পাট রপ্তানির উন্নতি হলেও প্রবৃদ্ধির ধারা এখনও নেতিবাচক
চলতি অর্থবছরের (২০২১-২০২২) শুরু থেকেই দেশের পাট রপ্তানি খাত গতি হারাতে থাকে। তবে, গত কয়েক মাসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এরপরেও চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাস অর্থাৎ, জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে পাট পণ্যের রপ্তানি কমেছে ৯ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরে (২০২০-২০২১) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৩২ শতাংশ।
বুধবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পাট ছাড়া অন্যান্য প্রায় সব পণ্যেরই রপ্তানি বেড়েছে।
কিন্তু পাটের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারা কেনো ধরে রাখতে পারলো না বাংলাদেশ?
এ খাতে নিয়োজিত উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে গতি হারানোর মূল কারণ সম্প্রতি কাঁচাপাটের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া; ফ্রেইট চার্জ বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এছাড়া, পাট পণ্য রপ্তানির অন্যতম বড় গন্তব্য ভারত ২০১৭ সালে বাংলাদেশি পাট পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করে, যা রপ্তানি কমার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারতের ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর দেশটিতে ২০১৭ সালের আগের তুলনায় বাংলাদেশের পাট পণ্য রপ্তানি কমেছে ৬০ শতাংশ।
বাংলাদেশ পাটকল সমিতির (বিজেএমএ) সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারিক খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বর্তমান বাড়তি দামে পাট কিনে রপ্তানি করতে যে ব্যয় হয়, তা দিয়ে বায়াররা নিতে চায় না।"
বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেজিইএ)-এর পরিচালক ইসরাত জাহান চৌধুরী কাঁচাপাটের বর্ধিত মূল্যকে রপ্তানি কমার পেছনে অন্যতম কারণ বলে জানান।
টিবিএস-কে তিনি বলেন, "আমরা চাই কাঁচা পাটের দাম স্থিতিশীল থাকুক।"
পাট পণ্য রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ে কাঁচাপাটের দাম ছিল মণপ্রতি ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। গত মৌসুমে পাটের দাম ৬ হাজার থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা হয়ে যায়। আর চলতি মৌসুমে পাটের দাম কিছুটা কমে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ইসরাত জাহান চৌধুরী মনে করেন, বর্তমানে কাঁচা পাটের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল। তবে, এই দাম ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে থাকলে রপ্তানি বাড়বে এবং কৃষকরাও বাঁচবে।
ইপিবি'র তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল ৪১ শতাংশ। গত কয়েক মাসে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়াতে তা ৯ শতাংশে নেমেছে; অর্থাৎ, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আব্দুল বারিক খান বলেন, "অনেক উদ্যোক্তা বায়ার ধরে রাখতে সামান্য মুনাফা, মুনাফা ছাড়া কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে লোকসানেও পণ্য রপ্তানি করছেন। এ কারণে হয়তো রপ্তানি আয় বেশি দেখা যাচ্ছে।"
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ মাসে পাট পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬৯৬ মিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৬৬ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত পাট পণ্যের তালিকায় রয়েছে কাঁচাপাট, পাটের সুতা, পাটের বস্তা ও ব্যাগ এবং অন্যান্য পাটজাত পণ্য। ইপিবি'র তথ্য অনুযায়ী, গত সাত মাসে পাট থেকে তৈরি সুতা, বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানি কমলেও কাঁচাপাট এবং অন্যান্য পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। তবে টাকার অঙ্কে সার্বিকভাবে এ খাতের রপ্তানি কমেছে।
ইপিবি'র তথ্য থেকে আরও জানা যায়, আলোচ্য সময়ে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে (নিওটওয়্যার ও ওভেন মিলিয়ে) ২৩.৯৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।
এছাড়া রপ্তানি প্রবৃদ্ধির তালিকায় সম্ভাবনাময় পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত এবং জীবন্ত মাছ, কৃষি পণ্য, বিশেষায়িত টেক্সটাইল পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, রাসায়নিক পণ্য এবং প্লাস্টিক পণ্য।