১০৮টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে তুলছে চট্টগ্রাম কাস্টমস
ব্যাপক প্রচার চালিয়ে গত বছরের নভেম্বরে অনলাইন এবং প্রচলিত দুই পন্থায় 'কারনেট ডি প্যাসেজ' সুবিধায় আনা ১১২টি গাড়ির নিলাম আয়োজন করে কাস্টমস। এর মধ্যে বিক্রি হয় মাত্র ৩টি গাড়ি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিপি (ক্লিয়ারেন্স পারমিট) না থাকায় সাড়া পড়েনি ওই নিলামে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া শর্ত মেনে আবারো এসব গাড়ির নিলাম আয়োজন করতে যাচ্ছে কাস্টম হাউস। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সপ্তমবারের মতো ১০৮টি গাড়ির অনলাইন এবং প্রচলিত দুই পন্থায় নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।
কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিপি সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যাওয়ায় এবার গাড়ির নিলামে ব্যাপক সাড়া পড়বে। সরকারি কোষাগারে জমা হবে রাজস্ব।
গাড়ি উৎপাদনের পাঁচ বছর পরবর্তী সময়ে বন্দর থেকে খালাস পেতে সিপির প্রয়োজন হয়। যেহেতু গাড়িগুলো বন্দরে ৮ বছর ধরে পড়ে ছিলো তাই এসব গাড়ি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিপি ছাড়া খালাস করা সম্ভব ছিলোনা। এমন পরিস্থিতিতে সিপির অনুমোদনের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। সর্বশেষ পাঁচটি শর্তে উৎপাদনের মেয়াদ পাঁচ বছর পেরুনো ৮৫টি গাড়ির বিষয়ে সিপি অনুমোদনে সম্মত হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
শর্তের মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির সমন্বয়ে পরিদর্শন টিম গঠন, পরিদর্শন টিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন, 'কারনেট ডি প্যাসেজ' এর আওতায় আনীত ৮৬টি গাড়ি ছাড়া অন্য কোন গাড়ি নিলাম করা যাবেনা। এসব শর্ত পালন সাপেক্ষে নিলাম কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে সম্মতি প্রদান করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস একটি পরিদর্শন টিম গঠন করে। এই কমিটিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, কাস্টমস মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট এবং বিআরটিএ প্রতিনিধি রাখা হয়। পুনরায় গাড়ি পরিদর্শন করে গত ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পরিদর্শন কমিটি।
পরিদর্শন কমিটির সদস্য সচিব কাস্টমসের উপ-কমিশনার আল আমিন টিবিএসকে বলেন, 'ঈদের পরপরই কারনেট গাড়ির নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। যেহেতু অল্পসময়ের মধ্যে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে তাই গাড়ির রিজার্ভ ভ্যালু আগেই মতোই থাকবে। গতবারের মতো এবারও নিলামের ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। এবার যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিপি (ক্লিয়ারেন্স পারমিট) সংক্রান্ত কোন জটিলতা নেই আমরা আশা করছি ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাবে।'
এক দেশের গাড়ি সাময়িক সময়ে ব্যবহারের জন্য দেশে নিয়ে আসার বিশেষ সুবিধাকে বলা হয় কারনেট সুবিধা। বিদেশি বিশেষ ব্যাক্তি, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বিভিন্ন দেশের নাগরিক, কূটনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক কারনেট বা পর্যটন সুবিধায় এসব গাড়ি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। নিয়ম অনুযায়ী ফেরার সময়ে সে দেশে এসব গাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। এই সুবিধার অপব্যবহারের ফলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কড়াকড়ির কারণে গাড়িগুলো খালাস নেয়নি সংশ্লিষ্টরা।
১১২ একক কন্টেইনার ভর্তি এসব গাড়ি ৮ বছর বছর ধরে পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে। ষষ্ঠবারের মতো গত বছরের ৩ ও ৪ নভেম্বর অনলাইন এবং প্রচলিত দুইভাবে নিলামে তোলা হয়। এসব গাড়ির রিজার্ভ ভ্যালু ধরা হয় প্রায় ২১ মিলিয়ন ডলার। সময়মতো নিলাম না দেওয়ার কারণে এসব গাড়ির ইঞ্জিন, ব্যাটারি, চাকাসহ যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। নেই অধিকাংশ গাড়ির চাবিও। সর্বশেষ নিলামে সবগুলো গাড়ির মূল্য উঠেছে প্রায় ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু নিলামে দরদাতা কাস্টমসের সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ ভাগের নিচে দাম দেওয়ায় মাত্র ৩টি গাড়ি বিক্রি হয়।
২০০৬ সালে তৈরি ৬ সিলিন্ডারের ২৪৯৭ সিসির জেড-৪ স্পোর্ট অটো মডেলের বিএমডব্লিউ কারটি আয়কর ভ্যাটসহ ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার ২৫০ টাকায় নিলামে পায় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের আমিন কোট নিমতলার সাইফ অটো মোবাইলস। জার্মানির তৈরি গাড়িটির জন্য কাস্টমসের সংরক্ষিত মূল্য ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ২৯১ টাকা। সর্বোচ্চ বিড মূল্য ছিল ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
২০০৪ সালে জাপানে তৈরি এলসি-৪ ডি-এ৪ অটো মডেলের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারটি ৪ লাখ ১০ হাজার ১০ টাকা অগ্রিম আয়কর ও ৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৮ টাকা ভ্যাটসহ ৪৮ লাখ ১৭ হাজার ৬১৮ টাকায় পায় খুলনার ফুলতলা উত্তরা ডিআইএইচআইর সুপার জুট মিলস লিমিটেড। গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩১ টাকা। সর্বোচ্চ বিড মূল্য ছিল ৪১ লাখ ১০০ টাকা।
২০০৭ সালে জার্মানির তৈরি ২৯৯৩ সিসির বিএমডব্লিউ কারটি পায় চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার ডিটি রোডের খাজা সায়মা টাওয়ারের ফারজানা ট্রেডিং। ৬ সিলিন্ডারের ২ কোটি ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ৯৬০ টাকা সংরক্ষিত মূল্যের গাড়িটির সর্বোচ্চ বিড মূল্য ছিল ৫৩ লাখ টাকা। ভ্যাট ও আয়কর মিলে গাড়িটির নিলাম মূল্য পড়েছে ৬২ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। গত ৯ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে নিলাম ক্রেতার হাতে এসব গাড়ি তুলে দেওয়া হয়।
নিলামের অপেক্ষায় থাকা গাড়িগুলো মিতসুবিশি, মার্সিডিজ বেঞ্চ, বিএমডব্লিউ, ল্যান্ড রোভার, ল্যান্ড ক্রুজার, সিআরভি, লেক্সাস, ফোর্ড, জাগুয়ার, দাইয়ু ও হোন্ডাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম টিবিএসকে বলেন, 'ঈদের পরই সাংবাদিক সম্মেলন করে গাড়ির দিনক্ষণ ঘোষণা করবো। দীর্ঘদিন বন্দরে পড়ে থাকা এসব গাড়ি বিক্রিতে এবার সফলতা আসবে।'