শতাধিক ভাষা অনুবাদে সক্ষম এআই ট্রান্সলেটর তৈরি করছে মেটা
কেমন হতো, যদি আপনি পৃথিবীর সবগুলো ভাষাতেই কথা বলতে পারতেন? বিশ্বভ্রমণ করে এই ছোট্ট গ্রহটির প্রতিটি প্রান্তেই বন্ধু বানিয়ে ফেলতে পারতেন অনায়াসে। আর যদি সশরীরে বিশ্বব্যাপী ঘুরে বেড়ানো সম্ভব না-ও হতো, ইন্টারনেটের কল্যাণে তা করতে পারতেন তো বটেই।
এবার মেটা আপনাকে দিতে চলেছে সেরকমই অবিশ্বাস্য অথচ পরম আকাঙ্ক্ষিত ক্ষমতা। সম্প্রতি কোম্পানিটি তাদের প্রকাশিত একটি নতুন ব্লগে জানিয়েছে এ কথা।
ব্লগটির ভাষ্য অনুযায়ী, মেটা বর্তমানে একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-ফোকাসড ট্রান্সলেটর তৈরির কাজ চালাচ্ছে। ট্রান্সলেটরটির সাহায্যে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্বজনীন বহুল ব্যবহৃত ও প্রচলিত প্রায় সকল ভাষাই অনুবাদ করা যাবে। এতে করে মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগের ধরন চিরতরে বদলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একটি শক্তিশালী অনুবাদক এআই
মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ গত বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এক অনলাইন ইভেন্টেও এ ব্যাপারে কথা বলেন। তিনি জানান, "যে কারও সঙ্গে যেকোনো ভাষায় যোগাযোগ — এটি রীতিমতো একটি সুপারপাওয়ার। মানুষ আজন্মকাল ধরে এমন শক্তির আশা করে এসেছে। এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) আমাদের জীবদ্দশাতেই এমন ক্ষমতা উপহার দিতে চলেছে।"
জাকারবার্গ আরও যোগ করেন, "এই ক্ষমতাটি বিশেষত তখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, যখন মানুষ ভার্চুয়াল জগতজুড়ে টেলিপোর্টিং করতে শুরু করবে, এবং ভিন্ন ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষের সঙ্গে মিশে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করবে।"
নতুন এই এআই মডেলটিকে ডাকা হচ্ছে "নো ল্যাঙ্গুয়েজ লেফট বিহাইন্ড" নামে। বলা হচ্ছে, বর্তমানে বিদ্যমান মেশিন ট্রান্সলেশন মডেলগুলোর নতুন কোনো ভাষা শিখতে যে পরিমাণ লার্নিং ডেটার প্রয়োজন হয়, নতুন এই এআই তারচেয়ে অনেক কম ডেটা দিয়েই কাজ চালাতে পারবে। তাছাড়া এটি কোনো কথাকে সরাসরি অনুবাদ করে ফেলবে। আগে সেটিকে ট্রান্সক্রাইব বা লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজন পড়বে না।
"আমরা একটি একক মডেল তৈরি করছি যেটি শত শত ভাষাকে স্টেট-অব-দ্য-আর্ট রেজাল্টের সঙ্গে অনুবাদ করতে পারবে। সেখানে অস্ট্রিয়ান থেকে উগান্ডা থেকে উর্দু, প্রায় সব ধরনের ভাষার জোড়ই থাকবে," জাকারবার্গ বলেন।
দূর হবে ভাষার প্রতিবন্ধকতা
মেটা অবশ্য কোনো টাইমফ্রেম জানায়নি যে কবে নাগাদ তারা এই নতুন প্রোডাক্টটি বাজারে আনবে। তাছাড়া কীভাবে এটি ডেভেলপ করা হবে, সে সংক্রান্ত কোনো রোডম্যাপও তারা দেখায়নি।
তবে মেটার দাবি, তাদের এই নতুন উদ্ভাবনটি বিশ্বজুড়ে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
"ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা দূর করার ব্যাপারটি হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে শত কোটি মানুষের পক্ষে তাদের আঞ্চলিক বা পছন্দসই ভাষাতেই অনলাইন থেকে যেকোনো তথ্য পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে," নিজেদের ব্লগে মেটা বলেছে।
"এমটি (মেশিন ট্রান্সলেশন) খাতে অগ্রগতি কেবল তাদেরকেই সাহায্য করবে না যারা বর্তমানে ইন্টারনেটে আধিপত্য বিস্তার করছে। এটি গঠনগতভাবে বিশ্ববাসীর পারস্পরিক যোগাযোগ ও আইডিয়া আদানপ্রদানের ধরনেও পরিবর্তন নিয়ে আসবে।"
কোম্পানিটি আরও জানিয়েছে, বর্তমানে যেসব আধুনিক ট্রান্সলেশন সিস্টেম রয়েছে, সেগুলো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বেশিকেই সেবা দিতে পারে না। এই অবহেলিত জনগোষ্ঠী ও ভাষাকেই যোগাযোগের মূলধারায় নিয়ে আসা এখন মেটার প্রধান লক্ষ্য।
তবে বলাই বাহুল্য, কাজটি খুব একটা সহজ হবে না। নতুন টুল পরিচালনার ক্ষেত্রে মেটাকে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। বিশেষত একটি ট্রান্সলেশন ডিভাইসে যে হেট স্পিচের মডারেশন খুব কঠিন, সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কোম্পানিটি ইতোমধ্যেই, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রাক্কালে মিসইনফরমেশন শনাক্ত করতে ও সেগুলো মুছে দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
- সূত্র: ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং