বৈদেশিক ঋণে ১১০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে প্লাস্টিক কারখানা স্থাপন করবে দেশবন্ধু গ্রুপ
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী দেশবন্ধু গ্রুপ খুলনায় ১০৩ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি বিশাল প্লাস্টিক প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে।
দেশে ও বিদেশে দ্রুত বর্ধনশীল প্লাস্টিকের বাজার ধরতে স্থাপন করা কবে এই প্লাস্টিক কারখানা। কারখানাটির দৈনিক ৭২০ টন প্লাস্টিক চিপ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকবে।
দেশবন্ধু গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বশির আহমেদ বলেন, 'বর্তমানে বিশ্বের প্লাস্টিক বাজারের এক-তৃতীয়াংশ একাই দখল করে আছে চীন। কিন্তু চীন ও আমেরিকার মধ্যকার উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের কারণে এই চীনের আধিপত্য ধাক্কা খেয়েছে। এছাড়া চীনা পণ্যের উপর সাড়ে ৫ শতাংশ কর আরোপ করেছে ইউরোপ। তাই আমাদের জন্য বাজার ধরা সহজ হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা প্লাস্টিকের চিপ আমদানির ওপর দেশের নির্ভরতা কমাতে চাই। এর ফলে আমাদের অর্থ দেশের মধ্যেই রাখতে পারব।'
দেশবন্ধু গ্রুপের ২১টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। খুলনায় প্লাস্টিক প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য শিল্পগোষ্ঠীটি সুইজারল্যান্ড ও জার্মানির দুটি ব্যাংক থেকে তহবিল সংগ্রহ করেছে।
বশির বলেন, 'বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগবান্ধব ব্যাংক নেই। স্থানীয় ব্যাংকগুলো খুব অল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, আর সুদ নেয় চড়া হারে। এতে বিনিয়োগকারীদের কাঁধে বড় বোঝা চাপে, কারণ তাদের বড় কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে হয়।'
'অন্যদিকে, বিদেশি ব্যাংকগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য—১৫ থেকে ২৫ বছর—বিনিয়োগ ঋণ দেয়। আর তাদের সুদের হারও খুব কম—১ দশমিক ৬ থেকে ২ শতাংশ। এ কারণে ঋণগ্রহীতা স্বাচ্ছন্দ্যে ঋণ শোধ করার সুযোগ পায়।'
সবুজ উদ্যোগ
দেশবন্ধু গ্রুপের প্লাস্টিক কারখানা হবে সবুজ কোম্পানি। এখানে প্রতিদিনের উৎপাদনের জন্য ১২০ টন রিসাইকেল করা প্লাস্টিক এবং ৬০০ টন ভার্জিন চিপ কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা হবে।
এ কারখানায় পলিথিন টেরেফথালেট (পিইটি) উৎপন্ন করা হবে। এটি প্যাকেজিং, কাপড়, অটোমোটিভের যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক্স এবং নিত্য ব্যবহার্য অন্যান্য অনেক পণ্যে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও কারখানাটিতে টেক্সটাইল স্ট্যান্ডার্ড পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার (পিএসএফ) চিপও উৎপাদন করা হবে, যা প্লাস্টিক ও পলিমারের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
যেসব প্লাস্টিকক্রেতা ও ময়লা সংগ্রহকারীরা যেসব পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ বিক্রি করে, মূলত তাদের কাছ থেকে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সংগ্রহ করবে কোম্পানিটি।
বশির বলেন, 'প্রাথমিক সংগ্রাহকদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে ব্যবহৃত প্লাস্টিক কেনার জন্য আমরা প্রত্যেক জেলায় সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করার পরিকল্পনা করছি।'
কর্মসংস্থান হবে দুই হাজার লোকের
দেশবন্ধু গ্রুপ তাদের বিশাল প্লাস্টিক কারখানাটি স্থাপন করবে মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে।
দেশবন্ধুর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'মোংলা ইপিজেডে এই অত্যাধুনিক প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য সিকদার গ্রুপের কাছ থেকে আমরা ৪০ বছরের জন্য ১০০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছি। জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড থেকে মেশিনারিজ এবং প্রযুক্তি নিয়ে আসছি।'
প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের ডিসেম্বরে খুলনার পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করে।
শিল্পগোষ্ঠীটির লক্ষ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্লাস্টিক কারখানার নির্মাণকাজ শুরু এবং ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ উৎপাদনে যাওয়া।
বশির বলেন, '২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিক থেকে প্ল্যান্ট থেকে আয় হতে শুরু করবে। প্ল্যান্ট থেকে বছরের ৫০০-৬০০ মিলিয়ন ডলার টার্নওভার পাবা বলে আশা করছি। প্ল্যান্টে কমপক্ষে ২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর আমরা আমাদের প্লাস্টিক চিপ বিক্রির জন্য ইউরোপের বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করব।'
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সাল থেকে প্লাস্টিকপণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা প্রতি বছর ২০ শতাংশ করে বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের গড় ব্যবহার মাথাপিছু ৫০ কেজি। আর বাংলাদেশে মাথাপিছু প্লাস্টিকের গড় ব্যবহার ৯ কেজি।