বিস্ফোরণে উড়বে না, আটকে দেবে একে-৪৭ এর গুলিও! ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্য নতুন ‘গার্ড’
'গার্ড' কিনেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে এই 'গার্ড' কোনো মনুষ্যরক্ষী নয়। বরং একে 'রক্ষাকারী বর্ম' বলা যেতে পারে। এটি এমন বর্ম যা গায়ে চাপানো যায় না, বরং তাতে চেপে বসা যেতে পারে।
বর্মটি সম্প্রতি দেখা গিয়েছে দিল্লিতে। হায়দরাবাদ হাউসের সামনে দাঁড় করানো ছিল। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অভ্যর্থনা জানাতে গিয়েছিলেন মোদি।
ঝকঝকে কালো চেহারা। জানালায় কালো কাচের আড়াল। চার চাকার লিমুজিন। এটিই মোদির নতুন বাহন। নতুন বর্ম। নাম 'গার্ড'।
'গার্ড' মোদির জিম্মায় থাকা এক ঝাঁক বাহন তালিকায় নতুন সংযোজন। বানিয়েছে গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা মার্সিডিজ। গার্ডের পুরো নাম মার্সিডিজ-মে ব্যাচ এস ৬৫০ গার্ড। এটি মার্সিডিজ-এর এস সিরিজের সাম্প্রতিকতম মডেল।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তার বাহনের বিষয়ে বরাবর শৌখিন। সেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময় থেকেই তার বাহন নির্বাচন নজরকাড়া। প্রথমে একটি বুলেটপ্রুফ মাহিন্দ্রা স্কর্পিও চড়তেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পুরনো বাহন বদলান। প্রধানমন্ত্রী মোদির বাহন হয় বিএমডব্লিউয়ের সেভেন সিরিজের একটি গাড়ি। বিএমডব্লিউয়ের উচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন যে সমস্ত গাড়ি রয়েছে, তার মধ্যে একটি ওই গাড়ি।
এরপর ঘন ঘন বাহন বদলায়। সাত বছরে আরও দু'বার গাড়ি বদলান মোদি। প্রথমে ল্যান্ড রোভারের রেঞ্জ রোভার ভোগ গাড়িটি কেনেন। তারপর ফের বদলান।
'গার্ড'-এর আগে মোদির শেষ কেনা গাড়িটি ছিল টয়োটার ল্যান্ড ক্রুজার। এই গাড়ির বৈশিষ্ট্য ছিল ১৬টি ক্যামেরায় নজরদারির ব্যবস্থা। পাশাপাশি টয়োটার এই গাড়িতে ব্যবহারকারীর চাহিদা মতো পরিবর্তনও আনা যেত।
টয়োটার এই গাড়িরও অবশ্য নাম কাটা গিয়েছে মোদির গাড়িবহর থেকে। তার এখন নতুন বিশ্বস্ত সঙ্গী 'গার্ড'। কিন্তু কী বৈশিষ্ট্য 'গার্ড'-এর?
এস ৬৫০ গার্ড এর বড় গুণ হল গুলি মোকাবিলা করার ক্ষমতা। গার্ড বর্মভেদী বুলেটকেও থামাতে পারে। এমনকি একে-৪৭ এর গুলির আঘাতও প্রতিহত করতে পারে মোদির নতুন বাহন।
আর কী ক্ষমতা? মোদির এই নতুন বর্ম-বাহন বিস্ফোরণেও টিকে যাবে বেমালুম। দু'মিটার দূরত্ব থেকে যদি কেউ ১৫ কেজির বিস্ফোরকও ফাটায়, তাহলেও এর বনেটে কোন প্রভাব পড়বে না।
এস ৬৫০-এর জানালার ভিতরে রয়েছে পলি কার্বোনেটের আস্তরণ। মাইনজাতীয় বিস্ফোরণ থেকে বাঁচতে গাড়ির নীচের অংশেও রয়েছে বিশেষ সুরক্ষা বর্ম। এমনকি যদি গ্যাস হামলাও হয়, তবে আরোহীকে পরিশ্রুত বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা করবে গার্ড।
এই গাড়ির ইঞ্জিন ৬.০ লিটার টুইন টার্বো ভি ১২। যা ৫০০ হর্সপাওয়ার এবং ৯০০ নিউটন মিটার শক্তি উৎপাদন করতে পারে। তবে নিরাপত্তার কথা ভেবেই গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রিত হবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটারে।
টায়ার পাংচার করেও বিপদে ফেলা যাবে না মোদির নতুন গাড়িকে। কারণ গাড়ির চারটি চাকাই নিরেট বা ফ্ল্যাট টায়ার।
মোদির নতুন বাহনের নিরাপত্তাকে ভিআর-১০ স্তরের সুরক্ষা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই মুহূর্তে গাড়ির জগতে এটিই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা।
রাতের অন্ধকারে দূর থেকে যে কোনও বস্তুকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা রয়েছে এই গাড়ির। এমনকি চালকের উল্টোদিকের আয়নায় ব্লাইন্ড স্পট থেকেও যদি কোনও গাড়ি হামলা করতে চায়, তবে তা ধরা পড়বে চালকের চোখে।
বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে গাড়ির পিছনের আসনেও রয়েছে এয়ারব্যাগ সুরক্ষা। এমনকি সিট বেল্ট যাতে বুকের উপর অতিরিক্ত চাপ না দেয়, তার জন্য বেল্টের ভিতরেও আছে এয়ারব্যাগ।
সাধারণত রাষ্ট্রপ্রধানের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তার কথা বিচার করে এই ধরনের গাড়ি কেনার অনুরোধ জানায় তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ। মোদির ক্ষেত্রেও তারাই এই গাড়ি কেনার অনুরোধ জানিয়েছে।
একটি এস ৬৫০ গার্ডের দাম ভারতীয় মুদ্রায় ১২ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য দু'টি গাড়ি কেনা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মোদি ব্যবহার করবেন। অন্যটি থাকবে সম্ভাব্য হামলাকারীকে বিভ্রান্ত করার জন্য।
- সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা