সুইফট থেকে বাদ পড়ায় রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনের বিকল্প পথ খুঁজছে ভারত
ইউক্রেনের ওপর রুশ সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনের জেরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় দেশগুলো আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক সুইফট থেকে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে রাশিয়ার সঙ্গে অন্যান্য দেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনের উপায়। আর এ কারণেই দেশটির সঙ্গে লেনদেনের বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করেছে ভারত। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফট হল দ্রুত ও নিরাপদে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের প্রধান ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আর্থিক লেনদেন এই ব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। বিশ্বের প্রায় সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত। তাই সুইফট থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে অপসারণের পশ্চিমা সিদ্ধান্ত দেশটির অর্থনীতিতে গুরুতর আঘাত হানবে বলে ধারণা করছেন অনেক বিশ্লেষক।
তবে, সুইফট থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য বা এক্ষেত্রে কোন কোন সেগমেন্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এরই মধ্যে ভারত সরকার, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) এবং দেশেটির শীর্ষ ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যে বিকল্প পথ খোঁজা শুরু করেছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ভারতের দুই ব্যাংক কর্মকর্তা ব্লুমবার্গকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তাদের মতে, রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখতে ভারত এক দশক পুরনো একটি বিকল্প ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারে। ২০১২ সালে পারমাণবিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে যখন ইরানের ওপর পশ্চিমাবিশ্ব অবরোধ চাপিয়েছিল, তখন ইরানের সঙ্গে লেনদেনের জন্য ওই বিশেষ ব্যবস্থাটি ব্যবহার করতো ভারত।
এর মাধ্যমে ইরানের ব্যাংককে কলকাতাভিত্তিক ইউসিও ব্যাংকে একটি 'ভোস্ট্রো' অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেওয়া হয়। ভারতের আমদানিকারকরা ইরান থেকে তেল কেনার জন্য ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে রুপি জমা করতো। এরপর বাণিজ্য শেষে ইউসিও ব্যাংক ওই অর্থ ইরানে পাঠিয়ে দিত।
নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলোর বিধিনিষেধ এড়াতে, সীমিত বৈশ্বিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যাংকগুলোকে এই ব্যবস্থার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।
রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এমন কোনো ব্যবস্থা বেছে নিতে পারে ভারত।
তবে, বিনিময় হারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি রুবেলকে (রাশিয়ার মুদ্রা) সরাসরি রুপিতে রূপান্তরের জন্য পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করা, এই প্রক্রিয়ার মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে দাবি করেছে ব্লুমবার্গের সূত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তিদের একজন বলেন, "যেহেতু দুই দেশের (রাশিয়া-ভারত) মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ইরানের সঙ্গে ভারতের আগের লেনদেনের তুলনায় যথেষ্ট বড়, তাই সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিনিময় হারের ঝুঁকি মোকাবেলায় কী করা যেতে পারে তা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।"
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে ৮.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। যেখানে ভারত থেকে রপ্তানির পরিমাণ ২.৬ বিলিয়ন ডলার এবং রাশিয়া থেকে ভারতে আমদানির পরিমাণ ৫.৪৮ বিলিয়ন ডলার।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ