নির্বাচনী ইশতেহারকে ‘স্টান্টবাজি’ বলে অভিহিত করলেন অর্থনীতিবিদরা
নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ঘোষিত ইশতেহারকে 'রাজনৈতিক স্টান্টবাজি' বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত।
তিনি বলেছেন, "জাতীয় উন্নয়নের অঙ্গীকার, যেটি রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে থাকে। সেটি আমি কোনোদিন দেখিনি। আমার বয়স এখন ৭০ বছর, অতএব আমি যখন দেখিনি তাহলে কয়জনে দেখেছে তা আমার জানা নেই। উন্নয়নের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের ঘোষিত ইশতেহারের কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো সব স্টান্টবাজি। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কোনো উপাদান সেখানে থাকলেও তার বাস্তবায়ন হয় না।"
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদে "জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা" শীর্ষক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘ ডেমোক্রেসি ফান্ডের (ইউএনডিইএফ) সহযোগিতায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এবং ইয়ং পাওয়ার ইন স্যোশাল একশান (ইপসা), চট্টগ্রাম- এ সংলাপের আয়োজন করে।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য। মূল প্রবন্ধে অভ্র ভট্টাচার্য বলেন, খানা ব্যয় জরিপ ২০১৬ এর তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ নিম্ন দারিদ্রসীমা ও ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ উচ্চ দারিদ্রসীমায় বসবাস করছে। কিন্তু সে অনুপাতে চাঁদপুর, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও লক্ষীপুরের মানুষ জাতীয় দারিদ্রসীমার অনেক উপরে অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম বিভাগের এসব অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, "জনগণের উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক সরকারগুলো দায়বদ্ধ থাকে। তাই নির্বাচনের সময় তারা যে অঙ্গীকার করেন তা প্রতিপালন করা তাদের দায়িত্ব। তারা যে ইশতেহার ঘোষণা করে নির্বাচনের পরে সরকার গঠন করে, সেগুলো সরকার পালন করছে কিনা তা নিয়ে জনগণের মাঝে জিজ্ঞাসা থাকার প্রয়োজন রয়েছে। যাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলাম, তাদের কাছে জনগণের আরও স্পষ্টভাবে জবাব চাইবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।"
ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, "আমরা সবসময় উন্নয়নের কথা শুনছি। আমাদের অনেক অবকাঠামো হচ্ছে। রাস্তাঘাট হচ্ছে, অনেক বড় বড় অট্টালিকা হচ্ছে। কিন্তু এই উন্নয়ন কি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন? এখানে কি একজন প্রবীণ মানুষের চলাচলের অধিকার নিশ্চিত করতে পারছি? আমাদের সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের কি আমরা উন্নয়নের অংশীদার করতে পারছি? তাদের অধিকার নিশ্চিতে সে উন্নয়নগুলো কি ভূমিকা রাখছে? এই উন্নয়নের বাইরে থেকে যাচ্ছে দেশের ১৮ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ। তাদেরকে আমরা সত্যিকার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের অংশ করতে পারিনি।"
ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান বলেন, "নির্বাচন এলেই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহার উপস্থাপন করে। নাগরিক সমাজ হিসেবে আমরা এটা দেখে উৎসাহী হই, পরে আশাহত হই। নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পরে সেটা নিয়ে তাদের আর খেয়াল থাকে না। ম্যাক্রো লেভেলে দেখলে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আমরা আশাহত হই, যখন দেখি সেই উন্নয়নের সুফল তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছায়নি।"
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ঘাসফুলের চেয়ারম্যান ড. মনজুর উল আমিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ফরিদুল আলম ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা।