নেতিবাচক চিন্তা নিয়ন্ত্রণে 'নীল ডলফিন'কে কীভাবে কাজে লাগাবেন?
কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে না চাইলে বা কোনো চিন্তাকে বারবার মন থেকে সরানোর চেষ্টা করলে ঘুরেফিরে সেগুলোই মানুষের মাথায় আসে। মনোবিজ্ঞানে বিষয়টিকে 'আইরনিক প্রসেস' বা 'সাদা ভালুক' প্রবণতা বলে। ১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে হার্ভার্ডের মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ওয়েগনার ধারণাটি উপস্থাপন করেন।
ড. ওয়েগনার সাদা ভালুকের ধারণাটি পান রাশিয়ান সাহিত্যিক ফিওদর দস্তয়ভস্কির লেখা থেকে। ১৮৬৩ সাল পশ্চিম ইউরোপ ঘুরে দস্তয়ভস্কি "উইন্টার নোটস অন সামার ইমপ্রেশনস'-এ লিখেন-
"মেরু ভালুক নিয়ে চিন্তা না করার চেষ্টা করে দেখুন। দেখবেন আপনার মনে প্রতি মুহূর্তে ওই ফালতু জিনিসটাই ঘুরপাক খাবে।"
অর্থাৎ, আমাদের চেপে রাখতে চাওয়া ভাবনাগুলোই বারবার মনে এসে হানা দেয়। শুধু তাই নয়, চেপে রাখতে চাইলে সেগুলো বরং আরও তীব্ররূপ ধারণ করে। এখন চিন্তা করে দেখুন আপনার সাদা ভালুকটা কী? ধরা যাক সম্প্রতি আপনার ব্রেকাপ হয়েছে। প্রাক্তনকে মন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু উল্টো বারবার তার কথাই মনে পড়ে। অর্থাৎ, আপনার সাদা ভালুক হলো প্রাক্তন।
আবার ধরুন আপনি ঠিক করলেন মিটিংয়ে গিয়ে কোনোভাবেই নার্ভাস হবে না। কিন্তু মিটিং চলাকালে আরও বেশি নার্ভাস হয়ে পড়েন। এই নার্ভাসনেসই আপনার ভালুক।
তাহলে এই সাদা ভালুককে দূর করার উপায় কী?
সাদা ভালুককে দূর করতে হলে আপনার দরকার একটি নীল ডলফিন!
নীল ডলফিন কীভাবে আপনার চিন্তাভাবনা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে?
প্রথমেই আসি ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স প্রসঙ্গে। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স হলো আবেগীয় বহিঃপ্রকাশকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সামাল দেওয়া। যাদের আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বেশি তারা শুধু নিজেদের জীবন সুন্দর করে গুছিয়ে নিতে পারে তা নয়, সঙ্গে অন্যদের আবেগীয় বিষয় বোঝার মাধ্যমে তাদের সাথেও সুসম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যেই আপনি এই সাদা ভালুকের মোকাবেলা করতে পারবেন। এরজন্য কী করতে হবে তাই ব্যাখ্যা করছি।
প্রথমেই আপনার সাদা ভালুকটিকে চিহ্নিত করতে হবে। মানে কোন জিনিসটিকে আপনি মন থেকে দূর করতে চাইছেন সবার আগে নিজে সেটি বুঝে নিন। আপনার মনে কোন চিন্তা ঢুকবে তার ওপর হাত না থাকলেও কতক্ষণ সেসব চিন্তা থাকবে সেটা কিন্তু আপনি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
কিন্তু কীভাবে মাথা থেকে এই সাদা ভালুককে দূর করব?
ড. ওয়েগনার এই সাদা ভালুককে দূর করার অনেকগুলো কৌশলই ব্যাখ্যা করেছেন। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় সম্ভবত নীল ডলফিন। এই নীল ডলফিন আর কিছুই নয়, বরং ভিন্ন একটি বিষয়ে চিন্তা। অর্থাৎ, আপনাকে অন্য এমন কিছু ভাবতে হবে যাতে করে ভালুকের চিন্তা মাথা থেকে চলে যায়। নতুন কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে মন অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়াই হলো মূল কৌশল।
শুরুর উদাহরণগুলোর দিকে যাওয়া যাক। ব্রেকাপের পর আপনি বারবার হয়তো প্রাক্তনের ফেসবুক প্রফাইল ঘুরে আসেন। ঘুরেফিরে তার সঙ্গে কাটানো পুরোনো মুহূর্তগুলোর কথা মনে করেন। কিন্তু এখন এই সাদা ভালুককে সরাতে হলে অবশ্যই আপনার অন্যকিছু খুঁজে নিতে হবে। এমন কিছু যেটা আপনাকে তার সঙ্গে কাটানো সময়গুলোর মতোই আনন্দ দিবে। যেমন আপনি যদি সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন তাহলে এখন হলে চলছে এমন কোনো সিনেমা গিয়ে দেখে আসার পরিকল্পনা করুন। অনেকদিন ধরে যাব যাব করেও যে ট্রিপে যাওয়া হচ্ছে না সেটার খোঁজখবর নিন। কিংবা অনলাইনে নতুন কোনো কোর্স করে ফেলুন বা সেগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করে দেখুন।
আবার মিটিংয়ের ক্ষেত্রে 'নার্ভাস হওয়া যাবে না' বারবার এই জপ না করে নিজেকে বলুন 'আমি অনেক এক্সাইটেড। এই মিটিংটা দারুণ হবে'। এভাবে আপনি একটি নেতিবাচক চিন্তাকেও ইতিবাচক রূপ দিতে পারবেন।
তবে মনে রাখুন, আপনার সাদা ভালুককে কিন্তু পুরোপুরি সরাতে পারবেন না। ভালুক হয়তো প্রায়ই হানা দিতে আসবে। কিন্তু আপনার নীল ডলফিন নিশ্চিত করব সেই ভালুক যেন বেশিক্ষণ না থাকে।
এভাবেই আপনার চিন্তাভাবনা ও আবেগগুলো আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার পরিবর্তে আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
- সূত্র: ইঙ্ক ম্যাগাজিন