ভোটযুদ্ধে যুদ্ধ আছে, ভোট নেই: ইসি মাহবুব
সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ যেন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, এখন ভোটযুদ্ধে যুদ্ধ আছে, ভোট নেই।
ইউপি নির্বাচনে এখন উৎসবের বাদ্যের বদলে বিষাদের করুণ সুর বাজছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বুধবার নির্বাচন কমিশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুব তালুকদার বলেন, "কিন্তু নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। নির্বাচনী সন্ত্রাস প্রতিহত করতে হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের প্রতিঘাত আরও জোরদার করতে হবে।"
সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ আরও বেড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে ইউপি নির্বাচনের সন্ত্রাসের কারণ অনুসন্ধান করে তা থেকে উত্তরণের পথ বের করা জরুরী বলে মনে করেন ইসি মাহবুব।
তিনি বলেন, "নির্বাচনের সন্ত্রাসের কারণ অনুসন্ধান করে তা থেকে অব্যাহতির উপায় উদ্ভাবন অপরিহার্য। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রথা উঠিয়ে না দিলে সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন চাই।"
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, "২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্ব রাতে ব্যালট পেপারের ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন দিনের ভোট রাতে করে বলে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হই। এটি কোনভাবেই কাম্য ছিল না।"
দেশে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অনেক দূরের ব্যপার বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মাহবুব বলেন, "গণতন্ত্র ও মানবাধিকার মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একমাত্র নির্ভেজাল গণতন্ত্রই মানবাধিকারের গ্যারান্টি দিতে পারে। আর মানবাধিকার উৎসারিত হয় ভোটের অধিকার থেকে। কিন্ত জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা ও রক্ষা এখনও সুদূরপরাহত। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও এর প্রতিষ্ঠানিক রূপদানের জন্য অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ আইনানুগ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।"
চলমান ইউপি নির্বাচন নিয়ে তিনি আরও বলেন, "নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে আচরণবিধি লঙ্ঘন সুষ্ঠু নির্বাচনের গোড়া কর্তনের নামান্তর। কতিপয় সংসদ সদস্য সরাসরি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কলুষিত করেছেন।"
তিনি বলেন, "কেবল চিঠি দেওয়া ছাড়া তাদের সম্পর্কে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। কেউ কেউ সেই চিঠি উপেক্ষা করেছেন। এজন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ অনিবার্য ছিল। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কার না করা হলে তাদের সম্পর্কে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়।"
"অন্যান্য যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, তাদেরকে সামান্য অর্থদন্ড প্রদান ব্যতীত অন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়া আইনের কঠোর বাস্তবায়ন অসম্ভব", যোগ করেন ইসি মাহবুব।
এছাড়া চলমান নির্বাচনে বিভিন্ন উপজেলায় ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনার সমালোচনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, "নির্বাচনের মৌলিক শর্ত ভোটের আগে ও পরে ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা বিধান। আমরা যথাযথভাবে তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এর দায় এড়াতে পারবে না। যেকোনো মূল্যে ব্যালট পেপারের সুরক্ষা দিয়ে এই অবস্থার অবসান ঘটানো প্রয়োজন।"