ইস্পাতের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী প্লাস্টিক উদ্ভাবন
ইস্পাতের চেয়েও দ্বিগুণ শক্তিশালী নতুন ধরনের প্লাস্টিক উদ্ভাবন করেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা। একদিন এ প্লাস্টিক ভবন নির্মাণের উপাদান হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করছেন তারা।
২ডিপিএ-১ নামের এই বস্তু বেশ হালকা, সাধারণ প্লাস্টিকের মতো সহজেই ভাজ করা যায়, বিভিন্ন আকারে ফেলা যায়। তবে এটির প্রতিরোধ ক্ষমতা ইস্পাত আর বুলেটপ্রুফ গ্লাসের চেয়েও বেশি বলে দাবি করছেন এই প্রকল্পের গবেষকরা।
বিভিন্ন বস্তুর স্থায়িত্ব বাড়াতে অদূর ভবিষ্যতে এই বস্তুটি বহিঃআবরণী হিসেবে ব্যবহার করা হবে, নির্মাণকাজেও এর ব্যবহার হবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
"সাধারণত আমাদের মাথায় এমন চিন্তা আসেই না যে ভবন তৈরির কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহার হতে পারে। কিন্তু এই বস্তুটি অনেক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে," বলছিলেন এমআইটি'র কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক মাইকেল স্ত্রানো।
২ডিপিএ-১ এক ধরনের পলিমার। পলিমার হলো উচ্চ আণবিক ভরবিশিষ্ট যৌগ। সব ধরনের প্লাস্টিকে এই যৌগটির উপস্থিতি আছে। কিন্তু অন্য সব ধরনের পলিমার এক ডাইমেনশনের চেইনে তৈরি হয়, ডিপিডিএ-১ হয় দুই ডাইমেনশনে। এতে পলিঅ্যামারাইডের মতো একটি শীট তৈরি হয়।
"স্প্যাগেটির আকারের অণু বানানোর বদলে আমরা শীটের মতো আণবিক তল বানাই যাতে অণুগুলো পরস্পরের সাথে দ্বিমাত্রিকভাবে সংযুক্ত থাকে," বলেন স্ত্রানো।
এই দ্বিমাত্রিকতার কারণেই ২ডিপিএ-১ এর বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ধরনের, এতে সাধারণ পলিমারের মধ্যকার ফাঁকাস্থান না থাকায় প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
এটি ভাঙতে ইস্পাত ভাঙার চেয়ে দ্বিগুণ শক্তির প্রয়োজন হবে, যদিয এর ঘনত্ব ইস্পাতের ছয় ভাগের এক ভাগ মাত্র। একারণেই ওজনেও বেশ হালকা এটি।
একে বুলেটপ্রুফ গ্লাসের সঙ্গেও তুলনা করেছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, বুলেটপ্রুফ গ্লাসের চেয়ে এর ক্ষতিসাধন হতে চার-ছয় গুণ বেশি শক্তি লাগবে।
নতুন একটি পলিমেরিসেশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ২ডিপিএ-১ সিনসেসাইজ করেছেন গবেষকরা। এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে 'ন্যাচার' জার্নালে।
এই নতুন ধরনের প্লাস্টিকের আরেকটি সুবিধাজনক দিক হলো, এটি সহজেই বিরাট পরিসরে উৎপাদন সম্ভব। অন্যান্য প্লাস্টিকের মতোই এটি কক্ষ তাপমাত্রায় উৎপাদন সম্ভব, খুব বেশি তাপেরও প্রয়োজন হবে না।
গবেষকরা আরও বলছে, এ ধরনের প্লাস্টিক পুনঃব্যবহারযোগ্য।
বর্তমানে, বিশ্বের ৭৯ শতাংশ প্লাস্টিক ব্যবহারের পর আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়। হাজার হাজার বছর ধরে পরিবেশ দূষণে ভূমিকা রাখে এটি। পুনঃব্যবহারযোগ্য হওয়ায় এটি তুলনামূলক পরিবেশবান্ধব বিকল্পও।
সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস, ইউএস টুডে