দ্বিগুণ বাস ভাড়া গুনতে হচ্ছে ঢাকা ছাড়তে
নাড়ির টানে বাড়ি যেতে ঈদের দ্বিতীয় দিনও (বুধবার) রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে ভিড় করতে দেখা গেছে বাড়িগামী মানুষদের। তবে রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে অতিরিক্ত, এমনকি কোথাও দ্বিগুণ টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে এসি বাসগুলোতে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
বুধবার (৪ মে) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে যাত্রীদের সাথে কথা বলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের এ অভিযোগ পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার ঈদে নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করেনি সরকার। তাই সাধারণ ভাড়া ঈদেও কার্যকর থাকার কথা যা সরকার নির্ধারিত। কিন্তু এবারও সেই নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না পরিবহন কর্তৃপক্ষ। এদিকে এসি বাসের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আগে থেকেই কোনো ভাড়া নির্ধারিত না থাকায়, এসব বাসে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে পরিবহনগুলো।
বুধবার সকাল ১১.৩০ এর দিকে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে বগুড়াগামী শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের যাত্রী আলী আশরাফ সবুজ দ্য্ বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এসি বাসে ঢাকা থেকে বগুড়ায় ভাড়া ৬০০ টাকা। সেই জায়গায় এখন নেওয়া হচ্ছে ১২০০ টাকা।'
আলী আশরাফ জানান, ভারতের বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসক দেখানোর পর গত ১ মে ঢাকায় ফেরেন তিনি। রাস্তার যানজটের কারণে ইদের পরদিন বগুড়ায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। মহাখালীর সব বাস কা্উন্টারেই দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
একই চিত্র গাবতলী ও সাইদাবাদ বাস টার্মিনালেও। বুধবার দুপুর ১২.৩০-এ কল্যাণপুর থেকে পাবনাগামী এসি পরিবহন 'পাবনা এক্সপ্রেস'র যাত্রী, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম রনী টিবিএসকে বলেন, ইদের আগে ঢাকা থেকে পাবনার এসি বাসে ভাড়া ছিল ৭০০ টাকা। এখন ১৫০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। পাবনা এক্সপ্রেসের কল্যাণপুর কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা আতিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছরই আমরা একটা ব্যবসা করি। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও কিছুটা ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে।'
পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, ঈদের সময় রাজধানীর বাইরে থেকে বাসগুলো ফিরে আসার সময় পুরোপুরি যাত্রীশূন্য হয়ে আসতে হচ্ছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই এই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর তিনটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে থেকে ছেড়ে যাওয়া নন-এসি পরিবহনগুলোতে কোথাও ৫০ শতাংশ, কোথাওবা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক মালিক সমিতির চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, "যাত্রীদের অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়ার কথা বলছেন। আসলে বাস মালিকেরা সারা বছরই নানা রকম ছাড় দিয়ে থাকেন। কিন্তু ঈদে পিক আওয়ার বলে দেন না। আর এসি বাসে সরকারনির্ধারিত ভাড়া নেই। মালিকেরা নিজেদের মতো ভাড়া ঠিক করে নেন।"
শ্যামলী পরিবহণের এই মালিকের দাবি, সাধারণ সময়ে নির্ধারিত এলাকার বাসে চলাচলের সময় আগে নেমে গেলে সে অনুসারেই ভাড়া রাখা হতো। কিন্তু ঈদের সময় যাত্রী যেখানেই নামুক, পুরো ভাড়া রাখা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, টেকনাফের বাসে করে কেউ কক্সবাজার গেলে টেকনাফের ভাড়াই দিতে হবে। তিনি বলেন,"যাত্রীদের বোঝানো হচ্ছে বিষয়টি। মালিকদের দিকটাও তো দেখতে হবে।"
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো আইনগত ও নৈতিক সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "বাস মালিক ও কর্তৃপক্ষ যে যুক্তি দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে তা পুরোপুরি বেআইনী। যাত্রী কল্যাণ সমিতি সাম্প্রতিক এক স্টাডিতে দেখা গেছে, এবারের ঈদ উপলক্ষে পরিবহন মালিকরা প্রায় আট হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে নীরব।"