কমলাপুর-মদনপুর মেট্রোরেল নির্মাণে ঋণ দিতে আগ্রহী কোরিয়া
বাংলাদেশে মেট্রোরেল বা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-৪) প্রকল্পে ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। তবে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের এ আগ্রহ চূড়ান্ত হবে দেশটির সরকারের সম্মতি পেলে। এ ঋণ চূড়ান্ত করতে কোরিয়ান সরকারের কাছে দ্রুত আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন অর্থনেতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, কমলাপুর থেকে কাঁচপুর হয়ে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত এমআরটি-৪ লাইনের দৈর্ঘ্য হবে ১৬ কিলোমিটার। এ রুটে কমলাপুর থেকে যাত্রাবাড়ি মেট্রোরেল মাটির নিচে যেতে পারে (আন্ডারগ্রাউন্ড)। এছাড়া কাঁচপুরে মেঘনা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করতে হবে। কাঁচপুর থেকে মদনপুর পর্যন্ত হবে এলিভেটেড মেট্রো। প্রাথমিক হিসাবে এমআরটি-৪ লাইন নির্মাণে ৩০ হাজার কোটি ব্যয় হতে পারে ধারণা করছে ডিএমটিসিএল। তবে সবকিছু চূড়ান্ত হবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার পর।
ইআরডির কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক- গভর্নমেন্ট এজেন্সি ফর দ্য ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ), এমআরটি লাইন-৪ প্রকল্পসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) এবং কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের ফরম্যাট অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তুতি সহায়িকা (পিপিএ) যথাযথ মাধ্যমে ইআরডিতে পাঠাতে বলা হয়েছে। যেখানে এমআরটি-৪ লাইন প্রকল্প রয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডিএমটিসিএল এমআরটি-৪ লাইন প্রকল্পের পিডিপিপি তৈরি করছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে এটি তারা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পাঠাবে। পিডিপিপি যাচাই-বাছাই শেষে এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে এটি পাঠানো হবে পরিকল্পনা কমিশনে। পিডিপিপিতে কমিশনের নীতিগত অনুমোদন পেলে ইআরডির মাধ্যমে ঋণ প্রস্তাব যাবে কোরিয়ার কাছে। এরপর কোরিয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের তুলনায় খুবই সহজ শর্তে বাংলাদেশকে ঋণ দেয় কোরিয়ান সরকার। কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের ঋণের সুদ হার ০.১-০৫% এবং সার্ভিস চার্জ ০.১%। ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ১৫ বছর। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৪০ বছর।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "২০৩০ সালের মধ্যে ১২৯.৯০ কিলোমিটার মেট্রোরেল রুট নির্মাণের কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ঢাকার কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৪ অন্তর্ভুক্ত।"
তিনি আরো বলেন, কোরিয়ান অর্থায়নে এমআরটি-৪ লাইন বাস্তবায়নের বিষয়ে ইআরডি থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সড়ক, পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার বাইরেও মেট্রোরেল সেবা সম্প্রসারিত করতে চায় সরকার, এর মধ্যে আছে ঢাকা জেলার পার্শ্ববর্তী কিছু শহর ও উপশহর। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ অন্যান্য জেলায় এটি সম্প্রসারণ করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এবং ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এসব এলাকায় মেট্রোর রুট বসানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ করছে। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান ফান্ড ফর পোভারটি রিডাকশনের (জেএফপিআর) সহায়তায় সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) হালনাগাদ করার প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে ডিটিসিএ।
ঢাকা শহর এবং আশেপাশের এলাকায় যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ৬টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের কাজ ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এসব এমআরটি লাইনের নির্মাণ সম্পন্ন হলে ঢাকায় আর যানজট থাকবে না বলে আশা করা হচ্ছে।