যাত্রী খরা বাস ও লঞ্চে, চাহিদা তুমুল ট্রেন টিকিটের
মঙ্গলবার ২৪ রোযা পার হলো। ঈদ খুব কাছাকাছি চলে আসলেও বাস ও লঞ্চে নেই তেমন যাত্রী চাপ। ২৮-৩০ তারিখের অগ্রিম টিকেটের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বর্তমানে স্বাভাবিক সময়ের থেকেও কম যাত্রী নিয়ে চলতে হচ্ছে তাদের। পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের দাবি এই রকম অবস্থা আগে কোনো ঈদে দেখেননি।
"গতবছর করোনা থাকলেও ২০ রোযার পরই আমাদের প্রচুর যাত্রী চাপ ছিল। টিকিট নিয়ে মারামারি লেগে যেত গাবতলী টার্মিনালে। কিন্তু এবার ফাঁকা যাচ্ছে", বলেন ঈগল পরিবহনের ম্যানেজার সুলতান আহম্মেদ।
একটি বাসের টিকিট বিক্রির তালিকা অনলাইনে দেখিয়ে তিনি বলেন, "৩৬ সিটে মাত্র ৭ জন যাত্রী নিয়ে বাস ঢাকায় আসছে। যাওয়ার সময়ও ফাঁকা গেছে। এবার মানুষের মধ্যে বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছার অভাব দেখছি", তিনি যোগ করেন।
অগ্রিম টিকেটের ব্যাপারে সুলতান বলেন, "আমাদের ২৮-৩০ তারিখ শুধু এই তিনের দিনের টিকিটে ব্যাপক চাহিদা। এই তিন দিনের সকল টিকেট শেষ। ১ তারিখের টিকেট এখনও খালি আছে।"
শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার প্রভাত রায় বলেন, "এবারের ঈদের সাথে আগের ঈদের রাতদিন পার্থক্য। আগে এই সময় জমজমাট অবস্থা থাকত। চাকরিজীবীরা পরে গেলেও তাদের পরিবার আগে পাঠিয়ে দিত। এবার অবস্থা পুরোপুরি ভিন্ন।"
তিনি বলেন, "আমাদের ২৭ তারিখ পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি সিট খালি আছে। পরের তিন দিন টিকিট নাই। আবার ১ তারিখ খালি আছে। আর এখন বাস প্রায় ফাঁকা যাচ্ছে।"
আরও বেশ কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টারে কথা বলে একই চিত্র পাওয়া যায়। এদিকে যাত্রী খরার কথা শোনা গেল লঞ্চ মালিকদের মুখেও।
"আজ (মঙ্গলবার) ২৪ রোযা যাচ্ছে, যাত্রী এখন স্বাভাবিক সময়ের থেকেও কম। আগেরদিন সোমবার আমার ৭০,০০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। শুধু আমার না, একই অবস্থা সকল লঞ্চের", বলেন পারাবত শিপিং-এর কর্ণধার ও লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া।
"বিগত কোনো বছরে এরকম খারাপ যায়নি। মনে হচ্ছে এবার মানুষের মধ্যে ঈদ নিয়ে আগ্রহের ঘাটতি আছে" যোগ করেন এই লঞ্চ মালিক।
এদিকে বাস ও লঞ্চে ভিড় না থাকলেও গতকাল (মঙ্গলবার) ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ঘাটে।
বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়: দাবি সংশ্লিষ্টদের
এদিকে বাস ও লঞ্চে বেশি ভাড়া নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, "লঞ্চ ব্যবসায়ীরা সারা বছর নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে। তাই সারাবছর তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকে কম নেয়। ঈদে এসে তারা নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছে। তখন যাত্রীরা মনে করে মালিকরা বেশি ভাড়া নিচ্ছে।"
তিনি বলেন, "আমরা খোঁজ রাখছি, কেউ যদি বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে, সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিআইডব্লিউটিএ ও শিপিং অধিদপ্তরও ব্যবস্থা নিবে।"
পারাবত লঞ্চের মালিক শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, "ঢাকা-বরিশাল রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী সিঙ্গেল কেবিন নেয়া হচ্ছে ১৪০০, সিঙ্গেল ডিলাক্স কেবিন ১৬০০ টাকা আর ডাবল কেবিন ২৮০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এসি কেবিনের উপর ১০% ভ্যাট আছে যা আমরা নিচ্ছি না। স্বাভাবিক সময়ে কেবিনে ২০০-৪০০ টাকা কম ভাড়া নেওয়া হত।"
বাসের ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, "এসি গাড়ির ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে না। তাই এটা মালিকদের মত করেই নির্ধারিত হয়। যেহেতু এখন যাত্রী সব একমুখী তাই মালিকরা ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছে।"
"তবে নন-এসি বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছে। এদের ভাড়া যেন না বাড়ে সে বিষয়ে আমরা আগেই একটি নোটিশ দিয়েছিলাম। তবে দুয়েকটি যে বেশি ভাড়া নিচ্ছে না এমনটা বলব না। তবে সেটা যাতে না হয় সেজন্য আমাদের টিম কাজ করছে। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে বিআরটিএ ও ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "আরেকটা বিষয় হচ্ছে উত্তরাঞ্চলে ভাড়া সবসময় সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকে কম নেওয়া হয়। ঈদে এসে নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হয়। এতে যাত্রীরা মনে করে ভাড়া বেশি নিচ্ছে।"
ট্রেনে অগ্রিম টিকেট পেতে গতকালও ছিল তুমুল চাপ
মঙ্গলবার ৮টা বাজার সাথে সাথেই শুরু হয় অনলাইন ও কাউন্টারে ৩০ তারিখের জন্য রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। অনলাইনে ১০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় সব টিকেট।
অন্যদিকে কাউন্টার থেকে টিকেট কাটতে কমলাপুর রেলস্টেশনে মোট টিকিটের সংখ্যার চেয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিল ১০ গুণ বেশি মানুষ। ফলে এখানেও টিকেট শেষ হয়ে গেছে সকাল ১১টার আগেই।