সাকিবময় ম্যাচে ফরচুন বরিশালের রুদ্ধশ্বাস জয়
প্রতিপক্ষের বোলিং দাপটে শুরুতেই খাদের কিনারে খুলনা টাইগার্স। মাঝারি লক্ষ্যও তখন অনেক দূরের পথ। সেখান থেকে লড়াই চালিয়ে জয়ের আশা জাগিয়ে তুললেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলী রাব্বি। শেষ বেলায় মুশফিক ফিরলেও খেই হারালেন না রাব্বি, লড়লেন শেষ বল পর্যন্ত। কিন্তু তার ধুন্ধুমার ইনিংসটিও জেতাতে পারলো না খুলনাকে।
সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে খুলনাকে ৬ রানে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল ফরচুন বরিশাল। এবারের বিপিএল দুই সাক্ষাতেই খুলনাকে হারালো বরিশাল। ৫ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তিন নম্বরে বরিশাল। সমান ম্যাচে ২ চয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে মুশফিকরা আছেন পাঁচ নম্বরে।
ম্যাচে মূলত সাকিবের কাছেই হার মেনেছে খুলনা। প্রথমে ২৭ বলে ৪১ রানের দারুণ ইনিংস খেলা বরিশাল অধিনায়ক পরে স্পিন ঘূর্ণিতে প্রতিপক্ষের দিক ভুলিয়ে দেন। ৪ ওভারে মাত্র ১০ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন ম্যাচসেরা সাকিব। স্পিন ভেল্কি দেখান মুজিব-উর-রহমানও। আফগান এই স্পিনার ১ মেডেনসহ ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দেন।
সাকিব-মুজিব মিলে ৮ ওভারের মধ্যে ৩৭টিই করেন ডট বল। এখানেই অনেক পিছিয়ে পড়ে খুলনা, যা পুষিয়ে নেওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। প্রথম ১০ ওভারেই ম্যাচ হেরেছে খুলনা। ১০ ওভারে ৪ উইকেটে মাত্র ৩৫ রান তোলে তারা। এই চাপ সামলে শেষ ১০ ওভারে ১০৪ রান তোলে দলটি, কিন্তু এরপরও থেকে যায় ৬ রানের ব্যবধান।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে ফরচুন বরিশাল। সাকিব ও নাজমুল হোসেন শান্তর দুটি মাঝারি ইনিংসের পরও ১৮.৫ ওভারে ১৪৫ রানে অলআউট হয়ে যায় বরিশাল। জবাবে সাকিব ও মুজিবের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে দিক হারিয়েও পথ খুঁজে নেয় খুলনা। কিন্তু একেবারে কাছে গিয়েও শেষ হাসি হাসা হয়নি তাদের। ৬ উইকেটে ১৩৯ রানে শেষ হয় খুলনার ইনিংস।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দলীয় ২৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় খুলনা। এরপর তাদের চেপে ধরেন মুজিব ও সাকিব। এ সময় দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান চাপিয়ে রাখার পাশাপাশি ২টি উইকেটও তুলে নেন সাকিব। বরিশালের দুই স্পিনারের ঘূর্ণিতে ৯ ওভারে ২ উইকেটে মাত্র ৩১ রান তোলে খুলনা।
দশম ওভারে খুলনাকে আরও চাপে ফেলে দেন ডোয়াইন ব্রাভো। ক্যারিবীয় এই অলরাউন্ডার তার করা প্রথম ওভারে ৪ রান খরচায় ফিরিয়ে দেন আন্দ্রে ফ্লেচার ও থিসারা পেরেরাকে। ১০ ওভারে ৩৫ রান তুলতেই নেই ৪ উইকেট, খুলনা তখন মাঝ দরিয়ায়। এমন সময়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলী রাব্বি।
এই দুই ব্যাটসম্যান দ্রুতই উইকেটে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে রান তোলার গতি বাড়াতে থাকেন। মুশফিক দেখেশুনে খেললেও ঝড় বইয়ে দেন রাব্বি। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে পিছিয়ে পড়া পথ পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। পঞ্চম উইকেটে ৫০ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন এ দুজন।
খুলনার যখন ১১ বলে ৩২ রান প্রয়োজন, তখন আউট হন মুশফিক। ফেরার আগে ২২ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৩ রান করেন খুলনার অধিনায়ক। এরপর সেকেুগে প্রসন্ন ও শেখ মেহেদি হাসানকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেও জয় ছিনিয়ে আনতে পারেননি রাব্বি। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৩৪ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৭ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলেন। ব্রাভো ৩টি, সাকিব ২টি ও শফিকুল ইসলাম একটি উইকেট নেন।
এর আগে ফরচুন বরিশাল পুরো ইনিংসজুড়েই ধুঁকিয়ে ধুঁকিয়ে ব্যাটিং করে। সাকিব ও শান্ত ছাড়া কেউ-ই দলের হয়ে ব্যাট চালাতে পারেননি। তাদের বাইরে কেবল দুজন দুই অঙ্কের রান করেন, সেটাও উল্লেখ করার মতো কোনো সংখ্যা নয়।
নেতার মতোই খেলেছেন সাকিব। একমাত্র তিনিই টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং করে রানের দেখা পেয়েছেন। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৭ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪১ রান করেন। ৪৫ রান করেন শান্ত। তবে এই রান করতে ৪০ বল খরচা করেন তিনি। শান্তর ইনিংসটি ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো।
নুরুল হাসান সোহান ৯ বলে ১০ ও মুজিব ৬ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১২ রান করেন। এদিন ডোয়াইন ব্রাভো, ক্রিস গেইল, তৌহিদ হৃদয়, জিয়াউর রহমান, ইরফান শুক্কুররা দলের স্কোরকার্ডে অবদানই রাখতে পারেননি। খুলনার পেসার খালেদ আহমেদ সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট নেন কামরুল ইসলাম রাব্বি ও ফরহাদ রেজা। একটি উইকেট পান থিসারা পেরেরা।