ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এগিয়ে
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি এপ্রিলের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ বেশি সম্পন্ন হয়েছে নির্মাণকাজ। আশা করা হচ্ছে, বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রকল্পটির 'সফট লঞ্চিং' আগামী বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই সম্ভব হবে।
সোমবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, "প্রত্যাশার চেয়েও এগিয়ে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ। বিশ্বমানের এ বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ প্রত্যাশিত লক্ষ্যের চেয়ে ১ দশমিক ৯ শতাংশ এগিয়ে আছে।"
"৮ এপ্রিল পর্যন্ত তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, বাস্তবে শেষ হয়েছে ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে", যোগ করেন তিনি।
আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই, নির্ধারিত সময়ে টার্মিনালটি উদ্বোধনের আশা প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, "তৃতীয় টার্মিনালের যাত্রীরা লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর বা থাইল্যান্ডের বিমানবন্দরগুলোর মতো একই মানের পরিষেবা উপভোগ করবেন।"
"কিছু কাজ বাকি থাকলেও সফট লঞ্চটি আগেই করা যেতে পারে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি। নির্মাণ কাজ শেষ হলে অবকাঠামোগত যে সীমাবদ্ধতা আছে, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে", যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর তথ্য অনুসারে, প্রায় ৪ হাজার দেশি ও বিদেশি কর্মী কাজ করছেন এই প্রকল্পে। ঢাকা বিমানবন্দর বর্তমানে যে সংখ্যক যাত্রীকে পরিষেবা দিতে পারে, নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে বিশ্বমানের এই টার্মিনাল তার দ্বিগুণ পরিমাণ যাত্রীকে পরিষেবা দিতে পারবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
তৃতীয় টার্মিনালের কাজের সঙ্গে টার্মিনালে প্রবেশের টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগে কোনো সমস্যা নেই উল্লেখ করে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, "এই কাজগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজটি কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে; তখন এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে টার্মিনালকে যুক্ত করা হবে।"
"আশকোনা হজ ক্যাম্প পর্যন্ত টানেল সম্প্রসারণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে", যোগ করেন তিনি।
বেবিচক-এর তথ্য অনুসারে, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পরে ঢাকা বিমাননবন্দর প্রতি বছর দুই কোটিরও বেশি যাত্রীকে পরিষেবা দিতে সক্ষম হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, টার্মিনালটি ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গ মিটার জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে। এতে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গ মিটার ফ্লোর স্পেস, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৪টি প্রস্থান বা ডিপার্চার কাউন্টার এবং ৬৪টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক থাকবে।
২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার 'হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল' এর বহুল প্রতীক্ষিত নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, "এটা আমরা দেখবো। যেটা সামঞ্জস্য ব্যয়, সেটাই দেখা হবে। কোনো নিশ্চয়তা নেই। সব কাজ একসঙ্গে হয়ে যাবে।"
এ সময় বাংলাদেশ বেবিচক-এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস-মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, "নির্ধারিত সময় অনুযায়ী তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ একটু দেরিতে শুরু হওয়ায় একটু দেরি হয়েছে।"
তৃতীয় টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক একেএম মাকসুদুল ইসলামের মতে, নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এর মাধ্যমে বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ও কার্গো ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে।
সম্প্রতি প্রকল্প পরিদর্শন করা বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রতিনিধিদলকে তিনি বলেন, টার্মিনালের কাজ শেষ হলে বিমানবন্দরটি বর্তমান ৮০ লাখের পরিবর্তে ২ কোটি যাত্রী এবং বর্তমান ২ লাখ টন কার্গোর পরিবর্তে ৫ লাখ টন কার্গো পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।
এদিকে, বিমানবন্দরে দ্রুতগতির ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণের কাজও দ্রুত চলছে। সোমবার বেবিচক-এর চেয়ারম্যান বলেন, "জুন নাগাদ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। তবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই এই কাজ শেষ হবে।"
চেয়ারম্যান আরও জানান, বিমানবন্দরে নতুন রাডার বসানোর কাজও শুরু হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির কাছ থেকে সবুজ সংকেত পায় তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পটি। এতে প্রাথমিকভাবে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা।
তবে, ২০১৯ সালে আনুমানিক এই ব্যয়ের পরিমাণ সংশোধন করা হয়। মোট ব্যয়ের ৫ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার এবং বাকি অর্থ দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।