টানা চতুর্থবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ বাংলাদেশ
আবারো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুপূর্ণ দেশের তালিকায় প্রথমে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। বায়ুমান এবং বায়ু পরিশোধন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা সুইস সংস্থা আইকিউএয়ারের সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটি চিহ্নিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, "মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বাতাসের মান বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ এবং সবচেয়ে দূষিত ৫০ শহরের মধ্যে ৪৬টিই এই অঞ্চলে অবস্থিত।"
গতবছর ৬,৪৭৫টি শহরের বায়ুতে দূষণের মাত্রা নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
বাতাসের মধ্যে পিএম-২.৫ নামে পরিচিত এক ধরনের পার্টিকল বা সূক্ষ্ম কণার উপস্থিতি হিসাব করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি।
২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে পিএম-২.৫ এর গড় মাত্রা ছিল ৭৬.৯ মাইক্রোগ্রাম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, পিএম-২.৫ এর গড় বার্ষিক মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়।
অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা (পিএম ২.৫ মাত্রা-৭৮.১)। পিএম ২.৫ মাত্রা ৮৫ নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি তালিকার শীর্ষে রয়েছে।
চাদের এন'জামেনা আছে তৃতীয় অবস্থানে। সেখানে দূষণের গড় মাত্রা ৭৭.৬।
ডব্লিউএইচও গত বছর তার বায়ুমান নির্দেশক গাইডলাইন সংশোধন করে জানায় যে, দূষণের ঘনত্ব কম হলেও তা উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ।
জরিপের ফলাফল অনুসারে, ২০২১ সালে একটি দেশও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রত্যাশিত এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড বা বায়ুমানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হয়নি।
২০২১ সালে জরিপ করা শহরগুলোর মধ্যে মাত্র ৩.৪% এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে; অন্যদিকে ৯৩টি শহরে পিএম-২.৫ এর মাত্রা প্রস্তাবিত মানের চেয়ে ১০ গুণ বেশি পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচী অনুসারে, বিশ্বব্যাপী বায়ু দূষণের সাথে সম্পর্কিত যত প্রাণহানি ঘটে তার ৭০ শতাংশই মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় ঘটে; আইকিউএয়ারও এটি উল্লেখ করেছে।
এই অঞ্চলের মাত্র দুটি শহরই ডব্লিউএইচও নির্ধারিত গাইডলাইনের বার্ষিক গড় ঘনত্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে; আর এ দুইটি শহরই কাজাখস্তানের।
আইকিউএয়ার তাদের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছে, শিল্পায়ন এবং নগরায়ণ দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ু দূষণে বাড়তি চাপ যোগ করেছে। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে রান্নার জন্য জ্বালানী হিসেবে বায়োমাস পোড়ানোর ফলেও এখানে দূষণের মাত্রা বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্ট্রোক, হৃদরোগ, শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং সংক্রমণের মতো বায়ু দূষণজনিত রোগে বিশ্বে প্রতিবছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে।