ার সুযোগ পায়। আবরার ছিল তাদেরই একজন। এমনকি তার হত্যাকারীরাও। এই রায়কে ঘিরে তাই পুরো দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন- বিশ্বজিৎ থেকে আবরার: কিছুই বদলায়নি
তাছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হত্যার ঘটনায় এর আগে দেশে এমন শাস্তির নজির আর দেখা যায়নি। রায়ের পর্যবেক্ষণেও আদালত বলেন, ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্যই আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আদালত বলেন, "আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে-অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে।"
"এ ঘটনা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা যাতে আর কখনো না ঘটে, তা রোধকল্পে অত্র ট্রাইব্যুনালে সকল আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।"
আরও পড়ুন- যে রাজনীতি খুনি বানিয়েছে জিয়নকে
গ্রাম থেকে এসে জড়ালেন ছাত্রলীগে, এরপর জড়ালেন আবরার হত্যায়
আবরার হত্যাকাণ্ড: ট্রাকচালক বাবার স্বপ্ন ছিল শামীম হবে ইঞ্জিনিয়ার, হয়ে গেল খুনি
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশারফ সকাল, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মাজেদুর রহমান, মুজাহিদুর রহমান, তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, শামীম বিল্লাহ, নাজমুস সাদাত, মুনতাসির আল জেমি, মিজানুর রহমান, মাহমুদ সেতু, শামসুল আরিফিন রাফাত, মোরশেদ অমর্ত্য ইসলাম, এহতেশামুল রাব্বি, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও মোস্তবা রাফিদ।
এছাড়াও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজন- মুহতাসিম ফুয়াদ, আকাশ হোসেন, মোয়াজ আবু হোরায়রা, অমিত সাহা ও ইসতিয়াক হাসান মুন্না।
মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ- এই তিন আসামি শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন।
আরও পড়ুন- বুয়েট: নির্যাতনের শিকার হয়ে স্বপভঙ্গের গল্পগুলো
নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জের ধরে আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরদিন আবরারের বাবা চকবাজার থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন। গত ৩ নভেম্বর এ মামলায় আদালতে চার্জশিট দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।