সাতক্ষীরায় ব্যতিক্রমধর্মী ঝাল মিষ্টি
মিষ্টির কদর রয়েছে ভোজন রসিক সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝেই। সম্প্রতি, সাতক্ষীরায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী মিষ্টির দোকান করা হয়েছে। সেখানে ৩৫ ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী মিষ্টির মধ্যে বাড়তি আকর্ষণ ছড়িয়েছে ঝাল মিষ্টি।
দোকানটি ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন দোকানটির মালিক মো. দেলোওয়ার হোসেন।
সাতক্ষীরা শহরের বাস টার্মিনালের সামনেই দোকান মৌবন সুইটস্। ১৪ দিন আগে দোকানটির উদ্বোধন করা হয়। এখানে পাওয়া যাচ্ছে ব্যতিক্রমী নানা ধরনের মিষ্টি।
সাতক্ষীরায় এ ধরনের মিষ্টি আগে পাওয়া যায়নি বলে দাবি দোকানটির সত্বাধিকারী মো. দেলোওয়ার হোসেনের। দোকানের কারিগর জানান, প্রতিদিন মৌবন সুইটস থেকে ৬০-৭০ কেজি মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে।
ঝাল মিষ্টি কিনতে আসা সাতক্ষীরা শহরের পেট্রোল-মবিল ব্যবসায়ী আবু মুসা বলেন, "ঝাল দিয়ে মিষ্টি বানানো যায় এটি আমি আগে কখনো শুনিনি। ঘটনাটি জানার পর মিষ্টি খাওয়া ও কেনার জন্য দোকানটিতে এসেছি।"
অপরদিকে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার জন্য যশোর জেলার বেনাপোল এলাকা থেকে মোহাম্মদ আলী এসেছেন সাতক্ষীরায়। দোকানটি থেকে দুই কেজি মিষ্টি কিনেছেন তিনি।
মিষ্টি খাওয়ার পর মোহাম্মদ আলী জানান, "মিষ্টি খেয়ে ভালো লেগেছে। দোকানটির পরিবেশটাও রুচি সম্মত। আমি এই প্রথম এসেছি দোকানটিতে।"
মো. দেলোওয়ার হোসেন জানান, "ব্যতিক্রমধর্মী যে কোন কাজই করতে আমার ভালো লাগে। এর আগে মৌবন রেষ্টুরেন্ট করেছিলাম যেখানে পানিতে থাকা মাছের সঙ্গে চেয়ারে বসে খাওয়া যায়। সেটি অনেক সাড়া ফেলেছিল।"
"২৪ জানুয়ারি থেকে এই মিষ্টির দোকান শুরু করেছি। এখানে ৩৫ ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায়। যা সাতক্ষীরায় আগে পাওয়া যেতো না, এবারই প্রথম," যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, "ক্রেতারা মূলত ঝাল মিষ্টিই আগ্রহের সঙ্গে কিনছে ও দেখতে আসছে। এটাই মূলত বাড়তি আকর্ষণ যুগিয়েছে। এছাড়া চকলেট দই, মৌবন স্পেশাল দই এগুলোও আকর্ষণীয়। এছাড়া বাকি মিষ্টির মধ্যে বেশির ভাগই ইন্ডিয়ান মিষ্টি।"
পরিচ্ছন্ন পরিবেশে মিষ্টি প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কোনোরকম ভেজাল না মিশিয়ে দুধ ও ছানা দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মিষ্টি। এমনকি ডিমের কুসুম দিয়েও মিষ্টি পাওয়া যাচ্ছে এখানে।
৬ জন কর্মচারি কাজ করছে মৌবন সুইটস্ দোকানে। এর মধ্যে তিনজন মিষ্টির কারিগর। প্রধান কারিগর রেজাউল ইসলাম রাজবাড়ী জেলার সূর্যনগর গ্রামের বাসিন্দা। গত ১৮ বছর ধরে মিষ্টি তৈরী করছেন এই কারিগর। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মিষ্টি তৈরীর কাজ করেছেন তিনি।
রেজাউল ইসলাম বলেন, "আমি চেষ্টা করি সব সময় নতুন নতুন কিছু মিষ্টি তৈরী করার। পেষ্টি, কাশমিরী গোল্লা, ডিমের বরফি, ঝাল মিষ্টি এসব সাতক্ষীরাতে নেই। ডিমের বরফি শুধু ডিম আর দুধ দিয়ে বানানো। পেষ্টি শুধুমাত্র দুধের সর দিয়ে বানানো। ঝাল মিষ্টিটা ছানা, পুদিনা পাতা ও ঝাল দিয়ে তৈরী করা হয়।"
"শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই মানুষ খুব সাড়া দিচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৬০-৭০ কেজি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে," বলেন তিনি।
"অন্য দোকানের সঙ্গে তফাৎ জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক দোকানে ছানার মধ্যে রং বা অন্যকিছু মিশিয়ে মিষ্টি তৈরী করে তবে এখানে সেসব কোনো কিছুই করা হয় না। এখানে ভেজালের কিছুই নেই বা কোনো ফ্লেভারও দেওয়া হয় না। ৩৫ ধরনের মিষ্টির মধ্যে ২৫ ধরনের মিষ্টিই ব্যতিক্রম," যোগ করেন এই কারিগর।
দোকানটিতে এখন প্রতি কেজি পেষ্টি মিস্টি ৬০০ টাকা, ডিমের বরফি ৪০০ টাকা, ঝাল মিষ্টি ৩৫০ টাকা কেজি, বম্বে রোল ৪৫০ টাকা, কাশ্মীরি গোল্লা ৫০০ টাকা, মিঠু সন্দেশ ৪৫০ টাকা, কাচা ছানা ৪৫০ টাকা, ইলিশ পেটি ৪৫০, চকলেট দই ২০০ টাকাসহ ৩৫ ধরনের মিষ্টি প্রস্তুত হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত জানান, ঝাল মিষ্টি খেলে বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই, ফলে এটি খাওয়া যেতে পারে। তবে ঝালের পরিমাণ বেশি হলে, বা একেবারে বেশি মিষ্টি খেয়ে ফেললে অ্যাসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান বলেন, "ঝাল মিষ্টি হয় এটা আমি ইউটিউবে দেখেছি তবে বাস্তবে এখনও দেখিনি। চলাফেরার পথে মৌবন সুইটস্ দোকানটি দেখেছি তবে সেখানে কী ধরনের মিষ্টি তৈরী করছে সেটি আমি জানি না। তাদের মিষ্টি প্রস্তুত ও কার্যক্রম বিষয়ে দোকানটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখবো।"