অস্ট্রেলিয়ায় টয়লেট পেপার কেনার হিড়িক
মনে করুন আপনি টয়লেটে বসে আছেন। এমন সময় কেয়ামত আরম্ভ হয়ে গেল আর তখনই খেয়াল করলেন আপনার টয়লেট পেপার শেষ। এর চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আর কি হতে পারে?
অন্তত অস্ট্রেলিয়াবাসীদের জন্য টয়লেট পেপার সংক্রান্ত আতংকের ধরনটা এমনই। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কে আছে বিশ্ববাসী। সংক্রমণ ঠেকাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর বেশি জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর এর প্রেক্ষিতেই টয়লেট পেপার কেনার ধুম পড়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটির বৃহত্তম শহর সিডনির সুপারমার্কেটের তাকগুলি কয়েক মিনিটের মধ্যে সাফ হয়ে গেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একটি পরিবার বা ক্রেতাকে চারটির বেশি প্যাকেট না কেনার সীমা প্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন।
এমনকি গত বুধবার সুপার মার্কেটে টয়লেট পেপার কেনাকে কেন্দ্র করে পকেট থেকে কেঁচি বের করে তেড়ে আসে এক ব্যক্তি। শেষমেশ পুলিশ এসে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আর টয়লেট পেপার নিয়ে এমন কাড়াকাড়ির মধ্যে স্যোশাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হয়েছে #টয়লেট পেপারগেট ও #টয়লেট পেপার ক্রাইসিস নামের হ্যাশট্যাগ দুটি।
গত ৪৮ ঘণ্টায় টয়লেট পেপার চুরির কেসও হয়েছে বেশ কয়েকটা।
কিন্তু কেন এই কাড়াকাড়ি?
সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে গেছে করোনা ভাইরাস। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার নির্দেশ মেনে টয়লেট পেপার থেকে শুরু করে মাস্ক, টিস্যু পর্যন্ত কিনে দোকান সাফ করে দিচ্ছে মানুষ।
সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট মজুদ থাকার কথা ঘোষণা দেয়া হলেও থামছে না এই উন্মাদনা।
তবে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভোক্তা বিশেষজ্ঞ ডা. রোহান মিলার বলেন, " যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় তখন পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে বা কতটা খারাপ দিকে গড়াবে মানুষ জানে না। তাই পরিস্থতিকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি পেতে মানুষ প্রয়োজন না থাকলেও জিনিস কিনে মজুদ করতে চায়।"
তিনি মনে করেন এই প্রবণতা নগরায়ন সমাজ এবং পুঁজিবাদী জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি যা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দ্বারা সর্বোচ্চ প্রভাবিত।
মিলার বলেন, "আমরা সংকট ও অভাবের জন্য অভ্যস্ত নই। আমরা যখন চাই তখনই বেছে নিতে পারি বা বেছে নিতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। সুতরাং প্রয়োজনের সময় হাত বাড়ালেই পর্যাপ্ত পরিমাণ টয়লেট পেপার পাওয়ার এই মর্যাদা বজায় রাখার জন্য এই কাড়াকাড়ির মানসিকতা আমাদের।"
আর ভোক্তাদের মনে এই বস্তুকেন্দ্রিক মর্যাদার চাহিদা তৈরি করতে কাজ করে বিজ্ঞাপনগুলো। টয়লেট পেপারে মতো নরম, সাদা, তুলতুলে কুকুরছানা দিয়ে বিজ্ঞাপন সাজায় নির্মাতারা। আর এই কুকুরছানা ধনীদের বিলাসিতার একটি প্রতীক হিসেবে কাজ করে। ফলে ভোক্তাদের অবচেতনে সেই জীবনযাত্রার প্রতি এক ধরণের চাহিদা তৈরি করার মাধ্যমে টয়লেট পেপারের মতো বস্তুর প্রতি মোহ জন্মায় আমাদের।
"টয়লেট পেপারে আসলেই কিছু যায় আসে না - এটি খাবার বা পানির মতো মৌলিক চাহিদার তুলনায় বেঁচে থাকার তালিকার একেবারে নিচে- তবে এটি ন্যূনতম মান হিসাবে আঁকড়ে ধরে থাকা নিতান্তই সামান্য ব্যাপার।"